২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কবর নিয়ে এরশাদের ওছিয়ত সত্ত্বেও সিদ্ধান্তহীনতায় জাপা ও পরিবার

রংপুরে পল্লী নিবাসে নির্মাণাধীন এই ভবনের পাশেই এরশাদের সমাধি কাম কমপ্লেক্স’র জন্য সাইট প্লান করা হয়। - নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেলে তার সমাধি কোথায় হবে এ নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দল এবং পরিবার। ঢাকায় তিন নেতার মাজার অথবা সংসদ ভবনের পাশে মশিউর রহান যাদু মিয়ার কবরের পাশে পার্টির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করলেও কোন সারা মেলেনি। সরকারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদপুর কবরস্থান অথবা ক্যান্টনমেন্টের বনানী কবরস্থানে গ্রিন সিগনাল রয়েছে। তবে তিনি মারা গেলে নিজেই রংপুরস্থ তার নিজস্ব বাসভবন পল্লী নিবাসেই সমাহিত করার ওছিয়ত করে গেছেন। এজন্য তিনি একটি সমাধি কমপ্লেক্স কাম মিউজিয়াম করারও পরিকল্পনা করেছিলেন। পরিকল্পনার ডিজাইন তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে ফাইলিংও হয়েছিল। বিষয়টি ঘোষণার জন্য গত ২৮ জুন রংপুর সফর করার কথাও ছিল। কিন্তু তার দুইদিন আগেই তিনি অচেতন হয়ে সিএমএইচএ ভর্তি হন।

রংপুর বিভাগের জাতীয় পার্টি এবং আপামর জনসাধারণ এরশাদ মারা গেলে তাকে রংপুরে সমাহিত করার ব্যাপারে একাট্রা। বিষয়টি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েও দিয়েছেন রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

রংপুরে পল্লী নিবাসে নির্মাণাধীন এই ভবনের পাশেই এরশাদের সমাধি কাম কমপ্লেক্স’র জন্য এই সাইট প্লান করা হয়।

গত ২৬ জুন জ্ঞান হারিয়ে রাজধানীর সিএমইচএ চিকিত্সাধীন আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেখানে তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত ৩ জুলাই তারিখে এরশাদের অসুস্থ্যতা এবং তিনি মারা গেলে কোথায় সমাহিত করা হবে এ নিয়ে প্রেসিডিয়ামের বৈঠক হয়। আড়াইঘন্টা ব্যাপি বৈঠকে জাাপার ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এরশাদকে সমাহিত করার জায়গার ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। সেখানে জাতীয় নেতা হিসেবে এরশাদকে সেনানিবাস অথবা আসাদ গেটের বিপরীতে সংসদ ভবন প্রাঙ্গন, মোহাম্মদপুর আদাবরে কবরস্থান, জাতীয় তিন নেতার মাজারসহ বিভিন্নস্থানের কথা আলোকপাত হয়। কিন্তু সেখানে রংপুরে দাফনের ব্যাপারে কোন কথা হয়নি।

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেলে কোথায় তাকে সমাহিত করা হবে এনিয়ে প্রেসিডিয়াম বৈঠকসহ দলীয় নীতি নির্ধারনী ও পারিবাকিভাবে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। এরই মধ্যে আলোচনায় আসে সমাধির ব্যপারে এরশাদের ওছিয়ত। নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানেও পাওয়া গেছে সমাধির ব্যপারে ওছিয়তের বিভিন্ন বিষয়। অনুসন্ধান সূত্র মতে, রংপুর মহানগরীর দর্শনায় নিজের কেনা জমিতে গড়ে তোলা পল্লী নিবাসেই সমাহিত হতে চান এরশাদ। সেখানে সমাধি কাম স্মৃতি কমপ্লেক্সের একটি প্লানও করেছিলেন তিনি। সেই প্লানিং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের দিয়ে ফাইলিংও করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ সেজন্য বরাদ্দ দিয়ে চেকও দেয়ার কথা ছিল তার। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে ২৮ জুন রংপুর সফর করারও কথা ছিল। এর আগেই ২৬ জুন তিনি অসুস্থ হয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রংপুর জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শাফিউল ইসলাম শাফী

মঙ্গলবার দুপুরে নয়া দিগন্তকে জানান, স্যারের বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। গত রমজান মাসে শেষের দিকে এরশাদ স্যার আমাকে ঢাকায় জরুরী ভিত্তিতে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তিনি মারা গেলে নির্মাণাধীন পল্লী নিবাসেই সমাধি করার ওছিয়ত এবং একটি কমপ্লেক্স করার কথা বলেন। স্যারের শেষ ইচ্ছা জানতে পেরে আমি সমাধি কাম কমপ্লেক্সের জন্য স্যারের বাড়ির পূর্ব পার্শ্বের আমার ১৮ শতক জমি স্যারকে দিতে চাই। তখন তিনি খুশি হয়ে পল্লী নিবাস ও আমার জমিসহ একটি প্লান করে নিয়ে আসার কথা বলেন। আমি স্যারের নির্দেশের দুই দিন পর আমি রংপুর এসে সার্ভে করে স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে একটি প্রাথমিক সাইট প্লান করে ঢাকায় স্যারের প্রেসিডেন্ট পার্কে দুপুরে যাই। ওই সাইট প্লানের মধ্যে পল্লী নিবাসের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের পেছনের খালি জায়গার মধ্যস্থলে সমাধি, পূর্ব দিকে আমার জমিতে মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্স এবং নতুন ভবনটি এরিখ এরশাদের বসবাসের জন্য নির্ধারন করা হয়। স্যার সাইট প্লানটি দেখে উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব ) খালেদ আখতার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আব্দুল বারী, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন, ব্যক্তিগত কর্মচারী বাদশা, আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল ওয়াহাবের সামনে একাধিকবার হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে বলেন। এরপর তিনি সাইট প্লানটি ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীরকে ফাইলিং করতে বলেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এসে জাহাঙ্গীর সাহেব সেটি ফাইলিং করেন। এবং আমার আর স্যারের জমির মাঝে থাকা দেয়ালটি ভেঙ্গে দিয়ে কাজ শুরু করার জন্য ২০ লাখ টাকার চেক দেয়ার কথা বলেন। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বিষয়টি আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের মহোদয়কেও অবহিত করি। এ সময় স্যার আমাকে বিষয়টি চুড়ান্ত করার জন্য ২৮ জুন রংপুরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। আমরা তার আসার অপেক্ষায় ছিলাম। এরই মধ্যে তিনি ২৬ জুন অসুস্থ্য হয়ে এখন হাসপাতালে। আমিসহ রংপুরের আপামর জনসাধারনের দাবি স্যারের ওছিয়তকৃত স্থানেই স্যার মারা গেলে সমাহিত করা হোক।

ওছিয়তের সময় রাজধানীর প্রেসিডেন্ট পার্কে উপস্থিত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদের আরেক ঘনিষ্ঠ রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আব্দুল বারী নয়া দিগন্তকে জানান, আমার উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পার্কে স্যার পল্লী নিবাসে তার কবর দেয়ার জন্য ওছিয়ত করেছেন। আমাকে বলেছেন, আমার কবর পল্লী নিবাসেই যেন দেয়া হয়। তিনি আমাকেও এও বলেছেন, রংপুরের মাটিতেই যেন আমার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ হয়, আমাকে রংপুরে পল্লী নিবাসেই কবর দেয়ার ব্যবস্থা করবে। আমি সারা জীবন যেন রংপুরের মানুষের কাছে থাকতে পারি। এ সময় তার ভাতিজা প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব) খালেদ আখতার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর, কর্মচারী ছাত্তার, ওয়াহাব, বাদশাসহ সবাই জানে। স্যার এজন্য প্লান তৈরি করে কাজ শুরু করার জন্য টাকা দেয়ারও কথা বলেন। এজন্য তিনি ২৮ জুন রংপুর আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ। তার আগেই তিনি অসুস্থ্য হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা চাই স্যারের ওছিয়তকৃত স্থানেই স্যারের সমাধি হোক।

রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি এরশাদ পরিবারের ঘনিস্টজন সাবেক কাউন্সিলর আজমল হোসেন লেবু জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে রংপুরে আলাপচারিতায় তার সমাধি রংপুরে করার কথা বলেছিলেন। এমনকি তার মা মারা যাওয়ার পর তিনি তাকে কবর দিয়ে বলেছিলেন, মায়ের কবরের পাশে ফাঁকা জায়গা রাখিও। পরবর্তীতে তিনি পল্লী নিবাসেই তার সমাধির জন্য ওছিয়ত করে গেছেন। তার সেই ইচ্ছা তিনি মারা গেলে আমরা রংপুরেই তার সমাধি চাই।

রংপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মাসুদার রহমান মিলন নয়া দিগন্তকে জানান, স্যার মারা গেলে তার সমাধি আমরা রংপুরে চাই। এটা রংপুরের প্রতিটি নেতাকর্মীসহ সব শ্রেনী পেশার মানুষের দাবি। কারণ রংপুরে স্যারকে সমাহিত করা না হলে তার কবরের পাশে গিয়ে দোয়া করার কোন লোক খুজে পাওয়া যাবে না। তার জীবন দর্শন নিয়ে সেভাবে কেউ কথাও বলবে না। রংপুরে স্যারকে ঘিরে জীবদ্দশাতে যেমন ভালোবাসা বিদ্যমান। তার অবর্তমানেও তার সমাধিকে ঘিরেও সেই ভালোবাসা বিদ্যমান থাকবে।

রংপুর জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম নয়া দিগন্তকে জানান, স্যারের সাথে ছিলাম। তিনি মারা গেলে যেন প্রতিদিন তার কবর জিয়ারত করতে পারি, সেজন্য তাঁর ওছিয়তকৃত পল্লী নিবাসেই স্যারের সমাধি চাই। প্রতিটি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এটা চাই। আশা করি পার্টির নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি সেভাবে দেখবেন।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক নয়া দিগন্তকে জানান, স্যার মারা গেলে তাঁর সমাধি রংপুরের পল্লী নিবাসেই দিতে হবে। এটা আমাদের রংপুর অঞ্চলের প্রতিটি সাধারণ মানুষের দাবি। তিনি ওছিয়ত করে গেছেন পল্লী নিবাসে থাকবেন। সেখানেই তাকে সমাহিত করতে হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এরশাদের অন্যতম কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর নয়া দিগন্তকে জানান, স্যারের ওছিয়কৃত স্থান রংপুর পল্লী নিবাসেই স্যারকে সমাহিত করতে হবে। কারণ তিনি রংপুরের মাটি ও মানুষের মনের মানুষ। রংপুরের মানুষ তার ভক্ত-অনুরক্ত। পল্লী নিবাসে তাকে সমাহিত করা হলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তার কবর জিয়ারত করতে পারবেন। রংপুরে থেকেই তিনি যেহেতু জাতীয় ও বিশ্বনেতা। সে কারণে তাকে ঢাকাতে সমাহিত করা হলে তিনি জাতীয় নেতার মর্যাদা পাবেন-এটা ভুল ধারণা। যুক্তি তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এই নীতি র্নিধারক জানান, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিাপাড়ায় হয়েছে। তাতে কি তিনি জাতীয় নেতার মর্যাদা পাচ্ছেন না। দেশে বিদেশে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি। সেকারণে জাতীয় নেতা হিসেবে ঢাকায় এরশাদকে সমাহিত করতে হবে এই আইডিয়া ঠিক নয়। রংপুরের মানুষ স্যারকে যেভাবে ভালোবেসেছে তা ইতিহাসে বিরল। তাকে তার ওছিয়তকৃত স্থানেই সমাহিত করা হলে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক দর্শন আরও বিকশিত হবে। পাশাপাশি তিনি পল্লী বন্ধু হিসেবে দেশ বিদেশে সমাদৃত হবেন।

এদিকে এরশাদ মারা গেলে রংপুরে ওছিয়কৃত স্থানে তাকে সমাহিত করার দাবি জানিয়ে সোমবার সন্ধায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছে রংপুর বিভাগ, জেলা, মহানগর জাতীয় পার্টিসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন। সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি আদায়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহানগর সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র মোস্তফা নয়া দিগন্তকে জানান, প্রকৃতির নির্ধারিত নিয়মে পৃথিবী থেকে চলে গেলে আমাদের রাজনৈতিক পিতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি মহোদয়কে তার ওছিয়তকৃত স্থান পল্লী নিবাসেই তাকে সমাহিত করতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় খোলা স্পেসে তাকে সমাহিত করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। আমরা এরশাদের দেয়া জাতীয় তিন নেতার মাজারের পাশে অথবা সংসদ ভবনের পাশে আসাদ গেট এলাকায় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কবরের পাশে জায়গার জন্য সরকারকে বলেছি। কিন্তু সে ব্যাপারে আমাদের কোন আশ্বাস দেয়া হয় নি। মোহাম্মদপুর কবরস্থানে সেই এলাকার মেয়র মাত্র একটি কবরের জায়গা দেয়ার জন্য রাজি হয়েছেন। এরশাদকে সেখানে সমাহিত করার কোন প্রশ্নই উঠে না। ক্যান্টনমেন্টে এরশাদকে সমাহিত করা হলে আমরা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তার কবরও জিয়ারত করতে পারবো না। সে কারণে তার সমাধি রংপুরের মাটিতে তার নিজের গড়া পল্লী নিবাসেই দিতে হবে।

মেয়র বলেন, অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি পাটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সাথে আলাপচারিতায় তার অন্তিম সমাধি রংপুরের পল্লী নিবাসে করার জন্য ওছিয়ত করে যান। সেজন্য তিনি একটি একটি সমাধি কাম কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ডিজাইন প্লানিংও করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার কারনে সেই প্লানিং তিনি জনসম্মুখে বলে যেতে পারেন নি। সেকারণে আমরা জাতীয় পার্টি রংপুর বিভাগ, জেলা, মহানগরসহ সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠন এবং রংপুর বিভাগ বাসির পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপির সমাধি তার ওছিয়তকৃত স্থানে করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। মাননীয় চেয়ারম্যানের সমাধিকে আকড়ে ধরেই আমরা তার জীবন দর্শন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে নয়া দিগন্তকে জানান, ভাইয়ের অবস্থা আগের মতোই আছেন। তবে তিনি মারা গেলে রংপুরের পল্লীনিবাসে সমাহিত করার বিষয়ে কোন কিছু ওছিয়ত করে গেছেন কিনা, তা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। পরে ফোন করো-এ বিষয়ে কথা বলবো।

এ ব্যাপারে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা নয়া দিগন্তকে জানান, স্যারকে রংপুরে সমাহিত করার ব্যাপারে রংপুরের প্রতিটি মানুষ একমত। আমিও তাদের অনুভূতির সাথে একমত পোষন করছি। আর যেহেতু পল্লী নিবাসটি স্যার এরিখ এরশাদকে দিয়ে গেছেন সেহেতু তাকে পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হলে এরিখ সবচেয়ে সম্মানিত হবে। রংপুরের মানুষের অনুভূতিকে এরিখ সম্মান জানাবে।

এছাড়াও মঙ্গলবার দর্শনায় বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করার দাবী জানান।

প্রসঙ্গত: এরশাদের পারিবারিক নিবাস রংপুর শহরের সেনপাড়ায় স্কাইভিউতে হলেও তিনি নিজে জমি ক্রয় করে রংপুর শহরের দর্শনায় মহাসড়কের পাশে দেড় একর পল্লী নিবাস নামে তার নিজস্ব আবাসন তৈরি করেন। রংপুরে সফরে আসলে তিনি সেখান থেকেই রাতযাপনসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। গত বছর অক্টোবর মাসে পল্লী নিবাসের পুরোনো স্থাপনা ভেঙ্গে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মানও শুরু করেন তিনি। বাড়িটির নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। পল্লী নিবাসের পাশেই তিনি পিতার নামে মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল ডায়াবোটিকস হাসপাতাল ও ডায়াগোলোস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে স্বল্পমুল্যে অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি জায়গাটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর সন্তান এরিখ এরশাদের নামে বন্দোবস্ত করে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement