প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেতে গরু বিক্রি ও ঋণ করে টাকা প্রদান
- মো: জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
- ১৫ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৫৭
নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ও গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছে হতদরিদ্র সুবিধাভোগীরা। চেয়ারম্যানের নামে তার লোকজন ও মেম্বাররা এ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা দিতে না পারায় ঘর পায়নি অনেকে।
সরেজমিনে উপজেলার কামারপুকুর ও খাতামধুপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার তালিকায় স্থান পাওয়া কয়েকজনের কাছ থেকে জানা যায়, তালিকায় নাম আসার পর থেকেই মেম্বাররাসহ চেয়ারম্যানের লোকজনও ঘর প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আদায় করেছে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে। টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবেনা বা অন্যকে দিয়ে দেয়া হবে এমন হুমকি দেয়ায় হতদরিদ্র অনেকেই ঘর পেতে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে। আবার অনেকে একমাত্র সম্বল গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছে।
কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের মৃত. ওসমান আলীর ছেলে হবিবর রহমান গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন। একই গ্রামের একরামুলের ছেলে ইলিয়াস আলী , মৃত. এহসান উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান, বগাতিডাঙ্গা এলাকার রিক্সা চালক লাল মিয়া, নিজবাড়ির জাহিদুল ইসলাম এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছেন।
খাতামধুপুর ইউনিয়নের খামাতপাড়ার বগার ছেলে হৃদয় হোসেন কালা ২০ হাজার টাকা, কবিরাজপাড়ার জমির উদ্দিনের ছেলে জিকরুল হক ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন চেয়ারম্যানের লোককে।
এই ইউনিয়নের রথেরপুকুর এলাকার আলিমুদ্দিনের ছেলে দিনমজুর আনোয়ার জানান, ইউপি মেম্বার ওয়াদ আলী চৌধুরীকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু তারপরও ঘর দেয়া হয়নি বরং মৃত. নিঝালুর ছেলে ছালেক (লথদদুয়া) নামে এক ব্যক্তি ২৫ হাজার টাকা দেয়ায় তাকে দিয়েছে। আমি ঘরও পাইনি। পরে মাত্র ৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। বাকি টাকা চাইলে মেম্বার তা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে যে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার তালিকায় অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে স্থান পেয়েছে। তাছাড়া হতদরিদ্ররাও ঋণ নিয়ে বা গরু বিক্রি করে টাকা দেয়ার পর যে ঘর পেয়েছেন তার খুটিগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর। এগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি পর্যন্ত আনতে গিয়েই ভেঙ্গে গেছে। এ অবস্থায় এই খুটিতে টিনের চাল উঠালে খুটির অবস্থা যে আরও কি বেহাল হবে তা ভেবেই অনেকে হতাশাগ্রস্থ। কারণ নি¤œমানের এসব খুটি সামান্য ঝড় হলেই ভেঙ্গে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সে সাথে খুটি, ইট, বালি নিজেরাই পরিবহন করে এনেছেন। অথচ এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা কন্ডাক্টরের লোকজনের পৌছে দেয়ার কথা। কিন্তু তারা তা না করায় মালামাল বহনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়েছে এই হতদরিদ্র সুবিধাভোগীদের।
তারা অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, টাকা নেয়া, নি¤œমানের উকরণ দিয়ে খুটি তৈরী, মালামাল বহনের খরচ দেয়া বিষয়ে তারা প্রকল্প চেয়ারম্যান সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: বজলুর রশীদকে মোবাইল ফোনে জানালেও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান জানান, টাকা নেয়ার অভিযোগ মিথ্যে। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
খাতামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী জানান, কোন অভিযোগই ঠিক নয়। বরং এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: বজলুর রশীদ মুঠোফোনে বলেন, এ ধরণের কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা