২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৈয়দপুরে স্কুল শিক্ষিকাকে হত্যার চেষ্টা, স্বামী পলাতক

-

নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক স্কুল শিক্ষিকাকে গলায় বৈদ্যুতিক তার পেচিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গুরুত্বর আহতাবস্থায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে তিনি এখন চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর থেকে নির্যাতনকারী স্বামী নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী পলাতক রয়েছেন। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানায় মামলা প্রস্তুতি চলছে।

জানা যায়, শহরের চাঁদনগর এলাকর শমসের আলীর ছেলে নীলফামারী ডিসি অফিসের সার্ভেয়ার বিভাগে কর্মরত মজিবর রহমান। তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার নুপুর সৈয়দপুর শহরের আমিনুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত. আব্দুল মতিনের কন্যা।

সুরাইয়ার অভিযোগ ২০০৭ সালে বিয়ের পর থেকেই প্রায়ই স্বামী মজিবর শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। একজন সরকারী কর্মচারী হয়েও মজিবর মাদকাসক্ত। নেশা করার কারণে সে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অফিসে যায়না। তাছাড়া অনেক সময় সারারাত বাহিরে অবস্থান করে। কখনও কখনও কয়েকদিন ধরে বাড়িতে আসে না। এর ফলে সার্বিকভাবে পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। সেসাথে সামাজিকভাবেও হেয় হতে হয় আমাদের।
বার বার নিষেধ করা সত্বেও মাদক না ছাড়ায় এবং নির্যাতন অব্যাহত রাখায় ৩ সন্তানের জননী সুরাইয়া শ্বশুর বাড়িতে না থেকে শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ায় আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।

এমতাবস্থায় গত ১১ জুলাই দুপুরে সুরাইয়া ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এসময় তার স্বামী মজিবর রহমান হঠাৎ তাকে অফিসিয়ালী ঋণ নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে সম্মত না হওয়ায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কিল ঘুষি মারা শুরু করে। পরে তাকে বাড়িতে রক্ষিত কাঠের বিট দিয়ে এলোপাথারি মারতে করতে থাকে। এতে সুরাইয়া নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশকে জানানোর কথা বললে মজিবর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বৈদ্যুতিক তার দিয়ে গলা পেচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী এবং স্কুলের শিক্ষিকারা সংবাদ পেয়ে তাকে গুরুত্বর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এদিকে মজিবর এ ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকলেও মোবাইলে সুরাইয়া ও তার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে চলেছে। এ ঘটনায় পুলিশি ঝামেলা বা মামলা জড়ালে সুরাইয়া এবং তার পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালে উপস্থিত সুরাইয়ার সহকর্মী শিক্ষিকারা বলেন, আমরা অনেক দিন থেকেই জেনে আসছি যে, মজিবর তার উপর অমানবিক নির্যাতন করে আসছে। সুরাইয়া ও তার সন্তানরা প্রায়ই এ ব্যাপারে আমাদের বলতো। আজ তার প্রমান হাতে নাতে পেলাম। এই নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১২ জুলাই দুপুরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বজলুর রশীদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্কুল শিক্ষিকা সুরাইয়াকে দেখতে যান এবং তার চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এসময় তারা এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুল হক সোহেল বলেন, সুরাইয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থীতিশীল তবে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে। গলার অবস্থা শোচনীয়।

মজিবর রহমান পলাতক থাকায় এবং তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ দিকে সৈয়দপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement