২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চোখের আড়াল হলেই পেঁয়াজ চুরি, তাই দিন-রাত পাহারা

লাঠি হাতে দিন-রাত পাহারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভাল লাভের আশায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৯ উপজেলার কৃষকেরা এ বছর রবি মৌসুমে ৪৯০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের পিয়াজ চাষ করছে। ইতোমধ্যেই জেলার পেঁয়াজ চাষীরা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি শুরু করেছেন এবং ভালো লাভ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮৭ হেক্টর, চৌহালি উপজেলায় ১১২ হেক্টর, উল্লাপাড়া উপজেলায় ৬০ হেক্টর, তাড়াশ উপজেলায় ১০ হেক্টর, রায়গঞ্জ উপজেলায় ৫০ হেক্টর, কামারখন্দ উপজেলায় ৩৮ হেক্টর, বেলকুচি উপজেলায় ১৮ হেক্টর, কাজিপুর উপজেলায় ৭৫ হেক্টর ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৪০ হেক্টর পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। তবে এখনও পেয়াজ লাগানো অব্যাহত রয়েছে।

ইতোমধ্যেই এ সব জমির পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। আগামী আরো এক মাস এই পেঁয়াজ উঠবে। এ পরিমাণ জমির পেঁয়াজ উঠলে এলাকার চাহিদা পূরণ করেও কৃষকেরা বাইরে বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন এবং পেয়াজের বাজার স্থিতিশীলও হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

এদিকে মূল্যবান পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে চুরির আশংকায় কৃষকেরা রাত-দিন পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিতে শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের চর চিথুলিয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রেজাউল করিম সরকার, টেক্কা সরকার, সাদ্দাম হোসেন, চাঁদ ফকির, বাদল সরকার, জয়নাল সরকার, আনিছ সরকার ফজর সরকার জানান, তাদের গ্রামের প্রায় ১০/১২ বিঘা জমিতে এ বছর আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় তারা উচ্চ মূল্যে বেছন কিনে বোপন করেছেন। বিঘা প্রতি তাদের ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তারা জানান, ফলন ভাল হলে প্রতি বিঘা পেঁয়াজে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে। তারা আরো বলেন, সাধারণত এ এলাকার জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি হয় না। কিন্ত এ বছর পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চুরির আশংকা করছেন। একই সাথে গরু-ছাগলের আক্রমণ থেকে পেয়াজ রক্ষায় তারা এ বছর অধিকাংশ পেয়াজের জমিতে নেট দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এ ছাড়া পালা করে রাতে ও দিনে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষি আঙ্গুরি খাতুন, আব্দুল গফুর ও শফি উদ্দিন জানান, খবর পাচ্ছি বিভিন্ন স্থানে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। তাই পেঁয়াজ রক্ষায় ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি।

অপরদিকে তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর, হেমনগর, চর-হামকুড়িয়া, কাঁটাবাড়ি গ্রামের পেঁয়াজ ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা ভাল ফলনের আশায় পেঁয়াজ ক্ষেতের বারতি যত্ন নিচ্ছেন। সার, কীটনাশক ও চাহিদা মত ভিটামিন প্রয়োগ করছেন।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলার বামুনগাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি তফের আলী, নূরুল ইসলাম ও ধারাবারিষা গ্রামের কফিল উদ্দিন জানান, বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে তারা ভাল লাভের আশা করছেন। কিন্তু রাতে জমির পেঁয়াজ চুরির আশংকায় তারা শংকিত হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। যাদের জমি বাড়ি থেকে বেশ দূরে তারা দিনেও পাহারা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে তাড়াশের নাদোসৈয়দপুর গ্রামের শারমিন খাতুন জানান, ক্ষেত থেকে একটু আড়াল হলেই পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। ধামাইচর গ্রামের প্রভাষক আবু হাশিম খোকন জানান, আগে কখনো পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটেনি। আগে কৃষকরা পেঁয়াজের পাতা ক্ষেতেই ফেলে দিত। এখন পেঁয়াজের পাতাও ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে সবাই ক্ষেত পাহারা দিচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রোস্তম আলী জানান, পেঁয়াজের দাম বেশী হওয়ায় সিরাজগঞ্জের অনেক চাষীও এবছর পেঁয়াজ চাষ করেছেন এবং বেশ লাভবান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement