২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রেমিকাকে বিয়ে করে পালালেন প্রবাসী, এরপর...

স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে রোববার শ্বশুরবাড়ির সামনে অনশনে বসেন পারুল - নয়া দিগন্ত

প্রেমের সম্পর্ক গড়ে কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে। কিন্তু নতুন স্বামী তো বেকার। স্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন কিভাবে? এক মাস যায়, দুই মাস যায়... স্ত্রীর সাথে সকল কর্তব্যই করেছেন, কেবল দায়িত্ব নেয়া ছাড়া। চতুর প্রেমিক স্বামী নিজের বাড়িতেও জানাননি কিছু। বিয়ের ৫ মাসের মাথায় নবপরিণিতাকে কিছু না জানিয়েই চলে যান কাতার। দীর্ঘদিন আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি স্ত্রীর সাথে।

স্ত্রীও নাছোড়বান্দা। অপেক্ষায় থাকেন তার কোর্ট ম্যারেজ করা স্বামীর। অত্যন্ত গোপনে স্বামী নিজের বাড়িতে আসলেন দুই বছর পর। শুধুই কি আসলেন, যেমনি বাড়িতে আসলেন অমনি তাকে ধরলো স্ত্রী। বেচারা স্বামী দুই বছর পর বাড়িতে ফিরে দুইটি দিনও বাড়িতে থাকতে পারলেন না। স্ত্রীকে ফেলে আবারো পালালেন তিনি। কিন্তু এখন কি করবেন স্ত্রী? কি-ই বা করার আছে তার! স্বামীকে ফিরে পেতে শ্বশুর বাড়িতেই অনশনে বসেছেন তিনি।

দুইবছর আগে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করলেও স্বামীর পরিবার মেনে না নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে কাতার প্রবাসী এক যুবকের বাড়িতে অনশনে বসেছেন তার কলেজ পড়ুয়া স্ত্রী। রোববার ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর বাড়াইশালপাড়ায়। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রবাসী যুবক ও স্বামীর নাম স্বদেশ চন্দ্র দাস এবং তার স্ত্রী পারুল রাণী দাস।

অনশনরত বাড়াইশালপাড়ার গোপাল চন্দ্র দাসের কন্যা ও কামারপুকুর ডিগ্রী কলেজের স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষার্থী পারুল রানী দাস (২৩) সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেশী ওয়েল্ডিং দোকান ব্যবসায়ী নিবারণ চন্দ্র দাসের ছেলে স্বদেশ চন্দ্র দাসের সাথে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারই সূত্র ধরে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে কোর্ট ম্যারেজ (আদালতের মাধ্যমে বিয়ে) করে তারা। কিন্তু স্বদেশ চন্দ্র বেকার থাকায় সে সময় স্বামী স্বদেশের পরামর্শে তাদের বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখে পারুল।

কিন্তু বিয়ের ৫ মাস পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বদেশ চন্দ্র অনেকটা গোপনেই চলে যায় বিদেশে (কাতার)। দীর্ঘদিন সে পারুলের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। এমতাবস্থায় পারুল অপেক্ষায় থাকে স্বদেশ এর বাড়িতে ফিরে আসার।

একপর্যায়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে স্বদেশ এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে। এসময় স্ত্রী পারুল স্বামী স্বদেশের সাথে দেখা করে তার পরিবারকে বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে তাকে ঘরে তুলতে বলে। অবস্থা বেগতিক দেখে পারুলকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলবে বলে আশ্বস্ত করে স্বদেশ।

স্ত্রী পারুল আরো বলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই গত শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে স্বদেশ পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে কাতার যাওয়ার জন্য ঢাকা চলে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য বাধ্য হয়ে পারুল তার পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়। এরপর পারুলের পরিবার স্বদেশের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু তারা ছেলের স্ত্রী হিসেবে পারুলকে কখনোই মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দেয়।

এতে পারুল চরম বিপাকে পড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে রোববার সকাল ১০ টায় স্বদেশ এর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন তিনি। এসময় স্বদেশ এর পরিবারের লোকজন পারুলকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

বাধ্য হয়ে পারুল নিজের স্ত্রীর মর্যাদা ও স্বামীকে ফিরে পেতে শ্বশুরবাড়ির সামনে অনশন শুরু করেন। স্বামী স্বদেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত অনশন করবেন বলে জানান পারুল।

এ ব্যাপারে স্বদেশ এর কাকা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, স্বদেশ ফিরে আসলেই প্রকৃত সত্য জানা যাবে। যদি তাদের বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে মেনে নেয়াই ভালো হবে। তা না হলে স্বদেশের উপরই বর্তাবে সব দায়।


আরো সংবাদ



premium cement