২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেসবুককে বিদায় দিচ্ছেন কি?

-

২০১০ সাল থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ডাউনলোড করে নেয়ার সুবিধা চালু করেছে। এর ফলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা সব তথ্য, ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করতে পারেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর
থেকে ফেসবুক থেকে তথ্য ডাউনলোড করার হার বেড়ে গেছে। অবাক করার খবর হলো অনেকেই ফেসবুককে বিদায় বলে দিচ্ছেন।
লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার

গত কয়েক দিনে অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়ার আগে ফেসবুক থেকে সব ব্যক্তিগত তথ্য বা ডেটা ডাউনলোড করে নেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। আর এত অনুরোধ একসাথে যাওয়ার ফলে ফেসবুকের ব্যাকএন্ডে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট রিকোডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে ফেসবুক থেকে তথ্য ডাউনলোড করে নেয়ার হার বেড়েছে।
গত অক্টোবর থেকে মূলত ডাউনলোডের হার বেড়েছে। অনুরোধ এতটাই বেড়েছে যে ফেসবুককে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে সাথে সাথে ডাউনলোড করার সুবিধাটি পাচ্ছেন না। ব্যবহারকারীদের তথ্য ডাউনলোড করতে দেরি হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
সবাই যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার জন্য তথ্য ডাউনলোড করে নিচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। অনেকেই তথ্য নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতে ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে রাখছেন। তবে কতজন ফেসবুক মুছে ফেলার জন্য তথ্য ডাউনলোড করে নিচ্ছেন, সে সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। ফেসবুকের কাছে রিকোড প্রশ্ন করলেও তারা তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
ফেসবুক থেকে তথ্য ডাউনলোড করে নেয়ার হার বাড়ার বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস ফেসবুকের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। এ ছাড়া ফেসবুক ডিফাইনার্স পাবলিক অ্যাফেয়ার্স নামের একটি গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান (পিআর ফার্ম) ভাড়া করেছে, যাতে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকদের নামে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুকের সমালোচকদের বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপ ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা জাকারবার্গের ওপর চাপ বাড়াতে থাকেন। তাকে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের পর গত সপ্তাহজুড়েই ফেসবুকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথাবার্তা চলছে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ভুয়া খবর ঠেকানোর বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা, তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির মতো বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা চলছেই।
এরই মধ্যে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, তিনি ও তার ডান হাত বলে পরিচিত শেরিল স্যান্ডবার্গের ফেসবুকে থাকা জরুরি। তিনি ফেসবুকের চেয়ারম্যান পদটি ছাড়বেন না। এমনকি শেরিলও তার জায়গা থেকে নড়বেন না। তারা ফেসবুকে রদবদল করতে কাজ করছেন।
জাকারবার্গ বলেছিলেন, ফেসবুক মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে। কিন্তু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর ফেসবুকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতার জন্য বেশি পরিচিত। ট্রাম্পের বিজয়ে এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। শুধু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নয়, এরপর ফেসবুকের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে তথ্য বেহাত হওয়ার আরেকটি ঘটনা। ফেসবুকের নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয় সাইবার দুর্বৃত্তরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভুয়া খবর, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে আস্থার সঙ্কটে ভুগছেন ব্যবহারকারীরা। তাই অনেকেই ফেসবুকের তথ্য সরিয়ে নিচ্ছেন। রিকোডের প্রতিবেদনে বলা হয়, বছর শেষে অনেকেই ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। নতুন বছরে অন্য কোনো পরিকল্পনা করেন তারা। তাই এখন ফেসবুক থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ডাউনলোড করে রাখছেন।
কিন্তু ফেসবুকের জন্য যা শঙ্কাজনক, তা কি সহজে মেনে নেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ইতিহাস কিন্তু তা বলে না!


আরো সংবাদ



premium cement