২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খুনের ঘটনায় আটক ৩

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খুনের ঘটনায় আটক ৩ - সংগৃহীত

নওগাঁর পত্নীতলায় নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইছাহাক হোসেনের (৭০) খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির কেয়ারটেকার, পৌর কাউন্সিলরসহ তিনজনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকান্ডের এখনও কোনো কারণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

তবে বালু মহল দখল, টেন্ডারের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আতঙ্ক ছড়ানো, জামায়াত-বিএনপি, গত কয়েক বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হত্যার উদ্দ্যেশে হামলা, প্রভাব বিস্তারসহ নিজ পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্বের সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশের একাধিক তদন্ত দল।

আটককৃতরা হলেন, নজিপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মামুদপুর গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ ওরফে লিটু ফকির (৪৫), তাঁর বড় ভাই লোকমান হোসেন বেলাল (৪৮) ও মামুদপুর মধ্যপাড়া গ্রামের আয়নালের ছেলে ও বাড়ির কেয়ারটেকারের আনিকুল (৪৫)। আনিকুল গত ২০ বছর ধরে ইছাহাক হোসেনের বাড়িতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

গত মঙ্গলবার রাতে খুনিরা ইছাহাক হোসেনের বাসার কেয়ারটেকারকে বেঁধে রেখে তাঁর শয়নকক্ষে অবস্থান করে। রাত ১০টার দিকে ইছাহাক হোসেন নজিপুর হতে দলীয় কাজ সেরে মাইক্রোবাসযোগে নিজবাড়ি পৌরসদরের মামুদপুর গ্রামে যায়। নিজ শয়নকক্ষে প্রবেশের সাথে সাথে সেখানে পূর্ব থেকেই ওৎ পেতে থাকা মুখোশধারী খুনীরা তাঁর মাথা, গলা, পেট ও বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে।
মাইক্রোবাসের চালক দুলাল চন্দ্র গাড়ি রেখে ভিতরে প্রবেশ করলে খুনিরা তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। দুলালের চিৎকারে ইছাহাক হোসেনের মেয়ে সিফাতে রাব্বানী পাশের বাড়ি হতে ছুটে এসে তাঁর বাবা ও ড্রাইভারকে আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। সিফাত রাব্বানীর চিৎকারে পাশের লোকজন ছুঁটে এসে আহতদের উদ্ধার করে রাতে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইছাহাক হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বালুমহল দখল, টেন্ডারের টাকা ভাগবাটোয়ারা ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই কলহ ও দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে থানায় মামলা দিতে গেলেও অজ্ঞাত কারণে থানা কোনো মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিহত ইছাহাক হোসেনের মেয়ে সিফাতে রাব্বানী মুন জানান, গত কয়েকবছর আগে তার বাবাকে স্থানীয় একটি গ্রুপ হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার বাবলুকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি থানায় মামলা দায়ের করতে গেলেও থানা কোনো মামলা নেয়নি।

সিফাতে রাব্বানী মুন আরো জানান, ওই ঘটনার সঠিক বিচার হলে আজ হয়তো বাবাকে লাশ হতে হতো না। তবে কে বা কারা এই হত্যা ঘটিয়েছে বা কেন ঘটিয়েছে তার কোনো কারণ তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এমনকি কোন ভাগ-বাটোয়ারা হয় না। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই হত্যাকান্ড ভোটে কোন প্রভাব ফেলবে না।

জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আতঙ্ক ছড়ানো বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যেই এই হত্যাকান্ড হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ দ্রুত হত্যাকান্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন করবে বলে আশা করেন তিনি।

পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি ইছাহাক হোসেন খুনের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৌর কাউন্সিলরসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। খুনের ঘটনার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। তবে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি আরো জানান, বালুমহল দখল, টেন্ডারের টাকা ভাগবাটোয়ারা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আতঙ্ক ছড়ানো, জামায়াত-বিএনপির কেউ জড়িত কি না, গত কয়েকবছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হত্যার উদ্দ্যেশে হামলা, প্রভাব বিস্তারসহ নিজ পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে কোন দ্বন্দ্বের সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মরহুমের জানাযা বুধবার বিকেল ৪টায় নজিপুর পাবলিক মাঠে অনুষ্ঠান শেষে পারিবারিক গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement