২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লো মেধাবী ছাত্রী মিম

অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লো মেধাবী ছাত্রী মিম - ছবি : সংগৃহীত

অর্থের অভাবে বাড়িতে বসে অলস সময় কাটছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী শারমিন আকতার মিমের। পড়াশোনার খরচ জোগাতে না পারায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পরিবারের সঙ্গেই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। গত প্রায় ৫ মাসে তার ৫০হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে রিকশা চালক পিতার পক্ষে তার পড়াশোনার খরচ যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় একটি সম্ভাবনাময় স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশ হতে চলেছে।

শারমিন আকতার মিম জানায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৩৯৬ নম্বরে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হন তিনি। গত ১০ জানুয়ারি থেকে প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসও নিয়মিত শুরু করেন। তবে আবাসিক হল না পাওয়ায় মেসে থেকে পড়াশোনা চালাতে থাকেন তিনি। কিন্তু তার জন্য প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাবদ প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। যেটা তার দরিদ্র রিকশাচালক পিতার পক্ষে জোগান দেয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গত এক মাস ধরে বাড়িতেই বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তার প্রশ্ন এ সমাজে এমন কি কেউ নেই যে, তার পড়াশোনার খরচ যোগাতে সহায়তা করবেন? যাতে তার ভবিষ্যত অনাগত স্বপ্ন সত্যি হতে পারে!

বাবা মায়ের সাথে নিজেদের ঘরের সামনে মিম

শারমিন আক্তার মিম নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের ঘাটকৈর গ্রামের রিকশাচালক জামাল হোসেন ও গৃহিণী মা মোরশেদা খাতুনের বড় মেয়ে। ছোট বোন শাহারা আফরিন মান্দা এসসি পাইলট স্কুল ও কলেজে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

জানা যায়, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র চার শতাংশ জমির মালিক মিমের পিতা জামাল হোসেন। সেখানেই টিন ও বুনের বেড়া দিয়ে তৈরি একটি ঝুপড়ি ঘরে ঠাসাঠাসি করে পরিবারের চারজন সদস্যের একত্রে বসবাস। শারমিন আক্তার মিম ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। অভাব ও দরিদ্র তাকে দমাতে পারেনি কখনো।

মান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালের ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় ৫১০ নম্বর পেয়ে বৃত্তিলাভ করেন। মান্দা এসসি পাইলট স্কুল ও কলেজ থেকে ২০১২ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে বৃত্তি পান। পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে আবার জিপিএ-৫ এবং ২০১৭ সালের নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ- ৪.২৫ অর্জন করেন।

হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মিম এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এতদিন পড়াশোনা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এখন উচ্চশিক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে এখন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে।

শারমিনের মা মোরশেদা খাতুন অশ্রসিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের জানান , শত কষ্টের মাঝেও মেয়ে দু’টিকে শিক্ষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। আমাদের পক্ষে কিছুতেই প্রতিমাসে এত টাকা যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য মাঝপথে টাকার অভাবে মেয়ে মিমের স্বপ্ন এখন স্বপ্নই রয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে সে প্রথম সেমিষ্টারে ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন করছে। কিন্তু ঢাকা শহরে রেখে আমাদের মতো অসহায় ও হত-দরিদ্র পরিবারে পক্ষে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তিনি দেশ বিদেশে অবস্থারত সমাজের উচ্চ বিত্তদের কাছে মেয়ে মিমের উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্থ সাহায্য কামনা করেছেন।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ মোছাঃ শারমিন আক্তার মিম, পিতাঃ জামাল হোসেন, গ্রামঃ দোসতি, উপজেলাঃ মান্দা, জেলাঃ নওগাঁ। পিতার মুঠোফোন নম্বরঃ ০১৭৭৫৬১১৯৮১, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, মান্দা শাখা, হিসাব নম্বর এসএমএসঃ ২০৫০৩৮৯৬৭০০০১৫৪১০।


আরো সংবাদ



premium cement