২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একজন মুক্তিযোদ্ধার আকুতি...

মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান। - ছবি: নয়া দিগন্ত

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মাতৃভূমিকে রক্ষায় সেদিন রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অকুতোভয়ে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। জীবনে বড় স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হলে সুখে থাকবো, শান্তিতে ঘুমাবো। জীবনে আর কিছু পাই আর না পাই দু‘বেলা দু‘মুঠো ভাত খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবো। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, শালগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, বিএ,বিএড ডিগ্রী নিয়ে দূর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র জন সাধারণের সেবায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দীর্ঘ ২০ বছর যাবত বিনা পয়সায় শ্রম দিয়ে আসছি। এই প্রতিষ্ঠানের পিছেই শ্রম ঘাম দিয়ে জীবনের রঙিন দিন গুলো ফুরিয়ে গেল। চাকরির বয়সও শেষ। বড় কষ্টে আছি। অভাবের তাড়নায় এখন মানুষের কাছে হাতও পাততে পারিনা, চেয়েও খেতে পারিনা।

রণাঙ্গনের এই বীরযোদ্ধা বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গা মানুষ, তেমন কোন জমি-জমা নেই যে চাষাবাদ করে খাব। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া তো দুরের কথা দুবেলা দু‘মুঠো ভাত-কাপড়ও দিতে পারছি না। তাই জীবনের শেষ বেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ফরিয়াদ তিনি যেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে এমপিও ভুক্তির তালিকায় এনে তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষা করেন। শুধু এই টুকু দয়া চাই তার কাছে আর কিছু না। এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রীর করুণা চাইলেন হাফিজুর রহমান।

জানা যায়, জামালপুর জেলার সীমান্তবতী এলাকা সরিষাবাড়ী সংলগ্ন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে যমুনার পূর্বতীরে মনসুর নগর ইউনিয়নে শালগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়টি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত বোর্ডের অনুমতিক্রমে শিক্ষাদান করে আসছে। স্বীকৃতি লাভের পর হতে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল উপজেলার মধ্যে কৃতিত্বের দাবী রাখে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শতাধিক। ১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। ১১ সদস্যের কমিটি দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিএ, বিএড। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কোন চাকরিতে না ঢুকে নিজ এলাকার জন সাধারণের সহযোগিতায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক এবং ২০০৯ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। বিগত বছরে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ৯৭ থেকে ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থীই কৃতকার্য হয়েছে। বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত অবস্থাও চমৎকার।

চারদিকে ছায়া ঢাকা সবুজ বনানী দ্বারা পরিবেষ্ঠিত এক মনোরম পরিবেশে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা এমপিও ভূক্তি না হওয়ায় দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সরকারিভাবে কোন প্রকার বেতনভাতাদি পাচ্ছেন না। বিনা পয়সায় বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে নিজেদেরকে নিঃস্ব করে ফেলেছেন। এখন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা বলেন, পেটে ভাত না থাকলে কেউ কোন কাজে মন দিতে পারে না। তার পরেও আমাদের স্যারেরা দীর্ঘ ২০ বছর যাবত আমাদের বিনা পয়সায় লেখাপড়া করায়ে আসছেন। কাজেই আমি এই স্কুলের একজন ছাত্রী হয়ে সরকারের কাছে দাবি জানাই সরকার যেন স্যারদের এমপিওভুক্তি করণে জোর পদক্ষেপ নেন।

৭ম শ্রেনির ছাত্রী তহমিনা খাতুন জানায়, আমাদের স্কুলটি দূর্গম চর এলাকায়। চারদিকে নদী। স্কুলটি এই এলাকায় নারীদের শিক্ষাদানে দারুণ ভূমিকা রাখছে। কাজেই আমাদের স্যারদের এমপিওভুক্তি করা হলে তাদের আর্থিক দুরাবস্থা সামান্য হলেও লাঘব হবে।

সহকারী শিক্ষিকা তহমিনা বেগম বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। নারীদের মর্মবেদনা তিনি ভাল করেই বুঝেন। কাজেই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের করজোরে অনুরোধ আমাদের স্কুলটি যেন এমপিও ভূক্তি করা হয়।

বিদ্যালয়ের সভাপতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার দুঃখ করে বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আর্দশে নিজেকে গড়ে তুলেছি। তার আদর্শ ছাড়া কারো আদর্শের কাছে মাথা নত করেনি। সেই মহান পুরুষের সুযোগ্য কন্যা শিক্ষা বিস্তারে যিনি অগ্রগামী ভূমিকা রাখছেন সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্তি করতে পারলাম না এর চেয়ে আফসোস আর কি আছে। যে সব শিক্ষক কর্মচারী দীর্ঘ ২০ বছর বিনা পয়সায় না খেয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিয়ে আসছেন, তাদের দুঃখ ঘোঁচাতে আমিও সরকারের কাছে এমপিওভুক্তির জন্য জোর দাবি জানাই।

অভিভাবক নবাব আলী ফকির জানান, মাস্টার সাহেবরা এভাবে আর কতদিন কাটাবে। একটা মজুর কামলা দিলে দিনে ৫শ’ টাকা মজুরী পায়। সে হিসেবে তাদের মাসে হয় ১৫ হাজার টাকা। আর এই সব শিক্ষকেরা মাসে পান ৫ থেকে ৬শ’ টাকা। এদের দিন কিভাবে চলে।

মনসুর নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজমহর বলেন, আমি বিদ্যালয়টির সাথে জম্মলগ্ন থেকেই জড়িত। শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপন দেখে আর ভাল লাগে না। দান খয়রাত করে আর কতদিন চালানো যায়।

অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট কবি আলতাফ হোসেন বলেন, শালগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের শিক্ষা বিকাশের সতেজ ভ্রুন। সুদীর্ঘ ২০ বছর যাবত এই প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষগণ বিনা টাকায় পরিশ্রম করে আসছেন। তাই মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করি।

কাজিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্গম চর এলাকা হিসেবে বিদ্যালয়টির গুরুত্ব অপরিসীম। এই এলাকার ছেলেমেয়েরা যমুনার নদীর ১২/১৩ খাল পাড়ি দিয়ে অন্য কোথাও লেখাপড়া করা সম্ভব নয় বিধায় স্কুলটি এমপিওভুক্তিকরণ অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১

সকল