২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মইনুলের ওপর সরকারি দলের হামলা : মামলা বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে

মইনুলের ওপর সরকারি দলের হামলা : মামলা বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলার মানহানি মামলায় জামিন শুনানিতে অংশ নিতে এসে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের প্রবেশপথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ওপর যুব, ছাত্র, স্বেচ্ছা ও যুব মহিলা লীগের হামলা এবং তাদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। রোববার রাতে কোতোয়ালি থানায় পৃথকভাবে করা ওই দুই মামলার একটির বাদি এক পুলিশ সদস্য ও অপরটির এক ছাত্রলীগ নেতা। এতে মহানগর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৫ শীর্ষ নেতার নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

থানা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার আদালত চত্বরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন শুনানি কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই জিয়াউর রহমান পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় ২৫ জনের নামোল্লেখসহ আরো ৪০ জন অজ্ঞাত বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অপর দিকে, একই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলার অভিযোগে আরেকটি পৃথক মামলা করেছেন। ওই মামলায় ৩৫ জনের নামোল্লেখসহ অর্ধশতাধিক অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দু’টিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, মহানগর যুবদল সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন, সাংগঠনিক সম্পাদক জহির আলম নয়ন, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, সেক্রেটারি সামসুল হক ঝন্টু, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুলসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩০-৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এ দিকে, ওই দুই মামলায় রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে মহানগর যুবদল যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সদস্য আলম, সহসভাপতি সুমন, সদস্য কাওসার ও জেলা যুবদলের আক্কাস আলী রয়েছেন।

এ দিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আলতাব হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, আদালত চত্বরে পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার এসআই জিয়াউর রহমান এবং হামলার অভিযোগে মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান বাদি হয়ে দু’টি পৃথক মামলা করেছেন। দু’টি মামলায় ৩০-৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। আসামিদের মধ্যে মহানগর ও জেলা বিএনপি ও সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে। এরমধ্যে আমরা ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অভিযোগ বিএনপির
এ দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এই মামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কারমাইকেল কলেজের সাবেক জিএস শহিদুল ইসলাম মিজু।

তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, রোববার আদালতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ. ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বহু লীগ নামধারী নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে লাঠি, জুতা, ঝাড়ু ও ইটপাটকেল নিয়ে বর্বর তাণ্ডব চালিয়েছে। আদালতের উচিত ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু তা না করে আমরা যারা আগের মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলাম, তাদের ওপর সরকারি দলের ওইসব ক্যাডাররা পুলিশের সহযোগিতায় হামলা করে আবার আমাদের নামেই মামলা করেছে। এটি বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে এই সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারদের মুক্তি ও নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রংপুর মেট্রোপলিটন সদর মেট্রো কোর্টে জিআর মামলা নম্বর- ১১৪৩/১৩ এবং স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল জেজ জজ আদালতে মামলা নম্বর- ৭/১৭ এর হাজিরার তারিখ ছিল গত রোববার। এ দুই মামলয় প্রায় ৫০-৬০ জন বিএনপি নেতাকর্মী হাজিরা দেয়ার জন্য রোববার সকালে কোর্টে যায়। সেদিন ব্যারিস্টার মইনুলের জামিন শুনানিরও তারিখ ছিল। তার শুনানি পরই বিএনপি নেতাকর্মীরা হাজিরা দেয়ার জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পশ্চিমপাশে অবস্থান নিয়েছিল।

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলার মানহানি মামলায় জামিন শুনানি অংশ নিতে রোববার রংপুর আদালত প্রাঙ্গণে যুব, ছাত্র, স্বেচ্ছা ও যুব মহিলা লীগের হামলার শিকার হয়ে আহত হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এ সময় হামলকারীরা তার ওপর জুতা, পচা ডিম ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

অন্য দিকে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আদালত থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথেই হাজিরা দিতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় আদালত চত্বর। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে পুলিশসহ ১২ জন আহত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল