২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দারিদ্র্যবিমোচন

-

দারিদ্র্যবিমোচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তর আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। কোনো দেশে দারিদ্র্যবিমোচন করা কোনো জটিল বিষয় নয় যদি সে দেশে দারিদ্র্যবিমোচনের ইসলামী মডেলটি অনুসরণ করা হয়। এ মডেল অনুসৃত হলে সমাজে ধনীবৈষম্য কমিয়ে দরিদ্রদের হাতে টাকা পৌঁছানো যায়, যদি দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ না করা হয়। একই সাথে যদি এ মডেল বাস্তবায়ন করে ধনী লোকেরা দরিদ্রদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা না করে। দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধারণত বৈষম্যপূর্ণ হয়ে থাকে, তাই কোনো প্রকারেই সে সমাজে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হয় না। পশ্চিমা উন্নয়ন মডেল অনুস্মরণকারী পুঁজিবাদী সমাজে এটাই হয়ে থাকে। সে সমাজে ধনীরা যা-ই জনকল্যাণমূলক কাজ করুক না কেন, তা লোক দেখানো এবং কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে করে থাকেন। ইসলামের মূলনীতি হলো, ধনী লোকেরা দরিদ্রদের এমনভাবে দান-খয়রাত করবেন, যেন ডান হাতে দান করলে বাম হাতও তা টের না পায়। এ ছাড়া ইসলামী মডেলে দারিদ্র্যবিমোচনের মূল প্রতিবাদ্য হলো জাকাত। ধনীদের সম্পদে জাকাত স্রষ্টার পক্ষে দরিদ্রের হক। ধনীদের সম্পদে দরিদ্রদের এ অধিকার আদায় করা ধনীদের অবশ্য কর্তব্য, যা ইসলামী পরিভাষায় ‘ফরজ’। এই ফরজ আদায় করে ধনীরা বিনিময়ে দরিদ্রদের কাছ থেকে একটি ধন্যবাদও দাবি করতে পারে না; কৃতজ্ঞতা তো দূরের কথা। বিশ্বাসীদের সমাজে এই ফরজ আদায় করে ধনীরাই উপকৃত হন। কারণ এই পদ্ধতিতে তাদের সম্পদ পবিত্র বা হালাল ও বিশ্বজগতের স্রষ্টার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
ইসলামের এই মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি দেখা যায়, কোনো দেশে এমনভাবে দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে যে, সে দেশে আর জাকাত গ্রহণ করার মতো কোনো দরিদ্র লোক নেই, তবে ধনীদের ওপর থেকে দরিদ্রদের এ হক বিলুপ্ত হয়ে যায় না। জাকাত গ্রহণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে গেলে সে ব্যক্তি বা পরিবারের ধনীদের সম্পদে আর হক থাকে না। এ পরিস্থিতিতেও সে দেশের ধনীদের ওপর থেকে জাকাত প্রদানের বাধ্যবাধকতা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে না। সে পরিস্থিতিতে ধনীদের দেয়া জাকাতের অর্থ রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা হয় এবং সে অর্থ দেশের সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি ভিনদেশের দারিদ্র্যবিমোচনে ব্যবহৃত হয়। এটা সৌদি আরব বর্তমানে করছে। সুদ ইসলামে হারাম এবং প্রকৃতিগতভাবেই নিপীড়নমূলক। এ কারণে বাংলাদেশে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রে বিভিন্ন এনজিও ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা সফলতার মুখ দেখেনি। এ পদ্ধতি সমাজে দারিদ্র্যকে চিরস্থায়ী রূপ দিচ্ছে। অনেক দরিদ্র লোক ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে এ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে গৃহস্থালির তৈজসপত্র থেকে শুরু করে ভিটেমাটি পর্যন্ত খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের কেউ কেউ ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে কিংবা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে।
এনজিওদের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমকে পাশ্চাত্য জগৎ যতই প্রশংসা করুক না কেন তা দারিদ্র্যবিমোচনে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে না এবং আজ পর্যন্ত তা হতে পারেনি। অথচ পশ্চিমারা দারিদ্র্যবিমোচনে এনজিওভিত্তিক ঋণ প্রবর্তকদের কাউকে নোবেল শান্তি পুরস্কার, কাউকে নাইট উপাধি এবং এ ধরনের ঋণের প্রতি পক্ষপাতমূলক গবেষক অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। আর পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত দেশীয় অর্থনীতিবিদেরা তাদের মতো করে আলোচনা-পর্যালোচনা ও সমালোচনা করে তাদেরকে নন্দিত করেছেন। অথচ দারিদ্র্যবিমোচনের ইসলামী মডেলটি তারা মোটেও তলিয়ে দেখেননি বা এসব আলোচনা-পর্যালোচনায় দারিদ্র্যবিমোচনে কার্যকর ইসলামী মডেলটির উল্লেখও করেননি এবং করেনও না। সে কারণে দারিদ্র্যবিমোচনের ইসলামী মডেল তাদের অধীত বিষয় বলে মনে হয় না।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে ইসলামী মডেলের কার্যকারিতা সম্পর্কে ক’টি বিশেষজ্ঞ মন্তব্য উল্লেখ করা যায়। দারিদ্র্যবিমোচনে জাকাত মডেল বাস্তবায়ন করা হলে দেখা যাবে "Dooms day will not approach unless each of you is rich. In addition, if you then go to anyother person with alms to give over, you will be told that he has already enough wealth with him. A time will come when persons with gold and silver bags will move out in search of a poor man to receive it.”(Hadith: Umdat al-Qari, Vol.II. p.181).. তখন একদা-দরিদ্ররা জাকাত বা খয়রাত দানেচ্ছু ধনী লোকদের বলবেন, “If you had come yesterday, I would have accepted. But today I have absolutely no need.” (Hadith : Umdat al-Qari, Vol.II. p.181). G cÖKv‡i “the springs of wealth may flow to enable the people lead a peaceful and tranquil life, till every individual may get sustenance in abundance. The production will increase and there will be fair distribution of wealth under the just system of Islam. Then there shall be none deserving poor to ask for the Poor-due (Az-Zakah). Thereafter the Poor-due will be spent on the prisoners, people who owe debts, those who come out in the way of Allah and the wayfarers.” (Al-Qardawi, Allama Yusuf, 1997. Economic Security in Islam, Rendered into English by Muhammad Iqbal Siddiqi, Islamic Book Service, Delhi, P.198). জাকাত মডেল বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ এ জাতীয় ফলাফল ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত; ‘ইসলামের পঞ্চম খলিফা’ হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের (হিজরি ৬১-১০১) সময় এটি প্রমাণিত হয়েছে। জাকাত মডেল কার্যকর করার ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তখন জনগণের আর্থিক অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, সে রাজ্যে জাকাত নেয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।
অধিকন্তু ইসলাম পার্থিব জীবনে মানুষের উন্নতিকে আবশ্যিক করা এবং অপচয় পরিহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। “Islam has made it obligatory for the Muslims to prosper in the material life and avoid unnecessary expenditure. That is why it provides safeguards against wastage of wealth on liquor, luxury, vain games and like pastimes in order to fulfill evil desires of mind and body. Islam prohibits its followers from the commission of crimes, and adherence to sins; from involving themselves in quarrels and disturbances. It exhorts to increase their national income.” (Al-Qardawi,1997. P.185). দেখা যাচ্ছে, ইসলামী মডেলে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলে বিবেচিত। এ কারণে দেশ পরিচালনাকারীদের ক্ষমতা গ্রহণ ন্যায্য ও বৈধ হতে হয়, যেন দেশে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বা সঙ্ঘাত দেখা না দেয়Ñ যেরূপ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে চলছে। এরূপ পরিবেশে না ইসলামী মডেল বাস্তবায়ন সম্ভব, না অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
নবী করিম সা: বলেছেন, “Any work performed with good intentions, in accordance with the injunctions of Islam, it turns into worship itself.” (Hadith). মহান সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর অনুশাসনের প্রতি অবিচল আস্থা ইসলামী মডেল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত এবং তা স্রষ্টার ইবাদতস্বরূপ। “Against this, it has been [quite wrongfully] mentioned in the Torah: Poverty is eternal and poverty can never be eliminated from the earth.” (Al-Qardawi, 1997, P.192.). দারিদ্র্যবিমোচনের পশ্চিমা মডেল এবং এনজিওদের মডেল সে ধর্মগ্রন্থের এই দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বহু কাঠখড় পুড়িয়েও এ ধরনের মডেলের ভিত্তিতে অদ্যাবধি কোনো দেশে, এমনকি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দারিদ্র্যবিমোচন করা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো অস্থির ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে তো এটা সম্ভব নয়ই। হ
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ভাইস প্রিন্সিপাল, কুমিল্লা মহিলা সরকারি কলেজ

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল