২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যৌন নিপীড়নের বিচার না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

যৌন নিপীড়নের বিচার না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা - সংগৃহীত

যৌন নিপীড়নের বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে প্রহসনের পাত্র হওয়া কিশোরী অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (১৪) থানা অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও পুলিশের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে জেলা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক (এআইজি-গণমাধ্যম) মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্ষার আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের গাফিলতি অভিযোগ করেন তার বাবা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রোববার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতেখায়ের আলম, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত তদ‌ন্তের স্বা‌র্থে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার ক‌রে পু‌লিশ লাইনন্সে সংযুক্ত করা হ‌য়ে‌ছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ‌বে। রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতেখায়ের আলম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছি। এ ঘটনায় মোট ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মামলা দুটি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করবে। এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক হয়নি।

জানা যায়, আবদুল মান্নান ও ফরিদা বেগমের তিন সন্তানের মধ্য বর্ষা সবার ছোট। তাদের কোনো ছেলে সন্তান নেই। পাশের বাড়ির মুকুল দীর্ঘদিন ধরে বর্ষাকে উত্যক্ত করে আসছিল। কিন্তু বর্ষা তাতে সাড়া দেয়নি। সে এসবের প্রতিবাদ করে আসছিল। বাড়ির বাইরে গেলেই তাকে নানাভাবে হেনস্থা ও উত্যক্ত করতো মুকুল। মুকুলের নামে মামলা করায় তার মা কাজল রেখা বর্ষাকে বকাঝকা করতো। এছাড়াও প্রতিবেশী হওয়ায় সবসময় বর্ষাকে গালাগাল করতো মুকুলের স্বজনরা। মুকুল ও তার পরিবার বর্ষাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে।

বর্ষার বাবা আবদুল মান্নান জানান, তার মেয়েকে বান্ধবী সোনিয়ার মাধ্যমে অপহরণ করে শহরে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে মুকুল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আপসের কথা বলে আসামিদের আটকের পর ছেড়ে দেয় পুলিশ। এতে ক্ষোভে-অভিমানে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর ব্যবস্থা নিলে বর্ষাকে মরতে হতো না।

গত ১৭ মে আত্মহত্যায় প্ররোচনার একটি মামলা করেছেন বর্ষার বাবা। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

গত ১৬ মে সন্ধ্যায় মোহনপুর উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে বাকশিমইল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষার লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্ষা নিজ রুমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে সে একটি চিরকুটে যৌন নিপীড়নের বিচার না পাওয়ার কথা লিখে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement