সফলতা ও ব্যর্থতার ১৬ বছরে ফেসবুক
- আহমেদ ইফতেখার
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর খুব অল্প সময়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পূর্ণতা লাভ করেছে ফেসবুক। এখন বিশ্বব্যাপী ২৩২ কোটি মানুষ সক্রিয়ভাবে সাইটটি ব্যবহার করছে। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। সে হিসেবে চলতি মাসে প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পূর্ণ করে ১৬-তে পদার্পণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৮ সালে তথ্য কেলেঙ্কারি, ভুয়া খবর ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভাবমর্যাদার সঙ্কটে পড়েছে ফেসবুক। যদিও জাকারবার্গ বলছেন, ফেসবুকের ভাবমর্যাদা এখনো ইতিবাচক রয়েছে। ১৫ বছর পূর্তিতে এক পোস্ট জাকারবার্গ লিখেছেন, মানুষের প্রচলিত শ্রেণিবৈষম্য দূর করেছে ফেসবুক, সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করেছে। এ পরিবর্তন কিছু মানুষ মানতে পারেনি, তারা নেতিবাচক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা বলেছে, ইন্টারনেট ও এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষের ক্ষমতায়ন সমাজ ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এই নেতিবাচক ধারণার বাইরেও ফেসবুক ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে এ বিশ্বে। জাকারবার্গ ফেসবুকের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ফেসবুকের সাথে পুরো ইন্টারনেটের বিষয়টিকে টেনে এনেছেন। যার মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ইন্টারনেট পুরো বিশ্বের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একটা রাস্তা করে দিয়েছে।
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুকের জন্য প্রথম কোড লিখেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। ওই সময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জাকারবার্গের উদ্দেশ্য ছিলÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তুমুল হারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমটি। বৈশ্বিকভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক এখন বন্ধু এবং পছন্দের মানুষের সাথে সম্পৃক্ত থাকার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সাথে তাল মিলিয়ে সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জাকারবার্গকে ঘিরে বিতর্ক বাড়তে থাকে। গত দুই বছর বিপুল ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ফেসবুকের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পায়। যদিও এসব ঘটনার কারণে ফেসবুকের প্রবৃদ্ধি একটুও বাধাগ্রস্ত হয়নি। তীব্র বিতর্কের পরও ৩৪ বছর বয়সী মার্ক জাকারবার্গ তার প্রজন্মের সবচেয়ে চৌকস উদ্যোক্তা। ২০১৮ সাল শেষে ফেসবুকের বাজারমূল্য সাত হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ফেসবুকের এমন উত্থানের জন্য মার্ক জাকারবার্গের একক সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কিন্তু গত বছর একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর ফেসবুক সিইওর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
ফেসবুকের কার্যক্রম এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন ফিচারের পাশাপাশি নতুন প্রকল্প ও নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি মানুষকে সাইটটিতে সম্পৃক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং সুবিধার পাশাপাশি সাইটটিতে যুক্ত হয়েছে যুগোপযোগী নিত্যনতুন সব ফিচার। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিজের নিরাপত্তা জানানোর মতো ফিচার যুক্ত হয়েছে। এর ফলে ব্যবহারকারী বেড়েছে।
২০১৮ সালে ব্রিটিশ রাজনৈতিক ও তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর সিইও পদ থেকে মার্ক জাকারবার্গের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। তবে বিনিয়োগকারীদের এমন দাবিতে গুরুত্ব না দিয়ে ফেসবুক প্লাটফর্মকে আরো আধুনিক করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাকারবার্গ।
জাকারবার্গের উত্থান নিউইয়র্কের অদূরবর্তী ছোট গ্রাম ডবস ফেরি থেকে। তার বাবা এডওয়ার্ড ও মা কারেন জাকারবার্গ দাঁতের চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। রান্ডি, ডোনা ও এরিয়েলি নামে জাকারবার্গের আরো তিন ভাইবোন আছে। মার্ক জাকারবার্গ ১২ বছর বয়সে ‘জুকনেট’ নামে একটি মেসেজিং প্লাটফর্ম তৈরি করেছিলেন। এ ছাড়া কিশোর বয়সেই বন্ধুদের জন্য কম্পিউটার গেমের কোড লিখেছিলেন তিনি। নিউ হ্যাম্পশায়ারে বিখ্যাত ফিলিপস এক্সটার একাডেমিতে হাইস্কুলে পড়ার সময়ই একটি মিউজিক স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম তৈরি করেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। একেবারে শুরুর দিকের এ মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম কিনতে আগ্রহী ছিল এওএল এবং সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। টিনএজার জাকারবার্গ ওই সময় নিজের প্রতিষ্ঠিত প্লাটফর্ম বিক্রি কিংবা কারো অধীনে চাকরিতে যোগ দিতে অনাগ্রহী ছিলেন।
মার্ক জাকারবার্গ শুধু কম্পিউটার কিংবা কোডিংয়েই পারদর্শী ছিলেন না, একই সাথে ক্ল্যাসিকস পছন্দ করতেন তিনি। খেলাধুলার প্রতিও তার দুর্বলতা ছিল। হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় একাডেমির ‘ফেন্সিং টিম’-এর ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মার্ক জাকারবার্গ। সেখানে তিনি দক্ষ ডেভেলপার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জাকারবার্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ ছিল ‘ফেস ম্যাশ’। সহপাঠীদের ছবি ব্যবহার করে কে কতটা আকর্ষণীয়, তা নির্ধারণের অ্যাপ ছিল এটি। সবশেষ বেশ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক চালু করেন। বর্তমানে ফেসবুক সিইও এখন সিলিকন ভ্যালির অন্যতম টেক টাইটান।
জাকারবার্গ ফেসবুকের কার্যক্রম শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এক কোটি ২৭ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিন ‘পারসন অব দ্যা ইয়ার’ হিসেবে মার্ক জাকারবার্গের নাম ঘোষণা করে। ২০১২ সালের ১৮ মে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় ফেসবুক। আইপিও ঘোষণার মাধ্যমে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কোম্পানি হয় ফেসবুক। এর সুবাদে রাতারাতি বিশ্বের ২৯তম শীর্ষ ধনীর আসনে অধিষ্ঠিত হন মার্ক জাকারবার্গ।
ফেসবুক পাবলিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হওয়ার পরদিনই বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন চ্যান-জাকারবার্গ জুটি। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তির বিয়ে সম্পন্ন হয় আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান ছাড়াই। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রিসিলা চ্যানকে নিজের ডিজাইন করা খুব সাধারণ রুবির আংটি পরিয়েছিলেন জাকারবার্গ।
চীনা ভাষা শিখেছেন মার্ক জাকারবার্গ। ২০১৪ সালে অনুশীলন শুরুর পর তিনি মান্দারিন ভাষায় দারুণ দক্ষতা অর্জন করেন। এখন মান্দারিন ভাষায় টানা ৩০ মিনিট প্রশ্নোত্তর পর্ব চালিয়ে যেতে পারেন তিনি।
২০১৫ সালে চ্যান-জাকারবার্গ দম্পতির প্রথম সন্তান ম্যাক্সের জন্ম। ম্যাক্সের জন্মের পর ফেসবুকে থাকা নিজের শেয়ারের ৯৯ শতাংশই মানবহিতৈষী কাজে দান করার ঘোষণা দিয়ে ‘চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি দাতব্য তহবিল চালু করেন তিনি। এর মাধ্যমে শিক্ষা, রোগ নিরাময় ও মানুষের সাথে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে অর্থ ব্যয়ের ঘোষণা দেয় চ্যান-জাকারবার্গ দম্পতি।
২০১৭ সালের মে মাসে দ্বিতীয় সন্তানের তথ্য জানায় চ্যান-জাকারবার্গ দম্পতি। মার্ক জাকারবার্গের বয়স যখন ৩০, তখনই তিনি বিশ্বের হাতেগোনা শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের একজন। তবে বরাবরই খুব সাধারণ জীবনযাপন করে আসছেন তিনি। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও হলেও বরাবরই ধূসর রঙের টি-শার্ট ও জিন্স পরে অফিস করেন তিনি। গাড়ির ক্ষেত্রেও জাকারবার্গের পছন্দ খুব সাধারণ। তিনি ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনের কালো রঙের একটি ফক্সওয়াগন জিটিআই ব্যবহার করেন। ইতালির তৈরি একটি সুপারকারের মালিক জাকারবার্গ। ১৩ লাখ ডলারের এ গাড়ি নিয়ে সচরাচর বের হন না জাকারবার্গ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা