১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকেরা

বন্ধ হওয়া ২০২টি মাদরাসার ১২৯টিই উত্তরাঞ্চলে

মাদরাসা - ছবি : সংগৃহীত

২০১৭ ও ২০১৮ সালের দাখিল পরীায় কোনো শিার্থী অংশগ্রহণ না করায় সারা দেশে যে ২০২টি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়ই রয়েছে ১২৯টি, যা মোট বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদরাসার মধ্যে ৬৪ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্য দিকে এভাবে মাদরাসা শিক্ষার্থীশূন্য হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। 

মাদরাসা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীায় কোনো শিার্থী অংশগ্রহণ না করায় গত ৯ এপ্রিল সারা দেশের ২০২টি মাদরাসা প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু তাদের অনেকেই নোটিশের জবাব দেননি এবং অনেকের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব মাদরাসার দাখিল স্তরের প্রাথমিক পাঠদান অনুমতি স্থগিত ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ অনলাইন পাসওয়ার্ড, মাদরাসা কোড নম্বর এবং ইআইআইএন নম্বর বন্ধ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নোটিশ বুধবার মাদরাসা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মাদরাসাপ্রধানদের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। 
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে মাদরাসা বন্ধ হয়েছে ২৬টি। এরপরই আছে দিনাজপুরে ১৯টি, গাইবান্ধায় ১২টি, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ১১টি করে। এ ছাড়া রংপুরে ৯টি, সিরাজগঞ্জে ৮টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, লালমনিরহাটে ৫টি, বগুড়ায় ৪টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটে ২টি করে এবং কুড়িগ্রাম ও নওগাঁয় ১টি করে মাদরাসা বন্ধ গেছে। 

মাদরাসা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর থেকে এসব মাদরাসায় আর কোনো শিাকার্যক্রম চালাতে পারবে না। এসব মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিার্থীদের পার্শ্ববর্তী স্বীকৃত কোনো মাদরাসায় রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে মাদরাসা বোর্ড থেকে। এসব মাদরাসা এখন ইউএনওর মাধ্যমে বোর্ডে আবেদন করার পর ফের শিাকার্যক্রম চালু করার অনুমতি পেতে পারে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। অন্যথায় তাদের শিাকার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ থাকবে না।
এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রবাদী তৎপরতা বেশি বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছে। মানুষের একটা ধারণা, যত ভালো ফলাফলই করুক না কেন, মাদরাসায় পড়লে চাকরি পাওয়া যায় না। এ কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের মাদরাসায় দিতে একটা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী কিছু মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। এসব মাদরাসা থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয় না। বোর্ডের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগও নেই। শিার্থীরা বোর্ডের পাবলিক পরীার জন্য ফরমও পূরণ করছে না। এসব কারণে বোর্ড কর্তৃপক্ষ মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। মাদরাসা বোর্ডের এ বিষয়ে যুক্তি থাকলেও সাধারণ মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানান এই গবেষক শিক্ষক। 


রংপুরের পীরগঞ্জের একজন অভিভাবক নয়া দিগন্তকে জানান, তার মাদরাসা পড়–য়া ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল করে বিসিএসএ ভালো ক্যাডারে লিখিত পরীক্ষায় চান্স পাওয়ার পরও বার বার ভাইভায় গিয়ে বাদ পড়ে যাচ্ছে। কারণ তার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। এ কারণে অনেক অভিভাবকই এখন তাদের সন্তানদের মাদরাসায় পড়াতে চাইছেন না। তিনি বলেন, অথচ মাদরাসায় পড়ার কারণে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করে অনেক ছেলেমেয়ে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকছে। ভালো ফল করছে। কিন্তু তাদের ভালো চাকরি জুটছে না। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ওই অভিভাবক।


আরো সংবাদ



premium cement