২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নওগাঁর আত্রাইয়ে উন্মুক্ত জলাশয় ‘বিলসুতি’তে মাছ চাষে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলে গত ১৯ জুন বাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত দুইটি স্ক্যাবেটর জব্দ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে আবারও স্ক্যাবেটর নিয়ে এসে বাঁধ নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছে।

এইভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে কয়েক হাজার কৃষক ফসলি জমি নিয়ে ও মৎস্যজীবীরা জীবিকা নির্বাহে বিপাকে পড়বেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ‘জমির মালিক একজন ‘অথচ’ মাছ চাষ করবেন আরেকজন’ এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত বাঁধটি ভেঙে দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এদিকে উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন প্রভাবশালীদের নামে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন ও রাজশাহী বাঘমারা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে উন্মুক্ত জলাশয় ‘বিলসুতি’। বিগত প্রায় ৭ বছর আগে এ উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খনন করা হয়েছে। ফলে এ বিলের পানি গজমতখালি খাল দিয়ে নেমে শুটকিগাছা হয়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে নামে।

এ জলাশয়ে আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ (৬ মাস) পর্যন্ত পানি থাকে। এ পানি দিয়ে ওই ইউনিয়নের বড় শিমলা, চকশিমলাসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষক প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির বোরো ও আউশের আবাদ করে থাকেন।
এছাড়া ওইসব গ্রামের প্রায় ৫০০ মৎসীজীবী এ জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
গত দুই বছর থেকে ওই জলাশয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেনসহ প্রায় শতাধিক প্রভাবশালী বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর আত্রাই উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খালের মুখ বন্ধ করে ১৫/২০ দিন থেকে দুইটি স্ক্যাবেটর মেশিন দিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খননের উপকার থেকে বঞ্চিত বিলসুতি বিল। এছাড়া বোরো মওসুমে পানি বিল থেকে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষ ব্যাহত হবে বলে মনে করেন কৃষকরা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, তাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে প্রভাবশালীরা ক্ষমতার জোরে বাঁধ নির্মাণ করছেন। অথচ তাদের সাথে একটা আলোচনা করার কোন বিষয় মনে করেনি। বাঁধ নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে পানি জলাশয় দিয়ে নামতে পারবেনা। এতে করে স্বল্প সময়ে বন্যার সৃষ্টি হবে। ফসল ডুবে ক্ষতি হবে। আবার জলাশয় ওই প্রভাবশালীদের দখলে থাকবে। মৎসজীবীরা মাছ শিকার করতে পারবেনা।

বড়শিমলা গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন বলেন, এই মাঠে আমার ৭ বিঘা ফসলি জমি আছে। ওই জমিতে আবাদ করে আমার সারা বছরের ভরণ পোষণ হয়ে থাকে। একটি মহল প্রজেক্টের নাম করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জোরপূর্বক জমি দখল করে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন। যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কোন উপায় না থাকায় বর্ষা মৌসুমে আমাদের ফসল ডুবে যাবে। আবার যে জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরী করা হচ্ছে সেই জমিও নষ্ট হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক শাহজাহান, মোজাম্মেল আলী, আজিজুর রহমান, মোখলেছার রহমান, সত্যেন্দ্রনাথসহ কয়েকজন বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী থেকে যে খাল খনন করা হয়েছে তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ করতে প্রভাবশালীরা বাঁধ তৈরী করছেন। বাঁধ তৈরী করা হলে নিচের জমিগুলো ডুবে যাবে। কোন ফসল হবেনা।

এছাড়া গরু-ছাগলকে ওই মাঠে ৩ মাস ঘাস খাওয়ানো হয়। বাড়তি খড়ের দরকার হয়না। গত তিন বছর থেকে ওই জলাশয় থেকে পানি উঠানো যাচ্ছেনা। আমার ঠিকমতো জমিতে পানিও দিতে পারছিনা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে ঘটনাস্থল থেকে স্ক্যাবেটর জব্দ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে আবারও নতুন করে স্ক্যাবেটর নিয়ে এসে কাজ করা হচ্ছে।

বাঁধ নির্মাণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, বিলসুতি বিলে গত কয়েক বছর যাবৎ মাছ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাঁশের বেড়া (বানা) দিয়ে মাছ চাষ করা হতো। এবারে সেটা কয়েকশ সদস্য মিলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করার লক্ষে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের কোন ক্ষতি হবে না বরং তারা উপকৃত হবেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: ছানাউল ইসলাম বলেন, বিলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন সংবাদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্ক্যাবেটর মেশিন জব্দ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধে আইনগত ভাবে যা করা দরকার, সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এটি একটি অবৈধ কাজ। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে স্থানীয় কৃষক ও মৎসজীবীদের সমস্যায় পড়তে হবে।

যারা এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত তাদের একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে প্রতিদেন তৈরী করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement