২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫ লক্ষাধিক টাকার ভবন ১৯ হাজারে বিক্রি

-

নওগাঁর রাণীনগরের কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন প্রকাশ্য নিলামের নামে গোপনে মাত্র ১৯ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত ২৩ বছর আগে এল জি ই ডি থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এই স্কুল ভবন । এতো অল্প সময়ে ভবনটি কিভাবে পরিত্যক্ত দেখিয়ে এতো অল্প টাকায় নিলামে বিক্রি করলো তা নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি গাছও অল্প টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কনৌজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। এর পর সেখানে টিনের বেড়া দিয়ে পাঠ্য কার্যক্রম শুরু করা হয় । গত ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নে নওগাঁ জেলা এল জি ই ডির বাস্তবায়নে তিনটি ক্লাসরুম এবং একটি অফিস রুমসহ চার রুম বিশিষ্ঠ ছাদ ঢালায় একতলা ভবন নির্মাণ করা হয় । এতে ব্যয় হয় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এপর্যন্ত ওই ভবনে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও গত ২০১৭ সাল নাগাদ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ । এরপর প্রতিষ্ঠালগ্নে নির্মিত পুরাতন ভবনগুলোতে পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। ওই বিদ্যালয়ে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের একটি মেহগনি, একটি আম ও একটি কৃষ্ণচূড়া গাছসহ ওই স্কুল ভবন পরিত্যক্ত দেখিয়ে গত ১৯ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি প্রকাশ্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারী করে প্রচারের জন্য স্কুলে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু ভবন ও গাছগুলো বিক্রির ঘোষণা প্রচার না করে গত ২৬ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী নিজস্ব মাত্র পাঁচ জন ডাককারী নিয়ে উপস্থিত হন। কর্তৃপক্ষ ওই ভবনটি মোট ৮৬ হাজার টাকা সরকারী মূল্য নির্ধারণ করে ভবন অপসারণ বাবদ ৬৯ হাজার ৮০৩ টাকা বাদ দিয়ে মাত্র ১৬ হাজার ৪৩২ টাকা মূল ডাক ধরা হয়। এতে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী ১৯ হাজার টাকায় ক্রয় করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ স্কুলের সভাপতি সাহেব আলী যোগসাজস করে কাউকে না জানিয়ে তিনি নাম মাত্র টাকায় এই ভবনটি নিজে ক্রয় করেছেন। ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই ভবনটি কিভাবে এতো অল্প টাকায় বিক্রি হলো তা নিয়ে সচেতন মহলের মনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । এছাড়া ওই স্কুলের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি গাছ প্রভাবশালী জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ইউপি মেম্বার মাত্র ৫৭ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

ওই এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তি কামাল হোসেন জানান, আমিসহ এলাকার লোকজন গাছ এবং স্কুল ভবন বিক্রিতে বাধা দিয়েও কোন ফল হয়নি। এতো অল্প সময়ে এই ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। অথচ তারা ভবন ও গাছগুলো বিক্রি করে দিলো।

এব্যাপারে কনৌজ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, স্কুলের কাজের জন্য আমরা ওই ভবন এবং একটি গাছ কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভবন এবং গাছ বিক্রির দিনে সভাপতি সাহেব আলী আমাদেরকে না জানিয়ে নিজের নামে ক্রয় করেছেন।

কনৌজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী জানান, ভবনটি কে নিয়েছে বা কত টাকায় বিক্রি হয়েছে তা আমার জানা নেই।

উপজেলা এল জি ই ডি প্রকৌশলী শাইদুর রহমান মিয়া জানান, নিয়ম মেনেই গাছ এবং ভবনটি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা হয়েছে । ভবনটি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহেব আলী ক্রয় করেছেন বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে ভবনের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেই মোতাবেক ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে । ভবন বা গাছ নিলামে কোন অনিয়ম হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement