২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভর্তি পরীক্ষার সময় হল খোলা রাখার দাবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্ট অবরুদ্ধ

ভর্তি পরীক্ষার সময় হল খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করে শহীদ মুখতার এলাহী হলের শিক্ষার্থীরা - নয়া দিগন্ত

ভর্তি পরীক্ষার সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুক্রবার শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ও চার জন সহকারী প্রভোস্টকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে প্রভোস্ট কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। বিকেল ৫ টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও প্রভোস্টকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে হল প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমান এবং চারজন সহকারী প্রভোস্ট শহীদ মুখতার এলাহী হল সিলগালা করতে আসলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে প্রভোস্ট কক্ষে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।

এসময় শিক্ষার্থীরা কক্ষের বাইরে অবস্থান নিয়ে হল খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা মসজিদের চট এনে প্রভোস্টের রুমের সামনে বসে- গান গেয়ে, বিক্ষোভ করে দাবি আদায়ে অনঢ় থাকে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পার্কের মোড় থেকে দুপুরের খাবারে জন্য শিক্ষার্থীরা খাবার অর্ডার দেয়। সেই খাবার নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ মোখতার এলাহী হলের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে ক্যাফেটরিয়ার সামনে প্রক্টরের নেতৃত্বে তাদের বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে।

পরে এক পর্যায়ে তাদের খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমিত দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ওই হলের সামনে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের কথা চিন্তা না করেই হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এতে তারা বিপাকে পড়েছেন। তাদের থাকার জায়গা নেই। ছয়দিনের জন্য তারা বাড়িতেও যেতে পারছেন না। আর অনেকের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন পরীক্ষা দিতে আসবে। এমতাবস্থায় নিজেদের থাকার জায়গা হারাচ্ছে তারা। তাই হল ছাড়তে চাইছে না আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তার অজুহাতে হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে আমরা অবাক হয়েছি। তিন হলে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। তাদের আবাসনের কথা চিন্তা না করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হল বন্ধ হলে তারা কোথায় যাবে?

শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করে যে, অনেকের বাড়ি থেকে পরিচিত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসবে, তাদেরকে কোথায় রাখবে? তারা আরও বলেন, বিগত ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী অনিয়ম করেনি। অনিয়মের সাথে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের ডরমেটরি খোলা রেখে হল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এটা অযৌক্তিক। শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মানবে না। তাই তারা সব হলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।

এদিকে, শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমানের অবরুদ্ধ হওয়ার সংবাদে অন্য হলগুলোতে আসেননি সংশ্লিস্ট হলের প্রভোস্ট বা দায়িত্বরত শিক্ষকরা।

এবিষয়ে শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে চাইছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ২-৫ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যেই আবসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নোটিশ দেয় সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও রেজিস্ট্রার ইবরাহীম কবীর বলেন, হল বন্ধ না করার জন্য প্রতিবছর আন্দোলন হয়, এবারও হচ্ছে। তবে হল বন্ধ হবেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবু কালাম ফরিদুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার কারণেই হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতেও হল বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মহিবুল্লাহ নয়া দিগন্তকে জানান, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা স্ট্যান্ডবাই আছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা নিতে চাইলে আমরা সেটা করবো।

এ বিষয়ে জানতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement