অ ভি ম ত : বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা
- কাজী আশফিক রাসেল
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
১৯৫২ থেকে ২০২০। এই সময়ে প্রতি বছরই আসে ফেব্রুয়ারি; ভাষা, গৌরব, চেতনা, আত্মত্যাগ ও আবেগের মাস। বাংলা ভাষার মর্যাদা এখন বিশ্বময়। একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেশে দেশে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় বাংলা ভাষা। ফেব্রুয়ারি শোকাবহ মাস হলেও অন্য দিকে আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ও বটে। এ মাসেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে প্রাণ দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার সার্বজনীন মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ভাষা আন্দলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমাদের এ ভাষার প্রতি আমরা কতটুকু যতœশীল ও সচেতন তা প্রশ্নসাপেক্ষ; কারণ চার দিকে চলছে আজ ভাষা বিকৃতির মহোৎসব। রুচিহীনভাবে অনেক গণমাধ্যমে বাংলা ভাষাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে; বিশেষ করে টেলিভিশন এবং এফএম রেডিওয়ের অনুষ্ঠানমালায়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনুকরণ করা আজকাল একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তাদের অদ্ভুত বাচনভঙ্গিতে বিকৃত ভাষার ব্যবহার লক্ষণীয়। কোথাও মাতৃভাষাকে এমনভাবে বিকৃত করার নজির আছে কি না, জানা নেই। অনেকের কাছে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দির সংমিশ্রণে তৈরি করা নতুন ধরনের ‘ভাষা’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আধুনিকতার নামে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং উচ্চারণে ভিন্ন ভাষার মিশ্রণ এবং শব্দের বিকৃত উপস্থাপনের প্রবণতা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের আত্মত্যাগ শুধু পাঠ্যসূচিতে কিংবা ফেব্রুয়ারিতে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করার বা করানোর চেষ্টা করতে হবে। কাজটি প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুরু করতে হবে। কারণ ছেলেবেলায় শেখা সব কিছুই মনে গেঁথে থাকে। শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণকে শিক্ষার সাথে সমন্বিত করে নিতে হবে। চিন্তার দিক থেকে আমাদের হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক। কিন্তু পরিচয়ে থাকতে হবে দেশীয় মনোভাবের সুস্পষ্ট ছাপ। আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের অন্তরে থাকতে হবে।
কোনো জাতিকে বিলীন করতে হলে সর্বপ্রথম ওই জাতির ভাষা বিলীন করে দিলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। ভাষাগত শিক্ষাটা শুরুই হয় পরিবার থেকে। একটি শিশু যদি তার পরিবারে ছোট থেকেই শুদ্ধ ভাষা ও নিজ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার শিক্ষা পায়; তাহলে পরবর্তী জীবনে তার ভাষা বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। অনেকেই মনে করেন ইংরেজি-বাংলার মিশ্রণ মানে ‘আধুনিকতা’। যদিও বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রচলনের জন্য আইন করা হয়েছে, অনেকেই বিকৃতি রোধে কথা বলছেন; কিন্তু জাতিগত আত্মসচেতনতা তৈরি না হওয়ায় আমরা ভাষার ব্যাপারে এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছি।
ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা মাতৃভাষার মর্যাদা দিতে শিখিনি। তাই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা; সমাজের সর্বস্তরে এর সঠিক প্রয়োগ, প্রচার, প্রসার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে কিছুটা হলেও ভাষা আন্দোলনের চেতনার ঋণ শোধ হবে। সময় এসেছে নতুন করে শপথ নেয়ারÑ বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত করবই।
লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা