২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইতিহাসের কাশ্মির

বহমান এই সময়ে
-

পর্ব : ০২
বিশ্বপরিস্থিতির পরিবর্তনের সূত্র ধরে ১৯২৫ সালেই দেখা দিলো এথনোসেনিট্রজম ও ফ্যাসিজমের উত্থান। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার সদস্যের কু ক্লাক্স ক্লান ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্চ করল। ইতালিতে মুসোলিনি নিজেকে করে তোলেন ডিক্টেটর। জার্মানিতে হিটলার প্রকাশ করেন তার লেখা বই ‘মেইন ক্যাম্ফ’। এতে ঘোষণা দেন নাৎসি পার্টির এবং প্রতিষ্ঠা করেন এসএস। আর ভারতে কেবি হেডগেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন ইউনিফর্ম পরা প্যারামিলিটারি ফোর্স ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ (আরএসএস), এগুলো করা হয়েছিল হিটলার ও মুসোলিনির তথাকথিত আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে।
কাশ্মির বিভাজিত হলো হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ১৯৪৭-উত্তর সন্ত্রাসের পথ ধরে। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডে নাৎসিদের আগ্রাসনের পথ ধরে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন আরএসএস প্রধান এম এস গোলওয়ালকার একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লিখেন : “We, Hindus, are at war at once with the Moslems.” ” সেখানে তিনি আরো ঘোষণা করেন : “ever since that evil day, when Moslems first landed in [India], right up to the present moment the Hindu Nation has been gallantly fighting on to shake off the despoilers.” এ ছাড়া তিনি নাৎসি জার্মানির প্রশংসা করেন এবং দুঃসাহসের সাথে ‘ন্যাশন আইডিয়া’-কে যথার্থ উপজীব্য করে তুলে তিনি ‘জার্মান রেইস প্রাইড’-কে যাঞ্চনার বিষয় বিবেচনা করে তিনি লিখেন : “To keep up the purity of the race and its culture, Germany shocked the world by her purging the country of the Semitic races– the Jews. Race pride at its highest has been manifested here. Germany has also shown how well-nigh impossible it is for races and cultures, having differences going to the root, to be assimilated into one united whole, a good lesson for us in Hindustan to learn and profit by.” এ দিকে কাশ্মিরি মুসলমানেরা ডোগরা রাজাশাসিত আমলে রাজ্যে দুর্বল ও নিস্তেজ হয় পড়ে। ১৯৪১ সালে প্রিন্সলি স্টেট জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে ৮০ শতাংশ লোকই ছিল মুসলমান। রাজনীতি বিজ্ঞানী সুমন্ত্র বসু লিখেছেন, ‘এর পরও স্থানীয় মুসলমানদের ফ্রিন্সলি স্টেটের সামরিক বাহিনীতে অফিসার করার পথে বাধা সৃষ্টি করা হতো এবং বেসামরিক প্রশাসনের কোনো অফিসার মুসলমান বলতে ছিল না।’ সুমন্ত্র বসু সে সময়ের কাশ্মিরি হিন্দু সক্রিয়বাদীদের উদ্ধৃত করেছেন, যারা বলেছেনÑ ‘তখন সেখানে মুসলমানদের দরিদ্রাবস্থা ছিল খুবই মর্মান্তিক। কম্বল গায়ে খালি পায়ে থাকা একজন কাশ্মিরি কৃষককে দেখাত ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকের মতো।... বেশির ভাগই ছিল ভূমিহীন, কাজ করত অনুপস্থিত কোনো জমিদারের ভূমিদাস হিসেবে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাফল্যের সূত্রে ১৯৪৭ সালে বিটিশ সাম্রাজ্যের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে উপমহাদেশ মুক্ত হলো। তখন আরএসএস ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে। তখন এর সদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখ। ১৯৪৭ সালে জম্মু ও কাশ্মিরের মহারাজা হরি সিংকে সিদ্ধান্ত নিতে হলোÑ এই পিন্সলি স্টেটটি স্বাধীন থাকবে, না মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে যোগ দেবে, না হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে যোগ দেবে। ১৯৪৭ সালের ১৭ অক্টোবর গোলওয়ালকার মহারাজা হরি সিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে ভারতে যোগ দিতে চাপ দেন। গোলওয়ালকারের সফরের আগে ডোগরা বাহিনী ও আরএসএস একসাথে মিলে রাষ্ট্রীয় সমর্থনে জম্মু-কাশ্মিরে এক মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালায়। কাশ্মির উপত্যকার চেয়ে জম্মুর পাহাড়ি এলাকায় মুসলমানেরা ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ। সেপ্টেম্বরের দিকে সেখানকার মুসলমানদেরকেই টার্গেট করা হয় জাতিগত নিধনের জন্য। ডোগরা রাজার রাষ্ট্রীয় বাহিনী এই নিধনযজ্ঞে ছিল সামনের সারিতেÑ এ কথা জানা যায় ইতিহাসবিদ ইলিয়াস চাত্তার লেখায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী আরএসএস বাহিনীর মতো স্থানীয় স্বয়ংসেবকদের অস্ত্রও সরবরাহ করে। ইলিয়াস চাত্তা দাবি করেন, ডোগরা মহারাজা কাশ্মিরি মুসলমান নিধনের এই দুষ্কর্মে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিছু কিছু রিপোর্ট মতে, হরি সিং ডোগরা ব্যক্তিগতভাবে এই মুসলিম নিধনযজ্ঞে সব বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
ভেদ বাসিন ছিলেন এই নিধনযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী। পরে তিনি সাংবাদিক হয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা ও সম্প্রদায়গত শান্তি রক্ষার পরিবর্তে মহারাজার প্রশাসন সহায়তা করেছে খুনিদের, এমনকি অস্ত্র সরবরাহ করেও। এটি ছিল আরএসএস সক্রিয়বাদীদের পরিকল্পিত গণহত্যা। আরএসএস প্রধান গোলওয়ালকারের সাক্ষাতের এক সপ্তাহ পর মহারাজা হরি সিং ২৬ অক্টোবর সম্মত হন ভারতের সাথে যোগ দিতে। কিন্তু এই হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। ইলিয়াস চাত্তা লিখেছেন : ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার জম্মুতে অনেক বাস পাঠায় শরণার্থীদের শিয়ালকোটে নিয়ে আসতে। ডোগরা সৈন্যরা ও আরএসএস এই বাসবহরে হামলা চালিয়ে বেশির ভাগ বাসযাত্রীকে হত্যা করে এবং মহিলাদের নিয়ে যায় অপহরণ করে।’
শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ধ্বংসাত্মকভাবে ছিল খুবই বেশি। ভেদ বাসিন লিখেছেন, ‘সন্দেহ নেই তাদের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।’ রাজনীতি বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার সিডেন বলেন, ‘হতে পারে ২০ হাজার থেকে এক লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে লন্ডনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টাইম পত্রিকা অভিযোগ করে, দুই লাখ ৩৭ হাজার মুসলমানকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়া হয়।
এই গণহত্যা থেকে একটি সত্য বেরিয়ে আসে, এই সাম্প্রদায়িক হোলি খেলার হাত থেকে সেদিন একটি পরিবারও বাঁচতে পারেনিÑ লিখেছেন সাংবাদিক জাফর সাদেক। ১৯৪৭ সালের এই ঘটনা স্থায়ীভাবে পাল্টে দিলো জম্মুর মুসলমানদের চিন্তা-ভাবনাকে। এদের বেশির ভাগ হয় হত্যার শিকার হয়েছে অথবা ঠেলে দেয়া হয়েছে বিভাজনের অপর পাশে। অনেককে জান বাঁচাতে পালিয়ে যেতে হয়েছে। পেছনে ফেলে রেখে গেছে আতঙ্কিত ক্ষুদ্র এক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে।
১৯৪৯ সালে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্ট উইলিয়াম বার্টান ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ সাময়িকীতে লিখে আরএসএস নামের মিলিটারি গ্রুপকে সতর্ক করে দেন। তিনি লিখেন “atrocities committed” during the “wholesale expulsion of Moslems from the Jammu province.” ” বার্টন আরো লিখেন : “One wonders whether the Indian Government has considered the military implications of the retention of Kashmir in India. With half or more of the population hostile… it would have to maintain an army of occupation.”|
১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর কাশ্মিরকে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার চার দিন আগে এই অঞ্চল নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের প্রথম যুদ্ধটি হয়। সেই থেকে দক্ষিণ-এশীয় এই প্রতিবেশী দেশ দু’টি অব্যাহতভাবে জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ চালিয়ে আসছে, যদিও এটি ছিল ক্রাউন জুয়েল। ১৯৬৫ সালে কাশ্মির নিয়ে যুদ্ধে সাত হাজার সৈন্য নিহত হয়। এ যুদ্ধে কী পরিমাণ বেসামরিক লোকক্ষয় ঘটে, সে হিসাব কেউ রাখেনি। এক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। এর পরও আরএসএসের গোলওয়ালকার ছিলেন পরমানন্দে।
১৯৬৬ সালের এক ইশতেহারে গোলওয়ালকার ঘোষণা দেন : “The nation’s pulse has been quickened by an unprecedented upsurge of patriotic pride and self-respect. Verily this is the first and the foremost lesson that the war has taught us.” এই যুদ্ধকে রাম ও এক অশুভ শক্তির যুদ্ধের সাথে তুলনা করে তিনি অভিমত দেনÑ “It is inevitable to annihilate the support– the evil persons– if we have to do away with evil.” তিনি এ-ও উল্লেখ করেন, ‘এর জন্য পাকিস্তানের লাহোর ও অন্যান্য স্থানে আমাদের পতাকা তুলে পাকিস্তানকে বিলুপ্ত করে ভারতে মিশিয়ে দিতে হবে। ... কারণ, স্মরণাতীতকাল থেকে এসব এলাকা ছিল আমাদের মাতৃভূমির অংশ। মনে হচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সাফল্যের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। তখন আমরা শত্রুর দখলে থাকা এসব এলাকা স্বাধীন করতে পারব।’
বিগত সাত দশক ধরে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষেদে কাশ্মির সমস্যার সমাধান প্রশ্নে নিয়মিত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুধু কথার যুদ্ধ চলেছে। আর এই কথার যুদ্ধের সূচনা আসলে হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তখন নয়াদিল্লি জাতিসঙ্ঘে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদে একটি তারবার্তা পাঠায়। তার বার্তায় জাতিসঙ্ঘ সনদের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযোগ সরবরাহ করা হয় ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি। এই দিনে আন্তর্জাতিক সমাজ কাশ্মির সমস্যার বিষয়টিতে জড়িত হয়, যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের জন্মের ৭৩ দিন পর। এ দুই দেশের মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘ ঝড়ো বক্তব্য চলে ১৩ দিন ধরে। এর মাধ্যমে দেশ দু’টি নিরাপত্তা পরিষদে ফ্লোরে জন্ম দেয় এক ধরনের ইতিহাসের। এই সুদীর্ঘ বিতর্ক জন্ম দেয় একটি রেজুলেশন বা প্রস্তাবের। এই প্রস্তাবে জম্মু ও কাশ্মিরের মানুষকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটি নতুন নয় যে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ বলেছিল, ভারত এর অভিযোগে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল “that the people of Jammu and Kashmir would be free to decide their future by recognized democratic method of a plebiscite or referendum which, in order to ensure complete impartially, might be held under international auspices.” ” নয়াদিল্লি এ কথা বলেছিল জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে। এরূপ উল্লেখ করার পরও ভারত কাশ্মিরে এর সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তা দখল করে নেয়। তখন নেহরু পাকিস্তান সরকারের কাছে বারবার টেলিগ্রাম পাঠিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন, হরি সিংয়ের অনুরোধে ভারত কাশ্মিরে সেনা পাঠিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাশ্মিরের জনগণকে সুযোগ দেয়া হবে গণভোটের মাধ্যমে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সুযোগ দেয়া হবে। তা ছাড়া জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষেদে অনেক প্রস্তাব পাসের পর ১৯৪৯ সালের ৫ জানুয়ারি দুই পক্ষের উত্তপ্ত বক্তব্যের পর পাস হওয়া প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মিরে গণভোট আয়োজনের একটি বিস্তারিত কৌশল তুলে ধরে। ভারত ও পাকিস্তান তা মেনে নেয়। কিন্তু ভারত নানা চলচাতুরীর মাধ্যমে কাশ্মিরে সে গণভোট দেয়নি। এর বদলে এরা বলতে শুরু করে কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সেই সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা থেকে থেকে বলতে থাকে অখণ্ড ভারত আর হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের কথা।
রাজনীতি বিজ্ঞানীদের অভিমত, ভারত ভাগের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মির থেকেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ফোকাল পয়েন্ট। এই আন্দোলনের আইডিওলগ ও অনেক ভারতীয়ের জন্য পাকিস্তানের সাথে দ্বন্দ্বের মূল বিষয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাছে এই রাজ্যটি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৫০-এর দশকে এরা দাবি তোলে অখণ্ড ভারতের। আর এই অখণ্ড ভারতের হাইপোথিক্যাল বর্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তিব্বতকে। তাই কাশ্মিরের সাম্প্রতিক ঘটনা এসব দেশের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। এই অখণ্ড ভারতের দাবিটি রাজনৈতিক কাঠামো লাভ করে ১৯৫১ সালে ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে, যা বিজেপির পূর্বসূরি এবং আরএসএসের প্রথম রাজনৈতিক শাখা। ১৯৫২ সালে জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন জম্মু ও কাশ্মিরের পরিপূর্ণ ভারতে অন্তর্ভুক্তির। তিনি বলেন, ‘এটি ভারতের অংশ, যার অংশবিশেষ শত্রুর দখলে রয়েছে।’ তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কিংবা পাকিস্তানের সাথে সমঝোতা করে আমরা তা ফিরে পাবো না। অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগ না করলে আমরা তা হারিয়ে ফেলব।... আমি এক সাম্প্রদায়িক। আমি প্রতিক্রিয়াশীল। আমি একজন যুদ্ধবাজ।’ ১৯৫৩ সালে এটিকে ‘করো অথবা মরো’ ধরনের বিষয় করে তুলে যখন আরএসএস প্রতিষ্ঠিত জম্মু প্রজা পরিষদের বিক্ষোভে যোগ দিতে অবৈধভাবে তিনি কাশ্মিরে প্রবেশ করেন, তখন তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। কারাগারেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।
ভারতীয় জনসঙ্ঘ কখনোই নির্বাচনে সফল হতে পারেনি, তবে দলটি মুখার্জির আদর্শকেই আঁকড়ে থাকে। সময়ের সাথে দলটির প্রেসিডেন্ট হলেন প্রেমনাথ ডোগরা ও বলরাজ মোদক। এরা ছিলেন জম্মু ও কাশ্মিরের আরএসএস শাখার ফাউন্ডিং ফাদার। ১৯৬৫ সালে যুদ্ধের মাঝখানে জনসঙ্ঘ একটি প্রস্তাব পাস করে। এতে ঘোষণা করা হয় : “Akhand Bharat will be a reality, unifying India and Pakistan. ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনসঙ্ঘের পুনঃসূত্রায়ন ঘটে বিজেপি হিসেবে, এর দুই প্রসিডেন্ট আজীবন আরএসএস কর্মী এ বি বাজপেয়ি এবং এল কে আদভানির সময়ে। বিজেপির ১৯৮৪ সালের ইশতেহারে আহ্বান জানায় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের। এ দাবি ১৯৮৬ সালের দলীয় কনভেনশনে দাবি হিসেবে সামনে নিয়ে আসেন আদভানি। ১৯৯৬ সালের ইশতেহারে আগ্রাসীভাবে জম্মু ও কাশ্মিরকে কৌশলগত সীমানা হিসেবে বর্ণনা করে পাকিস্তানের অবৈধ দখল থেকে ভারতীয় অংশ উদ্ধারের আহ্বান জানানো হয়। ভারতীয় জাতির জন্য এটি হয়ে ওঠে একটি চ্যালেঞ্জ। সে বছরেই আদভানির প্রতিভূ প্রয়াত সুষমা স্বরাজ পার্লামেন্টের এক ভাষণে জোর দাবি তোলেন ৩৭০ ধারা বিলোপের। ২০০৯ সাল থেকে বিজেপির প্রতিটি ইশতেহারে এই দাবির কথা উল্লিখিত হয়ে আসছে।
সাবেক আরএসএস মুখপাত্র ও পরবর্তী সময়ের বিজেপির মাউথপিস হয়ে ওঠা রাম মাধব সম্প্রতি লিখেছেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের বিষয়টি বিজেপি ও জনসঙ্ঘের একটি রানিং থিম। তিনি মনে করেন, এই ধারাটি থাকা ‘উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে বাধা’। এর পরও রাম মাধব এর আগে বলেছেন, এর পেছনে বিজেপির আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে গোলওয়ালকারে পাকিস্তানে ভারতের পতাকা উত্তোলনের আহ্বান। ২০১৫ সালে অক্সফোর্ডে বক্তব্য রাখার সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আরএসএস এখনো বিশ্বাস করে, একদিন এই অংশগুলো ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ৬০ বছর আগে ভাগ করা হয়েছিল, আবার জনগণের ইচ্ছায় একসাথে হবে এবং অখণ্ড ভারত আবার সৃষ্টি করা হবে। আর একজন আরএসএস সদস্য হিসেবে আমি সে বিশ্বাস ধারণ করি। এই ধারণা এখন খোলাখুলি প্রচার করা হয় ভারতীয় পার্লামেন্টে। বিজেপির সাথে জোটবদ্ধ হিন্দৃত্ববাদী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল শিবসেনার সদস্য ও এমপি সঞ্জয় রাউত ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বলেছেন, ‘আজ আমরা জম্মু ও কাশ্মির পুনরুদ্ধার করেছি। আগামীতে আমরা দখলে করব বেলুচিস্তান, পাকিস্তানÑ অধিকৃত কাশ্মির। আমার বিশ্বাস, এই সরকার অবিভক্ত ভারতের আশা পূরণ করবে।’
তবে অনেকে মনে করেন, এটি হতে পারে ভারতের জন্য একটি দিবাস্বপ্ন। তবে কাশ্মির কোন পথে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু সময়। তখন হয়তো জানা যাবে, কাশ্মির হবে কাশ্মিরিদের না ভারতের? তবে ভারতকে একটি কথা মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতাকমী কোনো জাতিকে কেউ চিরদিন পদানত করে রাখতে পারে না। বেনিয়া ইংরেজরাও ভারতকে পদানত করে রেখেছিল ১৯০ বছর। এর পরে আর পারেনি। হ


আরো সংবাদ



premium cement