১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বগুড়া-৫ আসন

লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে

লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে - ছবি : সংগৃহীত

আসছে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে এবার লড়াই হবে সমানে সমানে। এক দিকে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান অন্য দিকে বিএনপির চারবারের সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। সবাই বলছে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। তবে এ নির্বাচনে কে জিতবে নৌকা না ধানের শীষ তা নিয়েই এখন জনসাধারণের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ। এখনো এই নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মধ্যেই রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। 

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি খ্যাত বগুড়া-৫ আসনটি সব সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসনে আস্তে আস্তে জামায়াতে ইসলামীর ভোট বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই তাদের ভোটও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন। শেরপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং ধুনট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি গঠিত। এই আসনের ভোটার রয়েছেন চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন। 

গ্রামগঞ্জে পাড়া মহল্লার চা স্টলে এখন একটাই আলোচনা কে জিতবে এই আসনে। এ ছাড়া চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে কোন প্রার্থী কেমন, তাদের আগামী দিনের কার্যকলাপ কেমন হবে এই বিষয়গুলো। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা গ্রামগঞ্জে উঠোন বৈঠকসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিএনপি এখনো তেমনভাবে মাঠে নামতে পারেনি। তাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর নামে মামলা এবং পুলিশি গ্রেফতারের আতঙ্ক রয়েছে। গত সপ্তাহে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিন্টুসহ দুইজন নেতাকে পুলিশ আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। ফলে সব কিছু উপেক্ষা করে কিভাবে মাঠে নামবে বিএনপি এখন সেটিই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক আমানউল্লাহ খান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফেরদৌস জামান মুকুল, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট শাহজাহান আলী তালুকদার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর চারবার বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি ২০০৮ নির্বাচনের আগে সংস্কারপস্থী নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে ২০০৮ সালে জানে আলম খোকাকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জানে আলম খোকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক পুলিশ সুপার হাবিবর রহমানের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আবারো হাবিবর রহমান বিনা প্রতিদ্ব›িদ্ধতায় এমপি নির্বাচিত হন। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মনে করেন পরপর দুইবার এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় বিএনপির শক্ত ঘাঁটিতে নিজেদের একটি পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। গত দশ বছরে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করে এখনো আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সর্বত্র রয়েছে বলে দাবি করছে নেতাকর্মীদের। 

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর ধুনট-শেরপুর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে কোন সরকার তা করতে পারেনি। সেই উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের একজন এমপি হয়ে আমি করতে পেরেছি। আগামীতে আবারো এমপি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রামকে শহরে পরিণত করব। তাই আসন্ন এই নির্বাচনে আবারো নৌকার বিজয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


অন্য দিকে বিএনপির চারবারের সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজেরও রয়েছে পুরনো জনপ্রিয়তা। সেই সাথে বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংক যুক্ত হয়ে নির্বাচনে জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ঝুঁকবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন ২০০৮ সালে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারলেও ১৪ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপিই জয়লাভ করত। তা ছাড়া সরকারের অন্যায় অত্যাচার এবং সাধারণ মানুষের পরিবর্তনমুখী মনোভাব অবশ্যই ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে। 

মনোনয়নবঞ্চিত বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জানে আলম খোকা বলেন, তিনি ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবেন। কেননা তিনি সব সময় দলের আদর্শকে বড় মনে করেছেন। তা ছাড়া দলের এই দুঃসময়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে নির্বাচনে জয়লাভের বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই, তবে মান-অভিমান রয়েছে, যা অচিরেই দূর হয়ে যাবে। তাই সাবাইকে সাথে নিয়েই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব এবং বিজয় নিশ্চিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement