২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বউ-শাশুড়ি মেলা

মেলায় দুটি প্রতিযোগিতার দৃশ্য - ছবি : সংগ্রহ

সমাজে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধুর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা। ঠিক তখনি এই দুটি সম্পর্কের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত হলো শাশুড়ি-পুত্রবধু মেলা। বৃহস্পতিবার দিনভর মেলায় শতাধিক জোড়া বউ-শাশুড়ির উপস্থিতি ও তাদের আন্তরিকতায় সেখানে তৈরি হয়ে ভিন্নরকম এখন পরিবেশ।

মিঠাপুকুরের চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এবং ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের সহায়তায় বউ-শাশুড়ি মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. শেখ মো. সাইদুল ইসলাম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থ্যাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একেএম রেজাউল করীম ও এফপিআই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।

মেলা বউ-শাশুড়িদের নিয়ে ছিলো বিভিন্ন ধরনের আয়োজন। সাংস্কৃতির পরিবেশনা, স্টল, বিভিন্ন খেলার আয়োজন ছিলো অংশগ্রহণকারীদের জন্য। উদ্বোধনের পরই পুত্রবধু ও শাশুড়িরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পুরো চত্বর জুড়ে ধ্বনিত হয় পুত্রবধু ও শাশুড়ির নির্ভেজাল, নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা। এসময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ হয়ে উঠেন।

দর্শনার্থীদের একজ মাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজে এখন প্রতিনিয়ত পুত্রবধু ও শাশুড়ির সম্পর্কের ক্ষেত্রে খারাপ ধারনা দৃশ্যমান। এই খারাপ ধারনাকে পাল্টে দিয়েছে এই মেলা। আমি মনে করি এধরনের মেলা আয়োজন করতে পারলে সমাজে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি হবে। তাদের সম্পর্কের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী শাশুড়ি মালেকা বেগম জানান, আমার তিনট ছেলের বউ আছে। সবার সাথেই আমার সম্পর্ক মায়ের মতো। মেলায় এসেও দেখলাম, আয়োজকরাও বললেন শাশুড়িকে পুত্রবধুদের মনে করতে হবে মা। আর পুত্রবধুদেরকে শাশুড়িদের মনে করতে হবে মেয়ে। এভাবেই পারস্পারিক বোঝাপাড়ার মাধ্যমে শাশুড়ি ও পুত্রবধুদের সম্পর্ক হবে মা ও মেয়ের মতো। এটা হলে সমাজে পরিবারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে মনে করেন এই শাশুড়ি।

অন্যদিকে মেলায় অংশ নেয়া কোহিনুর বেগম নামের এক পুত্রবধু বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার অনেক দূরত্ব ছিল। আজকে মেলায় এসে আমার সেই ভুল ভাঙল। আজ থেকে আমাদের মাঝে আর কোন দূরত্ব থাকবে না। মা ও মেয়ে হয়ে বাকী জীবন কাটাবো আমরা।

মেলার প্রধান অতিথি রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. শেখ মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এই সমাজের বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারনাকে পাল্টে দিয়েছে এই মেলা। এর মাধ্যমে এই দুটি সম্পর্ক সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারনা আছে তা থেকে মানুষকে বের করে আনতে এধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বউ শাশুড়ির সম্পর্ক সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দেয়া হয়েছে।

মেলা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন বালা জানান, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে বউ ও শাশুড়িদের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করাই জন্যই আমাদের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। আশাকরি অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে তাদের আশেপাশের বউ-শাশুড়িদের মধ্যে এই সেতুবন্ধনের বার্তা পৌছে দিবেন।

আয়োজনে শতাধিক বউ-শাশুড়ি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মেলায় বউ-শাশুড়ি’র সম্পর্ক নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, পবিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা ও ল্যাম্ব বিভিন্ন স্টল এবং নাটক প্রদর্শন করে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল