২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শাওমির ১০৮ মেগাপিক্সেল সস্তা চমক!

-

শুধু স্মার্টফোন নয়, পেশাদার ডিসএলআর ক্যামেরার ক্ষেত্রে সহজ ভাষায় মেগাপিক্সেলের হিসাব হলো ছবিটি প্রিন্ট করা বা ছাপানোর বেলায় কত বড় করে ছাপানো যাবে সেই হিসাব। প্রতিটি পিক্সেলের জন্য সেন্সরে নির্দিষ্ট চৌকোণা অংশে আলো রেকর্ড করা হয়। প্রতিটি পিক্সেল নিজ অবস্থানে থেকে বৈদ্যুতিকভাবে সচল হয়। সমস্যা হলো, ছোট পরিসরে পাশাপাশি যখন অনেক পিক্সেল থাকে এবং সবগুলো একসাথে বৈদ্যুতিকভাবে সচল হয়ে উঠে, তখন এক পিক্সেলের প্রভাব গিয়ে অন্য পিক্সেলে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আর এর ফলে উঠে আসে ‘ডিজিটাল নয়েজ’। এই নয়েজের কারণে ছবির মূল মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়, হারিয়ে যায় ছবির বিস্তারিত এবং ছবি হয় কিছুটা অস্পষ্ট।
শাওমি বলছে, তাদের আসন্ন ‘মি সিসি৯ প্রো প্রিমিয়াম’ ফোনটি বিশ্বের ‘প্রথম মেইনস্ট্রিম’ স্মার্টফোন হতে যাচ্ছে। আর হ্যাঁ, এতে থাকবে ১০৮ মেগাপিক্সেল সেন্সরের ক্যামেরা। আর বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাওমির ৪০০ ডলারের ওই ফোনে এই বিশাল সেন্সর যোগ করা কি সস্তা চমক?
অবাক করার বিষয় হলো, শাওমিকে উচ্চ রেজুলিউশনের ওই ক্যামেরা সেন্সরটি তৈরি করে দিয়েছে স্যামসাং। তবে, স্যামসাং নিজে কোনো ফোনে এখনো সেন্সরটি ব্যবহার করেনি। আপাতত নতুন ওই ফোন কেবল চীনের বাজারে আনার কথা জানিয়েছে শাওমি। প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, ‘মি নোট ১০’ স্মার্টফোনেও একই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে বৈশ্বিক বাজারে এসেছে ‘মি নোট ১০’ ফোনটি। এর পাশাপাশি চীনের আগ্রহী ক্রেতাদের প্রি-অর্ডার নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
জিএসএম অ্যারিনার দেয়া তথ্যানুসারে, নতুন ‘মি সিসি৯ প্রো’ স্মার্টফোনে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০জি। প্রসেসরে একটি অক্টাকোর সিপিইউ রয়েছে যা দুটি পারফরমেন্স কোরের সাহায্যে ২.২ গিগাহার্টজ ক্ষমতায় সচল রাখবে ফোনটিকে। ডিসপ্লে হিসেবে থাকছে ৬ দশমিক ৪৭ ইঞ্চি আাকৃতির সুপার অ্যামোলেড প্যানেল যা পরিপূর্ণ এইচডি+ রেজুলিউশন এবং ১৯.৫:৯ অনুপাতে কনটেন্ট দেখানোর ক্ষমতা রাখে। ব্যাটারি হিসেবে থাকছে পাঁচ হাজার ২৬০ মিলিঅ্যাম্প আওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার সেল। শাওমির দাবি, ব্যাটারিটি ৫৮ শতাংশ চার্জ হতে ৩০ মিনিট এবং পরিপূর্ণ চার্জ হতে ৬৫ মিনিট সময় নেবে।
অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাই অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনটিতে বাড়তি হিসেবে থাকছে শাওমির বিশেষ ইউজার ইন্টারফেইস ‘এমআইইউ’। স্টোরেজ ভেদে হিসাব করলে ফোনটির দুটি মডেল রয়েছে। প্রথমটি ৬ গিগাবাইট র্যাম ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং দ্বিতীয়টি ৮ গিগাবাইট র্যাম ও ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন।
ক্যামেরা সেন্সর ছাড়া আর কোনো হার্ডওয়্যার ফিচার চমক দেখানোর মতো নয়। বিবিসির প্রতিবেদনে আসন্ন ফোনটি নিয়ে বলা হয়েছে, এতদিন শুধু হাজার ডলার মূল্যের মাঝারি শ্রেণীর ডিজিটাল ক্যামেরাতে এ ধরনের বড় ক্ষমতার সেন্সর দেখা যেত। এবার প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে ছোট একটি ডিভাইসে। আর ডিভাইস আকৃতির কারণে প্রযুক্তিগত বেশ কিছু ঝুঁঁকি থেকেই যাচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, স্মার্টফোনটিতে স্বল্প পরিসরে অনেক পিক্সেল রাখতে হয়েছে। এতে করে প্রতি পিক্সেল সাধারণত যে মাপের নির্ধারিত স্থান পেয়ে থাকে, তা পায়নি। প্রতিটি পিক্সেলকে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত স্থানের চেয়েও অনেক কম জায়গা। স্থান স্বল্পতার এই বিষয়টি খারাপ প্রভাব ফেলবে অল্প আলোয় ছবি তুলতে গেলেই। এভাবে রাখার কারণে শুধু স্থান নয়, আলো ধারণ করার ক্ষমতাও কমে গেছে পিক্সেলগুলোর।
শাওমির জন্য সেন্সরটি তৈরি করে দেয়া প্রতিষ্ঠান স্যামসাং অবশ্য কিছুটা হলেও সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছে। প্রচলিত ফোনে যে সেন্সর ব্যবহার করা হয়, তার চেয়ে বড় আকৃতির সেন্সর তৈরি করে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাংয়ের তৈরি ওই ‘আইএসওসেল সেন্সরে’ পিক্সেলগুলোকে মূলত রঙের ফিল্টার ভেদে চার ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। মূলত ওই চার গ্রুপের ডেটার সমন্বয়েই পরিপূর্ণ ছবি তৈরি করে দেবে সেন্সরটি। তারপরও ছোটখাটো কিছু ত্রুটি রয়েই গেছে।
১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা ছবি রাখতে যে আরো বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন পড়বে, সে বিষয়টিও আগ্রহী ক্রেতাদের ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে বিবিসি।
মোবাইল ডিভাইস নির্ভর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের বিশ্লেষক বেন উড মন্তব্য করেছেন, মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য সব করতে পারবে মোবাইল ফোন নির্মাতারা। ওই উচ্চ পিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাও দেয়া হয়েছে মানুষকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেই। তাই বলে এর মানে এই নয় যে, সব পরিস্থিতিতেই ভালো ছবি তুলতে পারবে ক্যামেরাটি। ‘অরোরা’ সবুজ, ‘গ্লেসিয়ার’ সাদা এবং ‘মিডনাইট’ কালোÑ এ তিনটি রঙে পাওয়া যাবে স্মার্টফোনটি।
ষ আহমেদ ইফতেখার


আরো সংবাদ



premium cement