২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ম র ণ : এস এম শফিউল আজম

-

অসাধারণ প্রতিভাতূল্য এস এম শফিউল আজম ছিলেন। সাবেক পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য। দক্ষ সিএসপি অফিসার হিসেবে তার খ্যাতি ও পরিচিতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ৪৬ বছর প্রশাসনের উঁচু পদে থাকায় তাকে সব সময় জাতীয় জীবনের দৃশ্যপটে দেখা গেছে। ১৯২৩ সালে শফিউল আজমের জন্ম চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএ পাস করেন। ১৯৪৮ সালে এলএলবি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৪৯ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন।
শফিউল আজমের কর্মজীবন ঘটনাবহুল। এমএ পাস করে ঢাকা কলেজে ১৯৪৫ সালে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু পিতার পরামর্শে বৃত্তির সুযোগ না নিয়ে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করে মাত্র ২০ বছরেই সিভিল সার্ভিসের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন। ১৯৭০ সালে তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট সেক্রেটারি এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত একটানা ১০ বছর শিল্প, বাণিজ্য, পাট, বস্ত্র, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সত্যিকার অর্থে bureaucrat বলতে যা বোঝায়, মরহুম শফিউল আজমের দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব, কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কথাবার্তা, আচরণ ও বেশভূষা সেরূপ ছিল। তাই তাকে bureaucrat দের ‘‘Model’’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রক হিসেবে শফিউল আজম উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দানের মাধ্যমে এ দেশের শিল্প ও বাণিজ্যক্ষেত্রে একধরনের বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটান। ১৯৬৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ৪৫ জন এমবিবিএস ডাক্তারকে যুক্তরাজ্যে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ঢাকা পিজি হসপিটাল তার অন্যতম কীর্তি। ১৯৬৪ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রক হিসেবে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থার (EPIDC) চেয়ারম্যান হিসেবে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৬৬ সালে তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান উদ্বৃত্ত চিনি উৎপাদনে সক্ষম হয়।
চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং স্টিল মিলসহ বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। ১৯৮২ সালে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে নতুন শিল্পনীতি প্রণয়নসহ বেসরকারি খাতে নতুন যুগের সূচনা করেন। ব্যাংক, শিল্প কারখানা, গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপনে খুব সক্রিয় ছিলেন। সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রী হিসেবে তার ধীশক্তি, দক্ষতা ও সততা কিংবদন্তিতুল্য।
শফিউল আজম দেশের উন্নয়নকে তার মূল কাজ বলে বিশ্বাস করতেন। নীতির ব্যাপারে ছিলেন আপসহীন ও স্পষ্টবাদী। দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা সব সময় মেনে চলতেন। তিনি ছিলেন লক্ষ্য সাধনে অনমনীয়, এমন একজন বড় মাপের প্রশাসক। ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলতেন। প্রতিদিন করতেন প্রচুর পড়াশোনা। কাউকে মিথ্যা আশ্বাস দিতেন না। তার পিতৃভক্তি ও মাতৃভক্তি ছিল অনুসরণীয়।হ
এস এম শোয়েব খান


আরো সংবাদ



premium cement