২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : এই স্বীকৃতির আইনি বৈধতা প্রসঙ্গ

-

২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের সভায় হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ইশতেহারও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এটাকে আইনি বাধ্যবাধকতায় আনার জন্য সংসদে যেমন বিল উত্থাপন করা হয়নি, তেমনি এ বিষয়ে গেজেটও প্রকাশ করা হয়নি। রাষ্ট্্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে তাদের পরিচয় ‘হিজড়া’ বা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ঘোচাতেও কার্যকর হবে এ স্বীকৃতি। আইনটির সাংবিধানিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় তারা রাষ্ট্্রীয় নাগরিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ একজন নাগরিক হিসেবে তার সকল অধিকার রয়েছে রাষ্ট্্েরর কাছে। ১৫ অনুচ্ছেদে রয়েছেÑ একজন নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান রাষ্ট্্র নিশ্চিত করবে। আর ২৭, ২৮, ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার অধিকার রয়েছে সব মৌলিক অধিকার লাভ করার। সে হিসেবে অন্য সবার মতো হিজড়া জনগোষ্ঠীও পারিবারিক সম্পত্তি অধিকার রাখে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত।
সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে। চাকরি, ব্যাংক ঋণ, সম্পত্তির অধিকার দেয়ার কথা শোনা গেছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় তারা অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠীকে মূল স্্েরাতধারায় ফিরিয়ে আনতে সমাজসেবা অধিদফতর ২০১২ সালে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ঋণ ও ভাতা প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কিন্তু পুঁজিস্বল্পতার কারণে এবং প্রশিক্ষণ পরবর্তী মনিটরিং না থাকায় তারা প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারছে না। এ কর্মসূচির আওতায় গত চার বছরে ২০০ হিজড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র পাঁচজন কর্মমুখী হয়েছেনÑ এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। দুঃখের বিষয়, বাকিরা যৌন পেশা, বাঁধাই ও ‘ছল্লা’য় (চাঁদাবাজি) ফিরে গেছে। এই জনগোষ্ঠী আইনি স্বীকৃতি পেলে পাওয়া যাবে কাজের বৈধতা ও মৌলিক অধিকার। যত দিন আইনি স্বীকৃতি পাওয়া যাবে না, তত দিন তারা পিছিয়ে থাকবে।
বঞ্চিত জীবন তাদের। মমতাময়ী মা পর্যন্ত সমাজের ভয়ে তার হিজড়া সন্তানটিকে নিজের মমতা থেকে একসময় দূরে ঠেলে দেন। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে জন্ম নেয়া সন্তানটি ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সমাজ ও পরিবার থেকে। বঞ্চিত হয় রাষ্ট্্রীয় সব মৌলিক অধিকার থেকেও। তাই তারা বেছে নেয় ‘অন্য এক জীবন’। তাদের ব্যাপারে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আজো নেতিবাচক। তাই সমাজের প্রত্যেক স্তরে, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তারা চরম অবহেলা আর বিড়ম্বনার শিকার। আদর-ভালোবাসা-গুরুত্ব-মর্যাদা তারা পায় না, বরং অমর্যাদা-অবহেলার শিকার হয়ে তারা একপর্যায়ে বাঁচার তাগিদে এবং রাষ্ট্্েরর দায়িত্বহীনতার কারণে অপরাধী হয়ে ওঠে।
প্রচলিত আইনে সম্পত্তির বণ্টন নারী ও পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘তৃতীয় লিঙ্গ’কে সরকার স্বীকৃতি দিলেও পরিবারের ছেলে ও মেয়ের পাশাপাশি একজন হিজড়া কী পরিমাণ সম্পত্তি পাবেন তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা লিঙ্গের ভিত্তিতে রাষ্ট্্র কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। সবক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে, তাদের অধিকারের আইনগত ভিত্তি প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
লেখক : ওমর ফারুক, সাংবাদিক ও গবেষক

 


আরো সংবাদ



premium cement
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে মারামারি, মাঠ ছেড়ে উঠে গেল সাদা-কালোরা কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল