২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারি কর্মচারীকে পুলিশের মারপিট নিয়ে তোলপাড়

সরকারি কর্মচারীকে পুলিশের মারপিট নিয়ে তোলপাড়। - সংগৃহীত

রংপুর ডিসি কার্যালয়ের নেজারত শাখায় কর্মরত সহকারী নাজির শাহাজাদা মিরাজকে চাঁদার টাকা না দেয়ায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কোতয়ালী থানার এএসআই আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর মহানগরীর ধাপচারতলা মোড়ের মসজিদের সামনে মারধর করে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ডিসি অফিসের লোকজন তাঁকে থানা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য ভর্তি করায়। বিষয়টি জানিয়ে বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে ডিসি কার্যালয়ের কর্মচারীরা।

হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রংপুর ডিসি কার্যালয়ের নেজারত শাখার সহকারী নাজির শাহাজাদা মিরাজ জানান, অফিসে যাওয়ার পথে ধাপ চারতলা মোড়ে আসলে কোতয়ালী থানার এএসআই আব্দুর রহিম আকস্মিকভাবে পথরোধ করে আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে গ্রেফতার করে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কোন ধরনের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই আমাকে পিটাতে পিটাতে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি আমি ডিসি কার্যালয়ে জানালে ডিসি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা থানায় গিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন। গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ায় ডিসি অফিসের লোকজনের সহযোগিতায় আমাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্বাহীনতায় ভুগছি।

মিরাজের আরও জানান, গত ১১ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকেও একজন সাদা পোষাকধারী ব্যক্তি তার একজন সহযোগিকে নিয়ে বাবুল এএসআই পরিচয় দিয়ে আমার বুড়িরহাট ঈদগাহমাঠ সংলগ্ন নিলোকচন্ডীর বাড়িতে প্রবেশ করে অভিরাম ডাক্তারপাড়ার সহিদার রহমানের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এসময় আমি তাদের কাছে অভিযোগপত্র ও গ্রেফতারী পরোয়ানা দেখতে চাইলে ওই এএসআই আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে চলে যায়। পরে আমি পুলিশের হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন করি। স্যার বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অতিরিক্ত হাফিজুর রহমানকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এডিএম স্যার পরের দিন বিষয়টি পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চিঠি ইস্যু করেন (স্মারক নং ০৫.৫৫.৮৫০০.০০৭.০০.০০০.১৮-৪৪, তারিখ ১২-০৬-১৮)। কিন্তু সেই মিথ্যা অভিযোগের তদন্ত না করেই পুলিশ আমাকে অন্যায়ভাবে রাস্তায় শারীরিক নির্যাতন করে থানায় নিয়ে যায়। একজন সরকারী কর্মচারী হয়েও অন্যায়ভাবে পুলিশের হয়রানী ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারছি না।

এদিকে রংপুর ডিসি অফিসের নাজির হুমায়ুন কবির জানান, একজন সরকারী কর্মচারীকে এভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই স্ত্রী এবং জনসমুখে পুলিশের চাঁদা দাবি এবং মারধর করে থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সকল কর্মচারীদের তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মিরাজকে হয়রানি এবং মারধরের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।

অভিযুক্ত এএসআই আব্দুর রহিম জানান, আমি তাকে মারধর করিনি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে থানায় নিয়ে গেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাউকে এভাবে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া সঠিক কিনা এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হন নি।

এ ব্যপারে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল মিয়া জানান, সহকারী নাজির মিরাজের বিরুদ্ধে ডিসি অফিসে চাকরী দেয়ার নামে স্ট্যাম্পে দেড় লাখ টাকা গ্রহনের একটি অভিযোগ করেছিল এক ব্যাক্তি। সেই প্রেক্ষিতে এএসআই তাকে থানায় নিয়ে আসে। পরে ডিসি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা থানায় আসলে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় এবং তাকে সসম্মানে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আমি যখন জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তখন তিনি তাকে মারধোর করা হয়েছে এ ধরনের কোন কথা বলেন নি।

রংপুরের ডেপুটি কমিশনার এনামুল হাবীব জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। দেখি বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement