২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ম র ণ : রাজনীতিক অলি আহাদ

-

২০ অক্টোবর ছিল প্রখ্যাত রাজনীতিক অলি আহাদের মৃত্যুবার্ষিকী। এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে যে চারজন নেতা সোচ্চার হয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন, অলি আহাদ তাদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য সরকার ২০০৪ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। সামরিক-বেসামরিক স্বৈরাচার-দুঃশাসকের বিরুদ্ধে তার বজ্রকণ্ঠ সদা উচ্চকিত ছিল। সুবিধাবাদ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। নীতিহীন ক্ষমতার রাজনীতি তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। দেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে অসৎ ও ক্ষমতালোভীদের সাথে আপস করেননি।
অলি আহাদের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৭৩ সালে। সে দিনই আমাকে বললেন, ‘ছাত্রদের প্রথম কাজ লেখাপড়া করা। লেখাপড়ার ফাঁকে ছাত্ররাজনীতি করতে চাইলে রাজনীতির বই, একাধিক দৈনিক পত্রিকা মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে ছাত্ররাজনীতির আমি ঘোর বিরোধী। দেশকে যদি ভালোবাস, তবে তোমাকে সময় বের করে কাজ করতে হবে। জ্ঞান আর ত্যাগ না থাকলে দেশকে কিছু দেয়া যায় না, সমাজও কিছু পায় না।’ ছাত্রজীবন শেষ করে এ নেতার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তার সাথে ছিলাম। বিদেশী ম্যাগাজিন, বিশেষত টাইমস ও নিউজ উইক সাময়িকীর তিনি নিয়মিত পাঠক ছিলেন। বই তার সংগ্রহে ছিল এবং উল্লেখযোগ্য বইগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হতো। হরতালের দিন হেঁটে চলতেন, হরতাল শেষ হওয়ার এক মিনিট আগেও রিকশায় চড়তেন না। তার জীবন ছিল খুবই সাদামাটা। হরতালের দিন আমরা অফিসে একসাথে সাধারণ খিচুড়ি এবং মাঝে মাঝে লবণ দিয়ে শুধু আলু সিদ্ধ খেয়েছি অনেক দিন।
অলি আহাদ ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকম ক্লাসে ভর্তি হন। আইএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার জন্য তিনি হাজী মুহাম্মদ মহসিন ট্রাস্টের বৃত্তি লাভের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনে প্রথম কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। বিভিন্ন সরকারের আমলে তিনি প্রায় এক যুগ কারাবরণ করেছেন। আত্মগোপন করে থেকেছেন আরো কয়েক বছর। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল প্রর্যন্ত অলি আহাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কারারুদ্ধ হন বারবার। এরশাদের আমলে ছয়বার গ্রেফতার হয়ে সর্বমোট ৩৫৭ দিন জেলে ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তাকে দু’বার আটক করা হয়। ’৪৯ সালের ২০ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হন। ’৫০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, ’৫২ সালের ৭ মার্চ, ’৬৯-এর ৩১ জানুয়ারি, ’৭৪-এর ৩০ জুন এবং তৎপরবর্তী প্রতিটি আমলেই কারাগারে আটক ছিলেন তিনি। অলি আহাদের বই জাতীয় ‘রাজনীতি ৪৫ থেকে ৭৫’ আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে এক নির্ভেজাল দলিল। তিনি ‘ইত্তেহাদ’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন অনেক দিন। অলি আহাদ ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক, ১৯৫০ সালের গণতান্ত্রিক যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক ও ১৯৫৫-৫৬ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৫৭ সালের আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনের প্রাক্কালে মওলানা ভাসানীর নির্দেশে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করায় অলি আহাদের সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে আটজন আইন পরিষদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। দল থেকে বেরিয়ে এলেন মওলানা ভাসানী। প্রতিষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। অলি আহাদ হলেন যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তীকালে অলি আহাদ জাতীয় লীগের ও বাংলা জাতীয় লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শেষে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সভাপতি ছিলেন। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement