২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে আলোচনা

-

যার ঘরে কিশোর সন্তান আছে, তিনিই জানেন, কিশোরদের নিয়ে তার চিন্তা কতটা সীমাহীন। ভালো-মন্দ, কুপ্রভাবের ছোঁয়ার ভয় ইত্যাদি সব দিকে দুশ্চিন্তা হতেই থাকে। তার ওপর যদি এ ধরনের গ্যাংয়ের ছোবল থাকে, তখন অভিভাবকেরা দিশাহারা হয়ে যেন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকেন। কেননা, এ বয়সে ভালো বা খারাপ বীরত্ব দেখানোর কিছুটা প্রবণতা থাকে। তার ওপর কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে, ভালোর চেয়ে মন্দপথে শক্তি সঞ্চয় করতে গিয়ে আবার গ্যাংয়ের সৃষ্টি হয় এবং খারাপ পথে ধাবিত হয়। তাই এসবের সমূলে নির্মূল হওয়া দরকার। না হয়, একটার পর একটা গ্যাং হতেই থাকবে।
আমাদের অনেকেরই স্মরণে আছে, সাত-আট বছর আগে পুরান ঢাকার একটি থানায় কিশোর সন্তানকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় এবং নির্দোষ সন্তানকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে না পেরে বাবা বাসায় এসে হার্ট অ্যাটাকে মারাই গেলেন। কী মর্মান্তিক ঘটনা! নিজেকে আটক করলেও হয়তো বাবা এতটা মর্মাহত হতেন না। সন্তানের জন্য মমতা পরিমাপ করা যায় না।
কিশোর বয়সটি দোষ, গুণ, ভুল এবং সম্ভাবনার উদীয়মান একটি পর্যায়। সব অভিভাবকই ঘুমিয়ে থাকেন এসব কিশোরের অন্তরে। এরা ভুল করতে পারে, কিন্তু ভুল করার জন্য যদি উৎসাহ বা আনুকূল্য পায়, তাহলে এর পরিণতি হয় মারাত্মক এবং জীবনের জন্য বিপথগামী। কোনো খারাপ অভিভাবকও তার সন্তানের কুৎসিত বা খারাপ ভবিষ্যৎ কামনা করেন না। সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো সন্তানের পেছনে লেগে থাকেন। খারাপ সংস্রব থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিশোররা এক দিনে বা একাকী অপরাধী হয়ে ওঠে না। কেউ না কেউ এদের নষ্টের মূলে থাকে। সরকারি দলের আনুকূল্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্রয়; এদের দিয়ে সুবিধা লাভ করা ইত্যাদি এদের নষ্ট করার মূল উৎস। এ ছাড়া এদের নির্বিঘেœ গ্যাং চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এরা সমাজ এবং পরিবেশের জন্য একটি উৎপাত বৈকি! ভালো কিশোরদের মুক্ত পরিবেশ দিতে এসব নষ্ট কিশোর, গ্যাং এবং এদের নষ্টকারীদের কঠোর হাতে দমন করা রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব। গত ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর স্টাফ কলেজের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিভাবকদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা কেন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখেন না? সন্ধ্যায় কেন সন্তানেরা বাইরে যায়?’ জবাবে অভিভাবকেরা প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করলেন। তাহলে সমাধান কোথায়? সন্তানদের গৃহবন্দী করে রাখতে হবে? তারা মুক্ত পরিবেশ পাবে না?
কারণ অভিভাবকেরা খেয়াল না রাখলে কোটি কোটি কিশোর সুপথে থাকে কিভাবে? কিশোর অপরাধ শুধু সন্ধ্যার পর হয় তা নয়, বরং কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে নিজেকে এবং নিজের কিশোর সন্তানকে কিভাবে রক্ষা করবেন, তা নিয়েই অভিভাবকেরা রাত-দিন উদ্বিগ্ন থাকেন এবং খেয়াল রাখেন।
অন্যের বখে যাওয়া কিশোর সন্তানকে ‘পথে’ আনা তো সহজ ব্যাপার নয়; বরং আল্লাহ না করুন, নিজের সন্তানও বখে গেলে তাকে পথে আনা অভিভাবকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, অনেক অভিভাবক এমন সন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার অনেক নজির আছে। তাই এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যথাযথ হস্তক্ষেপ অত্যাবশ্যক। তাদেরও তো কিশোর সন্তান রয়েছে। তবে কোনোভাবেই যেন নিরীহ, নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়। এসব অপরাধীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। কিন্তু এদের দাপট এবং কুকীর্তি মারাত্মক হামলা, টিজ, দ্রুত বাইক চালিয়ে রাস্তার মানুষকে সন্ত্রস্ত করা, চাঁদাবাজি, মাদক, স্লোগান দেয়া ইত্যাদি এদের কাজ। কিশোর অপরাধ দীর্ঘ সময়ের অপরাধ সৃষ্টি করে। তাই নির্মোহভাবে চেষ্টা করলে এটি সহজে দমন করা সম্ভব এবং দমন করতেই হবে। না করে উপায় নেই। যারা নষ্ট হয়ে গেছে তারা যেন অন্যদের নষ্ট না করতে পারে। এতে অভিভাবকগণ, সমাজ ও দেশ শান্তি পাবে। এ নিয়ে বিতর্ক করে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।
সিদ্দিক বিন শফিকুল্লাহ


আরো সংবাদ



premium cement