২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এক পরিবারেই ১৪ জন্মান্ধ প্রতিবন্ধী, জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা

- নয়া দিগন্ত

দাদা ছিলেন অন্ধ, বাপও ছিলেন অন্ধ। কিন্তু বাপ-দাদার মতো তাদেরকেও যে অন্ধ হয়ে দুনিয়ায় আসতে হবে তা হয়তো জানা ছিলো না কারো। শুধু তাই নয় নিজের ভবিষ্যত সন্তানাদিও দেখতে পাবে না দুনিয়ার আলো সে কথা জানলে হয়তো বিয়েই করতেন না তারা। নিজেদের মতো তিন বোনের ভাগ্যও আজ জন্মান্ধ হওয়ায় জীবনের স্বাদ আর সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি তারা। এমন নিদারুণ কাহিনী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দান হাটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম সোবাহানপুর পোড়াবাড়ি এলাকায় বসবাস করা জন্মান্ধ এক অসহায় পরিবারে ঘটেছে।

এই পরিবারের ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ জনই জন্মান্ধ। বাবা আব্দুল জব্বার ছিলেন অন্ধ। তার ঘর আলোকিত করে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে জন্ম নিলেও আলো ফোটেনি তাদের চোখে। বাবা আব্দুল জব্বারের মৃত্যুর পর মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চেয়ে বড় হয়েছেন শহিদুল, বুলু, টুলু, জহিলা, শহিদা ও মোমেনা নামে ওই ছয় ভাই বোন। তিন বোনকে বিয়ে দিয়ে নিজেরাও সন্তানের চোখে পৃথিবীকে দেখার আশায় করেছিলেন বিয়ে। কিন্তু জন্মান্ধ ও দুঃখী ওই ছয় ভাই-বোনের সে আশাও আর পূরণ হয়নি।

সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তাদের সন্তানরাও জন্ম নেয় অন্ধ হয়ে। তিন বোনকে বিয়ে দিলেও পরে গর্ভের সন্তানরা অন্ধ হয়ে জন্ম নেয়ায় তাদের তালাক দিয়ে সন্তানদের ফেলে রেখে চলে যায় তাদের স্বামী। তাই বাধ্য হয়ে তিন ভাইয়ের সাথে একই অন্নে মানুষের করুণায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই অন্ধ পরিবার।

পরিবারের মেজো ভাই বুলু মিয়ার দুই মেয়ের মধ্যে বুলবুলি নামের এক মেয়ে জন্ম নেয় অন্ধ হয়ে। বিয়ের পর বড় বোন জহিলার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় রুমি, মীম ও জীম বাবু, মেজো বোন শহিদার ঘরে শরীফ ও শ্যামলী ও ছোট বোন মমেনার ঘরে জন্ম নেয় মানিক ও রাজিয়া নামের দুই ফুটফুটে সন্তান। কিন্তু জন্মান্ধ হওয়ায় এদের কেউই দুনিয়ার আলো দেখতে পায়নি।

গরীব ও অন্ধ সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে তাদের তিন বোনের কপালে বেশি দিন জোটেনি স্বামীর সংসার। জন্মান্ধ ছোট ছোট বাচ্চাদের ফেলে রেখে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় পাষান্ড স্বামী। অবশেষে শিশু বাচ্চাদের নিয়ে অন্ধ ভাইদের সাথে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালছে তাদের।

পরিবারের বড় ছেলে জন্মান্ধ শহিদুল ইসলাম জানান,আমাদের কেউ কাজে নেয় না। দেখতে পাই না বলে কোন কিছু করতেও পারি না। তাই মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়াই।

শহিদুলের ভাই বুলু মিয়া জানান, বাবার রেখে যাওয়া এই ছোট কুড়ে ঘরে অতিকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই অন্ধ পরিবার।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রূপম জানান, জোব্বারের পরিবারে সবাই অসহায় অন্ধ। তার পরিষদ থেকে তাদের সর্বাত্মক সাহায্য দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement