২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিড়ালের মা কাউন্সিলর আলেপা খাতুন

বিড়ালের মা কাউন্সিলর আলেপা খাতুন - ছবি : সংগ্রহ

নাম আলেপা খাতুন। বয়স ৬০ বছর। পাবনার চাটমোহর পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবার নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর। ইতোমধ্যে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন বিড়ালের মা হিসেবে। সবাই তাকে বিড়ালের মা বলে ডাকেন। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান বিড়ালের খাবার সংগ্রহের জন্য। সকালে বাজারে যান কম দামে বিভিন্ন মাছ কিনতে। সেগুলো রান্না করে বিড়ালের মুখে দিয়ে তারপর সে দিন তিনি নিজের খাবার খান। ৩০ বছর ধরে এই কাজটি করে চলছেন তিনি। 

আলেপা খাতুন একান্ত সাক্ষাৎকারে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিদিন চার কেজি চাল ও এক কেজি টাকি বা সিলভার কাপ মাছ রান্না করতে হয় তাকে। রান্না শেষ হলেই খাবারের গন্ধ পেয়ে একে একে ছুটে আসে তার ৪২টি বিড়াল! কথা শুনে সবাই হতবাক হলেও দীর্ঘ দিন ৪২টি বিড়ালকে নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করে আসছেন তিনি। 

তিনি বলেন, প্রতিটি বিড়ালের আলাদা আলাদা নাম রাখা হয়েছে, কালু, আকাশ, বাতাস, পায়েল, লালু, ইত্যাদি নামে ডাকলে আলাদা আলাদা ছুটে আসে তার কাছে। এসব বিড়াল অসুস্থ হলে তিনি পশু হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। নিজেও প্রাথমিক চিকিৎসা শিখে নিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন টিকাও তাদের প্রদান করেন। 

তিনি বলেন, আমার যদি কোনো দিন শরীর খারাপ থাকে তাহলে বিড়ালগুলো এসে আমার মাথা নেড়ে দেয়, আদর করে ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ও মন খারাপ করে থাকে। সারা রাত তারা মনের কষ্টে আমার বেডের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। কেউ কেউ আমার মশারির মধ্যে এসে শুয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন পৌরসভায় যাই তখন তারা না ফেরা পর্যন্ত পথের দিকে চেয়ে থাকে। আমার আসার শব্দ পেলেই চারদিক থেকে ছুটে আসে আমার কাছে। কেউ আমার কোলে এসে বসে, কেউ কেউ আমার কাঁধে উঠে আনন্দ করতে থাকে। তখন আমার মন ভরে যায় যে সত্যি আমি ওদের প্রকৃত মা হতে পেরেছি। 

তিনি বলেন, বিড়ালের জন্য আমি কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে একটি রাতও কাটাতে পারি না। আমি একবার পৌরসভার কাজে একটি ট্রেনিংয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম। কিন্তু বিড়ালের মায়ায় আমি ট্রেনিং শেষ না করেই চলে আসি। কারণ বিড়ালগুলো কী খাচ্ছে এসব কথা মনে পড়ছিল। 

আলেপা খাতুন আরো বলেন, প্রতি মাসে আমি যা আয় করি সবই বিড়ালের খাবার কিনতে ব্যয় করে ফেলি। ওদের পেছনে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি খরচ হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলের বউ ও ছেলে অনেক রাগারাগি করে। কারণ আমার নেই একটা ভালো থাকার ঘর, উপরে কয়েকখানা টিন দিয়ে একটি ছাপড়া তুলে সেখানে আমি আর বিড়ালগুলো থাকি। চাল দিয়ে পানি পড়ে। 

স্বামী-সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতেই আবেগী হয়ে ওঠেন আলেপা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বাপ-মা ছোট বয়সে বিয়ে দিয়েছিল। সংসার কী বুঝতে পারিনি। ২৬ বছর আগে ছেলে মহরম গর্ভে থাকতে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যান। অনেক কষ্টে ছেলে মহরমকে মানুষ করেছি। ছেলে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কিছু দিন আগে ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। মানুষ টাকা খরচ করে আমাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। মানুষের ভোটে কাউন্সিলর হয়েছি। প্রতিদিন এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেই’।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে বিড়ালের খাবারের জন্য কিছু সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। ফলে ৪২টি বিড়ালের প্রতিদিনের খাবার জোগাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তবুও বিড়াল নামক সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েই আমি তৃপ্তি পাই।


আরো সংবাদ



premium cement