১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ম র ণ : প্রফেসর অ্যানেমারি শিমেল

-

গতকাল ছিল প্রফেসর অ্যানেমারি শিমেলের মৃত্যুবার্ষিকী। জার্মান এই মহিলা মনীষী ইসলামের ওপর গবেষক এবং ইসলামী কবিতার অনুবাদক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিত। ড. শিমেল (১৯২২-২০০৩) অসাধারণ শিক্ষক ও বহু ভাষাবিদ। তিনি খ্রিষ্টবাদ ও ইহুদিবাদে প্রভাবিত ছিলেন না কিংবা বিভ্রান্তিপূর্ণ দৃষ্টিতে ও বৈরী উদ্দেশ্যে ইসলাম কিংবা মুসলমানদের দেখেননি।
কুখ্যাত লেখক সালমান রুশদি স্যাটানিক ভার্সেস (শয়তানিপূর্ণ কবিতা) নামের বই লেখার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। বিশ্ব মুসলিমের অনুভূতির প্রতি অ্যানেমারি শিমেল শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন এই ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভকে সমর্থনের মাধ্যমে। শিমেল মাত্র ১৭ বছরেই স্কুল-কলেজ ডিঙিয়ে বার্লিন ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্য হয়েছিলেন। সেখানে তিনি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির ‘দিওয়ান’ অধ্যয়ন করে ইসলামী সাহিত্য, দর্শন ও কৃষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯ বছর বয়সে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন মধ্যযুগের মিসর সম্পর্কে গবেষণা করে। কিন্তু নাৎসি সরকার তাকে বাধ্য করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশায় চাকরি করতে। বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তিনি ও সহকর্মীরা মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দী হন। শিমেল বন্দিশিবিরে একটি ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু করেন। সেখানে তার প্রথম লেকচার ছিল ইসলামের ওপর। সেই সময়ে সুফিদের ওপর গবেষণা করে দ্বিতীয়বার ডক্টরেট অর্জন করেন। তুর্কি ভাষায় এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তুরস্কে অধ্যাপনাকালেই ড. শিমেল মহাকবি ইকবালের দর্শন ও সাহিত্যকর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এই কবির জাবিদনামা শীর্ষক আধ্যাত্মিক কাব্য অনুবাদ করেছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমেল যোগ দেন ১৯৬৭ সালে। তিনি পড়াতেন ভারতীয় মুসলিম সংস্কৃতির বিষয়ে। মাত্র তিন বছরেই প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৯২ সালে তিনি বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর। শিমেল বলেছেন, ‘জার্মান, ইংরেজি বা তুর্কি ভাষায় লেকচার দিতে পারি। আর নোটজাতীয় কিছু হাতে রেখে লেকচার দিতে সক্ষম ফরাসি, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায়।’ আরবি, উর্দু, ফারসি, তুর্কি ও সিন্ধি ভাষার বেশ কিছু ইসলামী কবিতা সরাসরি অনুবাদ করেছেন জার্মান ও ইংরেজিতে। তার বহু বই রয়েছে ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে। ১৯৯৫ সালে জার্মানির সম্মানজনক ‘শান্তি পুরস্কার’ অর্জন তার জীবনের চূড়ান্ত স্বীকৃতি। তখন জার্মানির প্রেসিডেন্ট প্রশংসাবাণী পাঠ করেছিলেন। উর্দু ভাষা ও ইকবালের বিষয়ে তার অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে হিলাল-ই-ইমতিয়াজ (মর্যাদাপূর্ণ নতুন চাঁদ) খেতাবে। হ
Ñ মীযানুল করীম


আরো সংবাদ



premium cement