১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ছিটবাসীরা তিন বছর ধরে মুক্ত পাখির মতো জীবন কাটাচ্ছি’

তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি করছেন ছিটমহলবাসীরা - ছবি: নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের তিন বছর পুর্তি হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহাল দাসিয়ারছড়ার মানুষ মেতে উঠেছে নানা রকম বর্ণিল আয়োজনে।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে দু’দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহালের মত দাসিয়ারছড়া ছিটমহালটি বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান ঘটে ছিটবাসীর।

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পায় দেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ। আর ভারতীয় নাগরিকত্ব মেলে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার মানুষের।

এরপর থেকেই বাংলাদেশের ছিটমহল গুলোতে শুরু হয় নানা উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড। ১৮১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ছিটমহলে উন্নয়ন কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দাসিয়ার ছড়ার উন্নয়নে ব্যয় করা হয় ৮১ কোটি টাকা। পাশাপাশি ছিটবাসীদের এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাও।

দেশের সর্ববৃহত ছিটমহল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নির্মাণ করা হয় ২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির।

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ ভিজিডি, ভিজিএফ সুবিধা দেয়া হয় প্রতিটি পরিবারকে। পাল্টে যায় অবরুদ্ধ ছিটমহল বাসীর জীবন চিত্র। মুক্তির আনন্দে আত্মহারা ছিটমহলবাসী তিন বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী বর্ণিল কর্মসূচীর আয়োজন করে। কর্মসূচীর মধ্যে মোমবাতি প্রজ্বলন, আনন্দ মিছিল, মশাল মিছিল,গ্রামীণ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা ছিটবাসীরা দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে ৬৮ বছরের লাঞ্চনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, বিলুপ্ত ছিটবাসীরা গত তিন বছর ধরে মুক্ত পাখির মতো জীবন কাটাচ্ছি। তাই আমাদের মুক্তির দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনব্যাপী আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবো এবং প্রতিবছরই এরকম কর্মসূচী পালন হবে।


আরো পড়ুন: দ্রুত ছিটমহল বিনিময়ের স্বপ্ন দেখছেন বাসিন্দারা

রেজাউল করিম রেজা, কুড়িগ্রাম, ০৬ জুন ২০১৫

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে দ্রুত ছিটমহল বিনিময়ের স্বপ্ন দেখছেন ছিটমহলবাসী। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে মুক্ত জীবনের স্বাদ পেতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন তারা। তাদের দাবি শুধু বিল পাস নয়, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দ্রুত এর বাস্তবায়ন করা হোক।

১৯৭৪ সালে ইন্দ্রিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তির পর গত ৫ মে ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, ৬ মে রাজ্যসভা ও ৭ মে লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিলটি পাস করে ভারত সরকার। বিলটি পাসের খবরে আনন্দে ভাসতে থাকেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ৫২ হাজার মানুষ।

ভারতের পার্লামেন্টে বিল পাসের এক মাসের মাথায় ৬ জুন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের স্বপ্ন দেখছেন দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের মানুষ। তারা আশা করছেন, নরেন্দ্র মোদির সফরের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করে ছিটমহল বিনিময় করা হবে।

পাশাপাশি দীর্ঘ জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাতে ছিটমহলের উন্নয়নে ভারত সরকারের কাছে প্যাকেজ প্রোগ্রাম ঘোষণার দাবি জানান তারা। এতে তারা ফিরে পাবেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্রসহ সব মৌলিক অধিকার।

ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের সভাপতি আলতাব হোসেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে নতুন করে খুশির জোয়ার বইছে ছিটবাসীদের মনে। আমরা আশা করছি নরেন্দ্র মোদির এ সফরের মধ্য দিয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে দ্রুততম সময়ে ছিটমহল বিনিময় করা হবে। আর বন্দী জীবন নয়, নতুন জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই আমরা।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ অংশের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফল ভোগ করায় আশায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে চেয়ে আছেন ছিটের অসহায় মানুষ। যত দ্রুত সম্ভব ছিটমহল বিনিময় করে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ ছিটবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে দুই দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে এমনটাই দাবি এ নেতার।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ অংশের সভাপতি মঈনুল হক জানান, যেহেতু ভারত সরকার সে দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলগুলোর জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আমরা ৬৮ বছর যাবৎ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ছিটমহলে সুবিধাবঞ্চিত থেকে বসবাস করে আসছি।

আমরা চাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহলের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন। যা থেকে এসব ছিটমহলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন, ছিটমহল বিনিময়ের সুফল ভোগ করতে পারেন।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন হবে স্থলসীমান্ত চুক্তি, বিনিময় হবে ছিটমহল। আর এখানকার অধিবাসীরা ফিরে পাবেন তাদের নাগরিকত্বসহ সব মৌলিক অধিকার এখন এটাই চাওয়া ছিটবাসীদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement