২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাতে পায়ে বানানো হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই

হাতে পায়ে বানানো হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। ছবি - নয়া দিগন্ত।

 আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁ শহরের আনাচে-কানাচে ও এর আশপাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা। বিএসটিআইর অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী কারখানায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের লাচ্ছা সেমাই। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ডালডা। এছাড়া মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান রং ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও কোন কাজে আসছেনা। ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হলেও ব্যবসায়ীরা যেন আরো বেপারোয়া হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার দোগাছী, রজাকপুর, চকপ্রাণ, পালপাড়া, দূর্গাপুর, চুনিয়াগাড়ী ও ভীমপুর সহ প্রায় ২০ টি স্থানে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা আছে। গড়ে উঠা মৌসুমি কারখানাগুলো অনুমোদন না নিয়েই সেমাই উৎপাদন করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে। আর কারখানাগুলোতে সেমাই তৈরীতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শ্রমিক ও মালিকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সিভিল সার্জন অফিস নিরাপদ খাদ্য বিভাগ থেকে হাতে গোনা কয়েকটি নিবন্ধন দিলেও বাঁকীগুলোর কোন নিবন্ধন নাই। এছাড়া বিএসটিআই থেকে কোন নিবন্ধন নাই। যে যার মতো করে প্রকাশ্যে নিম্নমানের সেমাই তৈরি করছেন। শ্রমিকরা ময়দা মাখানো খামিরের কাজ করছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি পা দিয়ে মাড়িয়ে। এছাড়া শরীর থেকে অঝোরে ঝরছে ঘাম। আর সেই ঘাম মিশে যাচ্ছে সেমাই তৈরীর উৎপাদনে।

তাছাড়া হাতে কোনো গ্লোব এবং গায়ে নির্ধারিত কোন পোশাক নাই। তাই তাদের গায়ের ঘাম ও হাতের ময়লার মাধ্যমেই ক্ষতিকারক জীবানু ছড়াচ্ছে। আর নি¤œমানের সেমাই বিক্রি করে মালিকপক্ষ অর্থ উপার্জন করছে। তবে এ সেমাই আসলে কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা দেখার বিষয়।

সদর উপজেলার লাচ্ছা ব্যবসায়ী চকপ্রাণ মহল্লার হাবিবুর রহমান রানা ও চুনিয়াগাড়ী গ্রামের এনামুল হক মোল্লা বলেন, আমরা পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লাচ্ছা তৈরী করছি। যা স্বাস্থ্য সম্মত। প্রতি খাচি লাচ্ছা (২০ কেজি) ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পা দিয়ে মাড়ানো বিষয়টি সম্পন্ন মিথ্যা। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এসে বিষয়টি দেখেও গেছেন।

নওগাঁ শহরের খাঁস-নওগাঁ মহল্লার মৌসুমি সুলতানা শান্ত বলেন, আমাদের অনেকেরই অজানা যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে নিম্নমানের লাচ্ছা সেমাই তৈরী করছেন। আর খালি পায়ে মাড়িয়ে এবং ঘর্মাক্ত শরীরে যেভাবে এসব তৈরী করা হচ্ছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করছি আপাতত ঈদ মৌসুমে এটাকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শামছুল হক বলেন, খাদ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইন্সেস নিতে হয়। শর্ত থাকে যে পরিবেশ অবশ্যই দূষণমুক্ত ও স্যতস্যতে আবহাওয়া থাকবে না। এছাড়া কর্মচারীদের মেডিকেল ফিটনেস থাকতে হবে। এরপর আমরা উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার পর সিভিল সার্জন অফিস থেকে লাইন্সেস প্রদান করা হয়। এরপর তাদের আবার ব্যবসায়ীরা বিএসটিআইয়ের অনুমোতি নিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, সাধারনত অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিএসটিআইয়ের অনুমোতি না নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। অনেকে পা দিয়ে মাড়িয়ে লাচ্ছা তৈরী করেন। আমরা বিষয়টি দেখার পর ভ্রাম্যমান দিয়ে জরিমানা করেছি। আর কোন ব্যবসায়ী যেন এভাবে লাচ্ছা তৈরী করতে না পারে এজন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, পা যতোই পরিস্কার হোক না কেন আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ও নখে জীবানু থাকে। এছাড়া শরীর থেকে যে ঘাম ঝরে এটা পেটের জন্য হুমকি স্বরুপ ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেট ফাঁপা সহ পেটের বিভিন্ন পীড়া দেখা দিতে পারে। আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা-সেমাই তৈরী করা হলেও রোগ জীবানু ছড়াবে। এতে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি আরো বলেন, গত বারের চেয়ে এবছর ভেজাল বিরোধী নিয়ন্ত্রনের জন্য শক্তভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেমাই তৈরীর কারখানা গ্রামীণ ফুডস, নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ কয়েকটি কারখানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর জন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement