২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

-

১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। তার নামে এলাকার নাম দেয়া হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর। তিনি ১৯৫৩ সালে পাতারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট স্কুল থেকে সম্পন্ন করলেন ম্যাট্রিকুলেশন বা এসএসসি। ১৯৬৬ সালে বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন উচ্চমাধ্যমিক স্তর। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। কমিশন লাভের পর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেলেন সেনাবাহিনীতে। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। পেশায় দ্রুত সাফল্য সত্ত্বেও জাহাঙ্গীর কিন্তু সর্বক্ষণ বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের অন্যায় আচরণের কথা ভাবতেন। চিন্তা করতেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথাও। ১৯৭১ এসে একসময় কড়া নাড়ল কালের দরজায়। ২৫ মার্চের কালরাতের বর্বরতা গ্রাস করল পূর্ববঙ্গের মানুষকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। ৩ জুলাই সেনাবাহিনী থেকে পালালেন জাহাঙ্গীর। শিয়ালকোটের নিকটবর্তী সীমান্ত নদী মুনাওয়ার তায়ী অতিক্রম করে পৌঁছলেন কাছের বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে। সেখান থেকে দিল্লি ও কলকাতা হয়ে একদিন পা রাখলেন বাংলাদেশের রণাঙ্গনে। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পোস্টিং হলো ৭ নম্বর সেক্টরের মাহাদিবপুর সাব সেক্টরে। অল্প ক’দিনেই তিনি অবতীর্ণ হলেন সম্মুখ সমরে। একের পর এক আক্রমণ করলেন পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত কানসাট, আরগারার হাট, শাহপুর। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর। ১১ ডিসেম্বর। মহানন্দা নদী পার হয়ে শহরের দুর্ভেদ্যপ্রায় পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিটি আক্রমণ করল মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বাহিনী। হামলার জবাব বেশ ভালোভাবেই দিলো পাকিস্তানিরা। যুদ্ধ চলল। ১২ ডিসেম্বর। ১৩ ডিসেম্বর। ১৪ ডিসেম্বর, সকাল ১০টা। যুদ্ধ তখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। জাহাঙ্গীর হঠাৎ লক্ষ করলেন, সামনেই একটি বাড়ির দোতলায় অবস্থানরত পাকিস্তানি মেশিনগান পোস্ট থেকে অনবরত গুলি আসছে। এই পোস্টটি দ্রুত ধ্বংস না করা গেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখল করা অসম্ভব। কিন্তু এটা যে ভীষণ দুরূহ কাজ! মৃত্যুঝুঁকি প্রায় শত ভাগ। জাহাঙ্গীর একক সিদ্ধান্ত নিলেন। বাঁ হাতে এসএমজি এবং ডান হাতে একটা গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে নিজেই এগিয়ে গেলেন মেশিনগান পোস্টটির দিকে। এগিয়ে যেতে যেতে একসময় হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন তিনি। তারপর গ্রেনেডটি লক্ষ্যে ছুড়লেন অব্যর্থভাবে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলো তৎক্ষণাৎ। উড়ে গেল পোস্টটি। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই পাকিস্তানিদের গুপ্ত অবস্থান থেকে একটি গুলি এসে লাগে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে। সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল তার নি®প্রাণ দেহ। আজ শাহাদতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এই বীর যোদ্ধাকে।
হ আরিফ নজরুল

 


আরো সংবাদ



premium cement