২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিবন্ধনের আওতায় আসছে হ্যান্ডসেট

-

বাংলাদেশে বছরে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট নানা অসাধু উপায়ে সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাজারে আসছে। এতে প্রতি বছর ৮০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই অবৈধভাবে আমদানি ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট চিহ্নিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে যতগুলো রেডিও ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার হবে, সেই সেটগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবৈধ বা নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট চিহ্নিত করার এ প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না। নির্দিষ্ট সময় পরে কোনো সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবে।
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি অবৈধ হ্যান্ডসেট মানুষের হাতে রয়েছে। অবৈধ আমদানি, চুরি, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রাজস্ব ক্ষতি ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রারের (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনা অনুসারে কোন কোন গ্রাহকের হাতে অবৈধ হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। অপারেটররা তাদের লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী সব মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইএমআই নম্বর দিয়ে এই ডাটাবেজ তৈরি করবে। এ ডাটাবেজে তিনটি ক্যাটাগরি থাকবেÑ ব্ল্যাক, হোয়াইট ও গ্রে।
আইএমইআই নম্বর হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা, যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে উঠে। অপারেটরদের ইআইআর তৈরির পর তা জাতীয় ইআইআরে (এনইআইআর) সংযুক্ত হবে। এর ফলে সব অপারেটরের ইআইআর খুব সহজেই নজরদারি করতে পারবে বিটিআরসি।
ইআইআর ও এনইআইআর বাস্তব সময় সিংক্রোনাইজেশন হবে, অর্থাৎ ইআইআরকে ডাটা সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তা এনইআইআরে চলে আসবে। খসড়া নির্দেশনায় ‘হোয়াইট’ বলতে বোঝানো হয়েছে সব ধরনের বৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেট, বৈধভাবে দেশে তৈরি এবং বিটিআরসিতে নিবন্ধিত হ্যান্ডসেট।
‘গ্রে’ বলতে বোঝানো হয়েছে সন্দেহভাজন মোবাইল হ্যান্ডসেট। এগুলো নির্দিষ্ট সিমে কাজ করবে, কিন্তু এসব হ্যান্ডসেটের বিষয়ে অপারেটরদের সতর্ক করে দেয়া হবে।
‘ব্ল্যাক’ বলতে বোঝানো হয়েছে চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেটের আইএমইআই, আইএমইআই মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল আইএমইআই এবং কিস্তিতে মোবাইল কিনে যারা খেলাপি হয়েছেন, তাদের হ্যান্ডসেট।
কিছু কিছু নম্বর ভিআইপি লিস্ট হিসেবেও থাকবে, যারা সরকারের বিশেষ নির্দেশনায় এই ফিল্টারিং প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে।
ক্লোন, অনুমোদনহীন নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা কিন্তু বর্তমানে নেটওয়ার্কে সচল রয়েছে, এমন হ্যান্ডসেটগুলো যে অপারেটরের সিমে রয়েছে সে অনুযায়ী নিবন্ধিত হয়ে যাবে। ইআইআর তাদের হ্যান্ডসেটগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত করার সুযোগ দেবে।
এসব হ্যান্ডসেট ‘গ্রে’ তালিকায় চলে যাবে। এসব হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হবে নিবন্ধনের জন্য। কত দিনের মধ্যে এই হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত করা যাবে, তা ঠিক করে দেবে বিটিআরসি।
বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘গ্রাহকের হাতে যেসব নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট রয়েছে, এই সিস্টেম শুরু করার ছয় মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সিমে তা চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ যে সিমে মোবাইল চালু থাকবে, সেই সিমের মাধ্যমেই তা নিবন্ধিত ধরে নেয়া হবে। ছয় মাস পর কোনো নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা বা ক্লোন হ্যান্ডসেটে সিম কাজ করবে না।’
যদিও মোবাইল ফোন অপারেটর কর্তৃপক্ষ এই সময়সীমা এক বছর করার আবেদন জানিয়েছে। তবে করপোরেট সিমের ক্ষেত্রে এসব নিয়মের ভিন্নতা রেখেছে বিটিআরসি। এই নির্দেশনা জারির দুই মাসের মধ্যে ইআইআর সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে অপারেটরদের। কেউ যদি বিদেশ থেকে কোনো হ্যান্ডসেট উপহার পায় তাহলে সেই হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করতে পারবে অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র গিয়ে ক্রয় রসিদ বা অন্যান্য মূল দলিল দেখিয়ে। এ ছাড়া কেউ যদি হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে চায়, তাহলে অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে গিয়ে তাদের এনআইডি থেকে আইএমইআই অনিবন্ধিত করতে পারবে। ওই হ্যান্ডসেট যে কিনবে সে তার নামে হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধিত করতে পারবে।
সিম ছাড়াও গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় ক্রয় রসিদ বা প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করতে পারবে। ইআইআর মডিউলের মাধ্যমে অপারেটররা চুরি যাওয়া মোবাইল, প্রতারণাপূর্ণ ও ক্লোন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কারো হ্যান্ডসেট চুরি হলে তা সংশ্লিষ্ট অপারেটর গ্রাহক সেবাকেন্দ্র অভিযোগ করা মাত্র সেই হ্যান্ডসেটে আর কোনো সিম কাজ করবে না।
ফলে হ্যান্ডসেট বাজারের অবৈধ কারসাজি বন্ধ হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, ‘এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সেক্টরের সম্মিলিতভাবে করা একটি চমৎকার প্রকল্প, যা একই সাথে ব্যবসায়ী, সরকার ও মোবাইল ব্যবহারকারীদের সুবিধা দেবে। বাজারে যেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে, সেগুলোর প্রতি তিনটিতে একটিই নকল বা অবৈধ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতি বছর এক কোটির বেশি অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে আসছে। এগুলোর বাজারমূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আর এর পুরোটাই যাচ্ছে গ্রাহকের পকেট থেকে। তদারকি সংস্থাগুলোর অপর্যাপ্ত নজরদারি ও অভিযানের সুযোগে স্থানীয় বাজারে এদের প্রভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইএমইআই নম্বরবিহীন সেট বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। এতে অবৈধভাবে আমদানি, চুরি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ করার পাশাপাশি গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement