১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নীলসাগরে ৪ দিন পর ভেসে উঠলো লাশ

নীলসাগরে ৪ দিন পর ভেসে উঠলো লাশ - সংগৃহীত

ঐতিহ্যবাহী নীলসাগর পুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘বারুণী স্নান’ অনুষ্ঠানে সাঁতার কাটতে নেমে নিখোঁজ হওয়া কিশোরের লাশ রোববার উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কিশোরের নাম সুমন চন্দ্র রায় (১৬)। সে গত বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে নীলফামারীর নীলসাগর পুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘বারুণী স্নান’ অনুষ্ঠানে আরো কয়েকজন যুবকের সাথে সাঁতার কাটতে নেমে নিখোঁজ হয়। এই ঘটনার ৪দিন পর রোববার নিহত সুমনের লাশ ভেসে উঠার পর উদ্ধার করা হয়। নিহত সুমন চন্দ্র রায় চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

জানা যায়, নীলফামারী সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের মোনাগঞ্জ গ্রামের সুকুমার চন্দ্র রায়ের ছেলে সুমন চন্দ্র রায়, একই গ্রামের বিপুল চন্দ্র রায় (১৬), অনুকুল চন্দ্র রায় (১৭) ও উত্তম কুমার চন্দ্র (১৬) মিলে নীলসাগর পুকুরের পশ্চিম পাড় থেকে পূর্ব পাড়ে সাঁতার কেটে পার হওয়ার জন্য পুকুরে নামে।

কিন্তু বিশাল পুকুর সাঁতরিয়ে পার হওয়ার আগেই মাঝ পুকুরে তলিয়ে যায় সুমন। অপর ৩জন কোনো রকমে পুকুরের পাড়ে উঠতে পারলেও পাড়ে উঠার পরপরই তারাও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসেবা দেয়া হয়।

গোড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম জানান, নীলসাগর পুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের শুরু হওয়া ৩দিনব্যাপী বারুণী স্নানে এসে ঐ ৪ বন্ধু সাঁতরিয়ে পুকুর পার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন বুধবার বিকেল পর্যন্ত নীলফামারী ও রংপুর দমকল বিভাগের ২জন করে ডুবুরি পালাক্রমে পুকুরের তলদেশে নিখোঁজ সুমনের সন্ধান চালানোর পরও তার কোনো হদিস না পেয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার বেলা ১১টা থেকে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল নিখোঁজ সুমনকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশ পাওয়া না যাওয়ায় জেলা প্রশাসন জেলেদের নিয়ে আসে। পরে রোববার সকালে ওই জেলেরা জাল ফেলার প্রস্তুতিকালে সকাল সাড়ে আটটার দিকে সুমনের লাশ ভেসে উঠে।

নীলফামারী সদর থানার ওসি মোঃ মোমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত সুমনের লাশ উদ্ধার করে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নীলফামারী সদরের বিরাট বিন্নাবতি দিঘিতে সনাতন হিন্দু ধর্মের পুণ্যস্নান উৎসবকে বা স্নানকে বারুনী স্নান বলা হয়। প্রতিবছর হিন্দু ধর্মের হাজারো মানুষ এই বারুনী স্নানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তেমনি রীতি মানতেই গত বুধবার সকাল ৬:০০ টার দিকে দিঘিতে গোসল করতে আসেন চার বন্ধু সুমন চন্দ্র রায়, বিপুল চন্দ্র রায়, অনুকূল চন্দ্র রায় ও উত্তম কুমার রায়।

নিহত সুমনের বন্ধু উত্তম কুমার রায় বলেন, আমরা চার বন্ধু মিলে সাঁতরিয়ে নীলসাগরের অপরপ্রান্তে যাওয়া শুরু করার পর কিছুদূর গেলে খারাপ লাগার কথা বলেন সুমন এ সময় আমরা সবাই তাকে দিঘির পাড়ে ফেরৎ যাওয়ার কথা বলে। পরে দিঘির অপরপ্রান্তে পৌছে দেখি সুমন আমাদের সাথে ফেরেনি। তার পর আমরা ছুটে যাই গোসল করার আগে সুমন যেখানে পরনের কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্রও রেখেছিল। সেখানেও দেখি সব পড়ে থাকতে। তখন আমরা বুঝতে পারি সুমন দীঘিতে হারিয়ে গেছে।

জানা যায়, এর আগেও অনেকবার এই দিঘিতে মানুষ গোসল করতে নেমে আর ফিরে আসেনি। নিহত সুমনের লাশ উদ্ধারের আগপর্যন্ত নীলসাগর পুকুর পাড়ে উপস্থিত অনেকেই বলেছেন- সুমনকে দেবতা নিয়ে গেছে; সময় হইলে ফেরৎ দিয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement