২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ডিসি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনেই এই অবস্থা

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন গোলাম রব্বানীর আইনজীবী। - ছবি: নয়া দিগন্ত

হাইকোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনে ২৩ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ হলেও যাছাই বাছাইয়ে বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুরের জেলা প্রশাসক।

বৃহস্পতিবার সকালে ডিসি অফিসে মনোনয়নপত্রে ২ টি মামলার তথ্য না থাকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যগ পত্র গ্রহনের ব্যপারে মন্ত্রণালয়ের তথ্য না থাকার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়। তবে তার আইনজীবিরা বলছেন ওই দুটি মামলার পরিবর্তিত নম্বর এবং পদত্যাগ পত্রের কপি সন্নিবেশিত থাকা সত্বেও আমাদের বক্তব্য না শুনেই অবৈধভাবে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আপিল করবো। এসময় সেখানে উপস্থিত প্রার্থীর আইনজীদিরওপর উপস্থিত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের হামলা করারও অভিযোগ উঠেছে। সেই ছবি ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর ডিসি এনামুল হাবীবের সম্মেলন কক্ষে বহুল আলোচিত ২৩ রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনে ২৩ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের প্রাথী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন পত্র যাছাইবাছাই শুরু হয়। এসময় সেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও প্রার্থীর প্রস্তাবকারী ওমর ফারুক ওয়াহেদী, সমর্থনকারী আমিরুল ইসলাম, আইনজীবি রংপুর ইসলামিক ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক এ্যডভোকেট বায়েজিদ ওসমানীর নেতৃত্বে রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম মন্ডল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট একরামুল হক, ইসলামিক ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি আব্দুস সালাম, ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী বেলাল উপস্থিত হন।

এসময় সেখানে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল এবং মহানগর ছাত্রলীগের সেক্রেটারী শেখ আসিফের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীও উপস্থিত হন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন পত্র যাছাই বাছাই করে মনোনয়ন পত্রে দুটি মামলার তথ্য তা থাকা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত হওয়া সংক্রান্ত তথ্য না থাকার কারণ দেখিয়ে মনোনয়ন পত্র বাতিল করেন। এসময় প্রার্থীর আইনজীবিরা এই দুটির বিষয়ে তথ্য প্রমাণ দিতে চাইলে উপস্থিত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আইনজীবদের ওপর চড়াও হন এবং তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করে লাঞ্ছিত করেন। সেই ছবি তুলতে উপস্থিত সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ক্যামেরাম্যানদের বের করে দেয়া হয়। তবে একুশে টেলিভিশন এবং দৈনিক সংবাদের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদল মোবাইলে সেই দশ্য ধারণ করলে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দেয়া হয়। এনিয়ে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়।

বাতিল প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিসি এনামুল হাবীব জানান, হাইকোর্টের আপীল বিভাগের আদেশে আমরা মনোনয়নপত্র গ্রহন করে তা যাছাই বাছাই করি। এরমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগের কাগজপত্র না আসায় এবং মনোনয়নে দুটি মামলার তথ্য না থাকায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যপারে প্রাথীর আইনজীবি বায়েজীদ ওসমানি বলেন, শুরুতেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমরা কথা বলার জন্য আবেদন করি। তিনি পরে শুনবেন বলে আমাদের থামিয়ে দেন। এরই মধ্যে মনোনয়ন পত্র জিআর ৫৭০/১৩ এবং জিআর ৫৪৮/১৭ দুটি মামলার তথ্য না থাকা এবং মনোনয়ন পত্র গ্রহন না হওয়া সংক্রান্ত ভুল তথ্য দিয়ে মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন। এসময় আমরা আমাদের বক্তব্য দিতে চাইলেও তিনি আর শোনেন নি। তিনি জানান, মুলত: মনোনয়ন পত্রে তার বিরুদ্ধে থাকা ১৬ টি মিথ্যা মামলার সবগুলোর তথ্য আমরা দিয়েছি। এরমধ্যে ১২ নম্বর ক্রমিকে থাকা স্পেশাল ট্রাইবুনাল মামলা নং ২৪/১৮ টিই হলো জিআর ৫৪৮/১৭ নম্বর মামলার তথ্য। এবং ১৫ নং ত্রমিক এ থাকা স্পেশাল ট্রাইবুনাল মামলা নং ২২/১৫ মামলাটিই হলো জিআর ৫৭০/১৩ নম্বর মামলা। নিম্ন আদালত থেকে এই দুটি মামলা স্পেশাল ট্রাইবুনালে যাওয়ার কারণে নম্বর পরিবর্তিত হয়েছে। বিষয়টি কোনরকম যাছাই বাছাই না করেই মনোনয়ন বাতিল করেছেন। যা অবৈধ। আইনশৃঙখলা বাহিনী এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার এধরনের অজ্ঞতার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

এছাড়াও আইনজীবি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা আমার প্রার্থীর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র দেয়ার কথা স্বীকার করলেও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না থাকার ব্যপারে যা বলেছেন সেটিও আইনানুগ নয়। কারণ স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোন জনপ্রতিনিধি স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তা সাথে সাথেই গৃহিত বলে গন্য হয়। এছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল নং ৩৪/২০১৩ এর আদেশ উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওই আদেশ অনুযায়ী কেউ পদত্যাগ না করলেও তার মনোনয়নপত্র গ্রহনযোগ্য হবে।

আইনজীবি বায়েজীদ ওসমানি জানান, আমরা আমাদের এই বক্তব্য তুলে ধরতে চাইলে আইনশৃঙখলাবাহিনী ও রিটানিং কর্মকর্তার সামনেই সেখানে উপস্থিত আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা যেভাবে আমাদের ওপর চড়াও হয়ে লাঞ্ছিত করে এবং আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তাতে প্রমাণিত হয় এই নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠান। এদেরকে দিয়ে কোনভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তিনি হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

তিনি আরও জানান, আমরা জাবেদা কপি তুলতে দিয়েছি। বাতিলের বিষয়ে আমরা নিবার্চন কমিশনে আপিল করবো।

হামলার ব্যাপারে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন ওই প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র যুক্তিযুক্ত কারণ দেখিয়ে বাতিল করেন। তখন প্রার্থীর আইনজীবিরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে সেখানে উপস্থিত আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। এর বেশি কিছু নয়। সেখানে আমাদের নেতাকর্মীরা কারো ওপর চড়াও হননি। গালিগালাজও করেন নি।


আইজীবি বায়েজীদ ওসমানি আরও জানান, বুধবার দুপুরে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর পক্ষে আমরা আইনজীবি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবকারী ওমর ফারুক ওয়াহেদী ও সমর্থনকারী আমিরুল ইসলামসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেই। মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে আসার পথে প্রস্তাবকারীকে কাচারী বাজার থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে ছেড়ে দেয়।
এর আগে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে ২৮ নভেম্বর আমাদের ৪ ঘন্টা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে দাড়িয়ে রেখে সন্ধায় উপরের নির্দেশে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে অপারগতা করেছিলেন। এ বিষয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলাম। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩০ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দ্রুত জমা নেয়ার জন্য রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৫ জানুয়ারী মনোনয়নপত্র জমা নিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এক আদেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার প্রার্থীর মনোনয়ন জমা নেয়া ও যাচাই-বাছাইয়েরও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আদালতে গোলাম রব্বানীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

 

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল