২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুরে শিক্ষার্থীদের রাজপথ দখল : ডিসির জরুরী বৈঠক

-

৯ দফা দাবী আদায়ে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে রংপুরের রাজপথ ছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দখলে। মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে তারা। এসময় পুলিশের সথে কয়েক দফায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও মেডিক্যাল মোড়ে গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স চেক করে শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের চকলেট খাইয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে পুলিশ। এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে রংপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেছেন ডিসি।
রংপুর মহানগরীর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, জিলা স্কুল, পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, কলেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, রংপুর সরকারী কলেজ, লালকুঠি স্কুল এন্ড কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শনিবার সকাল ৯ টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিন্নু হোস্টেলের সামনে জড়ো হয়।
সেখান থেকে তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে উঠতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গোল চত্বরে তাদের বাঁধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাঁধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এসে ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে জমায়েত হয়।
এসময় সেখান থেকে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যায় পুিলশ। শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়ক ভবনের সামনের রাস্তায় বসে অবরোধ করে। এসময় সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে বিপুল পরিমান পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে এবং শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রনে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মাঝে চকলেট বিতরণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি মাইকে বলতে থাকেন তোমাদের দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। তখন কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাস্তার অবরোধু তুলে নিয়ে সড়ক ভবনের রাস্তায় মানববন্ধনে দাড়িয়ে যায়।
বেলা সাড়ে ১২ টায় সড়ক ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুলের মোড়ে বঙ্গবন্ধু চত্বর হয়ে নগরীতে ঢুকতে থাকলে পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের বাঁধা পেয়ে মিছিলটি মোড় ঘুরে চেক পোস্টের সামনে গিয়ে মহাসড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ হাতে হাতে রেখে মানববর্ম তৈরি করে বেরিকেড দেয়। এসময় সেখানে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধ্বস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশী মানবর্ম ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মেডিক্যাল মোড়ে গিয়ে নিজেরাই চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির লাইসেন্স, হেলমেট চেক করা শুরু করে।
এসময় লাইসেন্সবিহীন গাড়িতে শিক্ষার্থীরা মার্কারি পেন দিয়ে ‘লাইসেন্স নেই’ লিখে দিতে থাকে। সেখানে বিপুল পরিমান পুলিশ অবস্থান করতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের মোটর সাইকেল আটক করে চাবিও নেয়। তারা চিকিৎসকসহ সকলের গাড়ি আটক করে লাইসেন্স চেক করতে থাকে। বেলা আড়াউটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেডিক্যাল মোড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি চেক করছিল।
এদিকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে এডিসি রবিউল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবুল হায়াত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্বিক আবু মারুফ হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ফজলে এলাহি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ, কোতয়ালী থানা ইনচার্জ(দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোখতারুল আলমসহ পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান, শিক্ষার্থীরা আমার চেষ্টা করেছি ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা ফেরেনি। বেলা ৩ টায় তারা নিজেরাই ফিরে গেছে। আমরা সতর্ক থেকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি রক্ষা করেছি।
এদিকে আন্দোলন যখন চলছিল ঠিক সেই সময় ডিসির সম্মেলন কক্ষে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে রংপুরের জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন ডিসি এনামুল হাবীব। বৈঠকে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম যেন কোনভাবে বাঁধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement