২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিজামীর আসনে প্রার্থী হচ্ছেন ছেলে নাজিব মোমেন!

নিজামীর আসনে প্রার্থী হচ্ছেন ছেলে নাজিব মোমেন! - ছবি : সংগৃহীত




জাতীয় সংসদের পাবনা-১ (বেড়া আংশিক-সাঁথিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী বাঘা বাঘা নেতা। স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে যে দল বা জোটের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, সেই দল বা জোট সরকার গঠন করেছে। নির্বাচিত প্রার্থী সরকারের মন্ত্রিত্ব অথবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। তবে দল বা জোটের প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর ভোটের হিসাব-নিকাশ অনেকটাই নির্ভর করবে। সচেতন ভোটারদের অভিমত, এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী।

জাতীয় সংসদের বিগত ১০টি নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে সরকারে মন্ত্রিত্ব অথবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিলেন, তারা হলেন ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ পাবনার গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মির্জা আবদুল হামিদ নির্বাচিত হন। তাকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেয়া হয়, তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব:) মনজুর কাদের নির্বাচিত হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা হওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব:) মনজুর কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিজয়ী হন। 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে আসা মেজর (অব:) মনজুর কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বিজয়ী হয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিজয়ী হয়ে প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বিজয়ী হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বিজয়ী হন।

বিগত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে একমাত্র মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন সাঁথিয়া উপজেলার বাসিন্দা। অন্য সবাই বেড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে আঞ্চলিকতা নয়, দল বা জোটকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা প্রেক্ষাপট। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কে হবেন কোন দল বা জোটের প্রার্থী। নির্বাচনী আলোচনায় এসেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, সাঁথিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন, বিএনপির অঙ্গসংগঠন তাঁতিদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: ইউনুস আলী, সাঁথিয়ার ধোপাদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সরদার শাজাহান। যদি জোটগতভাবে নির্বাচন হয়, তা হলে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর জন্য পাবনা-১ আসন নির্ধারিত হয়ে আছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। যদি তিনি নির্বাচনে প্রার্থী না হন, সে ক্ষেত্রে বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমির তরুণ চিকিৎসক ডা: আবদুল বাসেত খান দলীয় অথবা ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন। 

বর্তমানে বিভিন্ন কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে। এ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ, দুদক থেকে ফাইল গায়েব, ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে তিনি ইমেজ সঙ্কটে পড়েছেন। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে একাদশ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় তিনি নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। এ দিকে দীর্ঘ ১০ বছর পর আওয়ামী লীগের এক সময়ের ডাকসাইটে নেতা সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে নির্বাচনী এলাকা বেড়া-সাঁথিয়ায় জনসভা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সুবিধাবঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে টুকু ও সাইয়িদ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে দলের বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থকই নীরব রয়েছেন। তাদের বক্তব্যÑ যে নৌকা প্রতীক পাবে, তারা সেই প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন।

সাঁথিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। 
জাতীয় পার্টির সরদার শাজাহানের কোনো তৎপরতা নেই। বেড়া-সাঁথিয়ায় জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নীরবে দলকে সংঘটিত করছে। ধোপাদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদ গণসংযোগে তৎপর রয়েছেন। তাঁতিদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: ইউনুস আলী এলাকায় দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারকে নিজ জমিতে পুনর্বাসন করে তাদের নামে দলিল করে দিয়েছেন। দাতব্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান করে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা, চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। আলোচনায় আসছে আঞ্চলিকতার কথা, রাজনৈতিকভাবে কোন দলের অবস্থান কতটুকু মজবুত, কে যোগ্য ও কিন ইমেজের প্রার্থী। দলীয় অবস্থান হিসেবে বেড়াতে আওয়ামী লীগের অবস্থান মজবুত, সাঁথিয়াতেও ভালো। তবে সাঁথিয়ার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ধুলাউড়ি, ভুলবাড়িয়া, ধোপাদহ, গৌরীগ্রাম, নন্দনপুর, ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নকে জামায়াতের ভোটব্যাংক বলে আখ্যায়িত করা হয়। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাঁথিয়ায় জামায়াতের প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বেড়াতে জোটগতভাবে জামায়াতের প্রার্থী পাঁচটি ইউনিয়নের তিনটিতে প্রথম হয়েছিলেন। এ আসনে বিএনপির বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু যোগ্য নেতার অভাব এবং দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে তারা জনসমর্থন কাজে লাগাতে পারছে না।

বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ আসনে আঞ্চলিকতার চেয়ে দলীয়ভাবে প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বেড়ার পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটারসংখ্যা প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার (উপজেলা নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী)। সাঁথিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ভোটারসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার। সাঁথিয়াতে ভোটারসংখ্যা বেশি হলেও মাত্র দু’টি নির্বাচনে সাঁথিয়ার প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিজয়ী হয়েছিলেন। বাকি আটটি সংসদ নির্বাচনে বেড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা নির্বাচিত হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত

সকল