১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেস্তোরাঁর আড়ালে ভয়ঙ্কর চক্র

রেস্তোরাঁর আড়ালে ভয়ঙ্কর চক্র - ফাইল ছবি

‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ একটি রেস্তোরাঁর নাম। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তন ও ঘোষপাড়া মোড় সংলগ্ন এর অবস্থান। এই মোড়ের একটি তিন তলা ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে রেস্তোরাঁটি। রেস্তোরাঁটির মালিকের নাম আসলাম সরকার। এছাড়া ব্ল্যাক ক্যাফের পাশের তিন তলা ভবনটিও ভাড়া নিয়ে ‘সরকার প্রোডাকশন হাউজ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানর পরিচালনা করেন তিনি। রাজশাহীতে মিউজিক ভিডিও নির্মাণের কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। আর ব্ল্যাক ক্যাফে ঘিরেই আসলাম সরকার গড়ে তুলেছেন এক অন্ধকার জগৎ। আর ক্যাফেটির পাশের প্রোডাকশন হাউজে তথাকথিত মডেলদের এনে চালাতেন অসামাজিক কার্যকলাপ। তবে আসলাম সরকার ব্ল্যাক ক্যাফে ও শুটিংয়ের আড়ালে রাজশাহীতে একটি বড় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। গত ২৩ মে বুধবার সকালে কক্সবাজারে এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন তিনি। বিপুল ইয়াবাসহ আসলাম সরকারের গ্রেফতারের বিষয়টি প্রকাশের পর রাজশাহীতে চলছে তোলপাড়। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। 


স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ক্যাফেটির খাবারের মান সন্তোষজনক নয়। অন্যান্য রেস্তোরাঁর মতো এখানে ভোজনরসিকদের উপচেপড়া ভিড়ও দেখা যায় না। তবে এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণীর যাতায়াত রয়েছে এই রেস্তোরাঁয়। এদের বেশির ভাগই ইয়াবাসহ বিভিন্ন রকম মাদকে আসক্ত। অভিযোগ রয়েছে, ক্যাফেটিতে মাদক সেবনসহ চলে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ। 

এতদিন গোপন থাকলেও আসলাম সরকার গ্রেফতারের পর এখন বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে আসলাম সরকার তার মাদক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আসলাম সরকার নগরীর রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার আজিজুল আলমের ছেলে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্ল্যাক ক্যাফে আর সরকার প্রোডাকশন হাউজে রাতভর চলে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ধনী পরিবারের সন্তানদের এখানে রয়েছে নিয়মিত যাতায়াত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে ইয়াবাসহ অন্য মাদকদ্রব্যেরও সরবরাহ রয়েছে। 
অভিযোগ রয়েছে, জেলার বাঘা উপজেলার কালাম মোল্লার সাথে রয়েছে আসলাম সরকারের সখ্য। কালাম মোল্লাও রাজশাহীর আরেক মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মাদক ব্যবসা নিয়ে তাদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তবে একটি সূত্র জানায়, আসলাম সরকারের ব্ল্যাক ক্যাফেতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে কালাম মোল্লার। কালাম মোল্লা বর্তমানে বাঘার এমএইচ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে র্যাব-৭ কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি মাইক্রোবাস আটক করে। এ সময় তল্লাশি চালিয়ে তেলের ট্যাংকির ভেতর কৌশলে লুকানো এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব নিশ্চিত হয়, মাইক্রোবাসের মালিক আসলাম সরকার এবং চালক মাসুদ রানা ইয়াবা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া অন্যরা তাদের সাথে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পটে শুটিংয়ের জন্য আসে। তাই আসলাম ও মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ও অন্যদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ, স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে আসলাম সরকার কর্মজীবনের শুরুতে একটি টেলিফোনের দোকানের সামান্য কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। কয়েকটি বিয়ে করেছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত মামলাও রয়েছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ব্ল্যাক ক্যাফের দরজা বাইরে থেকে সব সময় বন্ধ করে রাখা হয়। বোঝার উপায় নেই যে, এর ভেতরে কি ঘটছে। অপরিচিত কাউকেই এই ক্যাফের মূল অংশে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। পাশের ভবনেই চলে আসলামের প্রোডাকশন হাউজের কার্যক্রম। সেখানে তথাকথিত মডেলদের এনে চালাতেন অসামাজিক কার্যকলাপ। তবে আসলাম সরকার ব্ল্যাক ক্যাফে ও শুটিংয়ের আড়ালে রাজশাহীতে একটি বড় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘুরে বেড়ান অত্যাধুনিক মডেলের গাড়িতে। এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক। 

আসলামকে গ্রেফতারের পর র্যাব-৭ কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, আসলাম বহু দিন থেকে মিউজিক ভিডিও শুটিংয়ের নামে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছিলেন। আসলাম জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, জব্দকৃত মাইক্রোবাসটি ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। জব্দ করা এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবার আনুমানিক মূল্য চার কোটি ৩২ লাখ টাকা বলেও জানান তিনি। 

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলাম সরকার গ্রেফতারের পর এখন তার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকদের মতো আমরাও তার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবার বিশাল চালানসহ গ্রেফতারের পর সেখানকার প্রশাসন আপাতত তার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলামের বিষয়টি রাজশাহীর পুলিশও তদন্ত করে দেখবে।
বাঘা থানার ওসি রেজাউল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, মাদক কারবারি কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে বাঘা থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে সবকটি মামলাতেই তিনি জামিনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেণ্ট নেই। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কালাম ব্যবসায়ীক কারণে রাজশাহী শহরে থাকেন বলে শুনেছি।


আরো সংবাদ



premium cement