২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পথে জাতীয় ডেটা সেন্টার

-

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির সামগ্রিক কার্যক্রম বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গত বুধবার বিনিয়োগকারীদের জন্য সদ্যচালুকৃত কমিউটার ট্রেনে চড়ে তিনি এই হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করেন। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘ দিনের দাবি। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগকারীরা এবং সেখানে কর্মরত লোকজন খুব সহজে এবং অল্প সময়ে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে যাতায়াত করতে পারবেন। এর ফলে হাইটেক পার্কটি খুব দ্রুত কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি কমিউটার ট্রেন-১’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি কমিউটার ট্রেন-২’ নামে দু’টি ট্রেন প্রতিদিন চারবার ঢাকা থেকে কালিয়াকৈর যাতায়াত করছে।
হাইটেক সিটিতে জাতীয় ডেটা সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় ডেটা সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর দ্রুতই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। চীনের সহযোগিতায় প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ডেটা সেন্টারের ৯৯ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই তথ্যভাণ্ডারের জন্য নির্মিত দুই লাখ বর্গফুট আয়তনের ভবনে ইতোমধ্যে আমদানি করা যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে চলছে পরীক্ষামূলক কাজ। ডেটা সেন্টারের ভেন্ডর হিসেবে কাজ করছে চীনের জেডটিই করপোরেশন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আপটাইম ইনস্টিটিউট ডেটা সেন্টারের মান পর্যবেক্ষণ করে সনদ দিয়েছে।
‘হাইটেক পার্কে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা তিন বছর ট্যাক্স মওকুফ করে দিচ্ছি। পাশাপাশি স্টার্টআপদের জন্য আমরা এখানে বিনামূল্যে স্পেস দিচ্ছি, যেন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়। বিনিয়োগে নতুন মাত্রা নিয়ে আসবে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি।’
আশা করা যায়, আগামী এপ্রিলে কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু করা যাবে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ‘ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের এই প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর একনেকের অনুমোদন পায় এ প্রকল্প। চীনের এক্সিম ব্যাংকের ১৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং বাংলাদেশ সরকারের চার কোটি ডলার অর্থায়নে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম এই ডেটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যৌথভাবে ডেটা সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ডিজিটাল কনটেন্ট এক জায়গায় রাখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তথ্যের নিরাপত্তার পাশাপাশি উন্নত ই-সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। দেশে আধুনিক ডিজিটাল কার্যক্রম, সেবা প্রদান ও ই-বিজনেসের মূলভিত্তি হবে এই ডেটা সেন্টার। এর মাধ্যমে বছরে আনুমানিক এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকার বেশি রিটার্ন আসবে বলে আমাদের ধারণা।
কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি দেশের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রকল্প। ইতোমধ্যে সেখানে অফসাইট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ৯টি কোম্পানিকে ২০.৫০ একর এবং পরে আরো ৯টি কোম্পানিকে ২৮ একর জমির প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে।
হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান, রবি, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাসডাক টেকনোলজিস বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে প্রায় ১৪০.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার এবং ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া ডেটা সফট, আমরা হোল্ডিংস, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম, ইউ ওয়াই সিস্টেম, এসবি টেল এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভ ফর জবসÑ শীর্ষক প্রকল্প এখানে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির কাজ করবে।
আগামী চল্লিশ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে রবি অজিয়াটা, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাজডাক টেকনোলজিস এবং জেআর এন্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement