২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইতিহাসের কাশ্মির

বহমান এই সময়ে
-

পর্ব : ১
গত ৫ আগস্ট ২০১৯ ভারতের প্রেসিডেন্ট এক ডিক্রির মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের ৭০ বছরের পুরনো ‘বিশেষ মর্যাদা’ বাতিল করে দিয়েছেন ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ রদ করার মাধ্যমে। এই ডিক্রির মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের বিতর্কিত এই ভূখণ্ডের রাজ্যের মর্যাদার পুরোপুরি কেড়ে নেয়া হয়। আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত জম্মু ও কাশ্মির বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকায়িত অঞ্চল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত নিউক্লিয়ার ফ্লাশ পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাস বলেÑ জম্মু ও কাশ্মির ১৮৪৬ থেকে ভারত বিভাগের আগ পর্যন্ত ছিল ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি প্রিন্সলি স্টেট, যা শাসন করত রাজপুত ডোগরা রাজারা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে নামমাত্র সার্বভৌম স্টেটগুলোকে বলা হতো প্রিন্সলি স্টেট বা ন্যাটিভ স্টেট। ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের পর জম্মু ও কাশ্মির স্টেট গঠন করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ স্টেটের সাথে কাশ্মির উপত্যকাকে সংযুক্ত করে গোলাব সিংয়ের কাছে হস্তান্তর করেন ৭৫ লাখ রুপির ইনডেমনিটি পরিশোধের বিনিময়ে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়। তখন এই রাজ্যে মুসলমানেরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু এই স্টেট ছিল অমুসলিম মহারাজা হরি সিংয়ের শাসনাধীনে। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জম্মু ও কাশ্মির কার পক্ষে যোগ দেবেÑ পাকিস্তানের পক্ষে, না ভারতের, না এই দুই দেশের কোনোটির সাথে সংযুক্ত না হয়ে নিরপেক্ষ স্বাধীন কাশ্মির রাষ্ট্র গঠন করবে? এ নিয়ে নানা বিশৃঙ্খলা চলার মধ্য দিয়েই মহারাজা হরি সিং সামরিক সহায়তার বিনিময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই রাজ্যকে ভারতীয় ডোমিনিয়নে যোগ দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করে ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর। এ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই রাজ্যের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পাকিস্তানের হাতে, যা আজ আজাদ কাশ্মির ও গিলগিটস্তান নামে পরিচিত। একাংশ চলে যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে, যা ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মির নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, কাশ্মিরের ২০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের হাতে, যা আকসাই চীন নামেও পরিচিত।
জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যটি ১৯৪৭ সালে ভারতের সাথে সংযুক্ত করা হয় বিশেষ শর্তের আওতায়। শর্তটি ছিল এই রাজ্য বিশেষ মর্যাদা ভোগ করবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এর অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তখন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের সর্বশেষ রাজা, মহারাজা হরি সিং ডোগরা এবং ব্রিটিশ ক্রাউনের গভর্নর-জেনারেল মাউন্টব্যাটেন। ১৯৪৯ সালে যখন ভারত প্রজাতন্ত্রের সংবিধান পাস করা হয়, তখন এই সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারায় মহারাজার এই শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করার ফলে এ ধারার অন্তর্ভুক্ত ১৯৫৪ সালের ৩৫ক ধারাও স্বাভাবিকভাবে লুপ্ত হয়ে গেছে। এই ধারা দু’টি এক সাথে মিলে বিধান ছিল জম্মু ও কাশ্মিরের প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। অপর দিকে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। কাশ্মিরিরা বসবাস করবে তাদের নিজেদের প্রণীত স্বতন্ত্র আইনের অধীনে। এর মাধ্যমে ভারতের অন্য অংশের নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মিরে জমি কেনা ও স্থায়ীভাবে বসবাস ও সম্পদ নিষিদ্ধ করা হয়। কাশ্মিরিদের অনেকের চোখে এর ফলে সেখানে সেটেলার কলোনিয়ালিজম ঠেকানো সম্ভব হয়। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে এসব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলো। কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্টের জারি করা এক ডিক্রির মাধ্যমে ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে বিল উত্থাপন করেন জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের মর্যাদা বাতিল চেয়ে এবং এর মর্যাদা ‘ইউনিয়ন টেরিটরি’তে নামিয়ে আনার জন্য। সেই সাথে জম্মু ও কাশ্মিরকে ভেঙে কেন্দ্রশাসিত দু’টি অঞ্চলে ভাগ করার কথাও বলা হয় এই বিলে। একটি জম্মু ও কাশ্মির, আর অপরটি হবে লাদাখ। দু’টিতেই নিয়োগ পাবেন দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। জম্মু ও কাশ্মিরে থাকবে একটি পার্লামেন্ট, তবে লাদাখে থাকবে না কোনো পার্লামেন্ট। লোকসভায় হট্টগোলের মধ্য দিয়ে এই বিল পাস হয়। এ ঘটনায় ভারতের জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে সৃষ্টি হয় উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
ভারতের দাবি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের এই দাবিকে অসার প্রমাণ করে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের হাইকোর্ট বছর দুয়েক আগে দেয়া এক রায়ে স্পষ্ট করে বলেÑ জম্মু ও কাশ্মির কখনোই ভারতের অংশ ছিল না এবং এখনো এর অংশ নয়। এই রায়ে আদালত বলেছেন, ভারতের সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মিরকে সীমিত সার্বভৌম ভূখণ্ডের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি হাসনাইন মাসুদি ও বিচারপতি জনকরাজ কোতয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন। এ দুই বিচারপতির দেয়া ৬০ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে এই রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে; যা সংশোধন, বাতিল বা রদ করা যাবে না। আদালত বলেছে, সংবিধানের ৩৫ক অনুচ্ছেদে বিদ্যমান আইনে কাশ্মিরকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। সংবিধানে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদকে অস্থায়ী বিধান হিসেবে উল্লেখ করা হলেও একবিংশ ধারায় এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ধারা সংবিধানে, ৩৭০ নম্বর ধারাকে ‘স্থায়ী, অপরিবর্তনশীল বিশেষ বিধান’ নাম স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। আইনসভায় এটি সংশোধন, বাতিল বা রদ করা যাবে না। এর পরও বিজেপি সরকার গায়ের জোরে অনেকটা গোঁয়ার্তুমি করে তা সম্প্রতি বাতিল করে দিয়েছে।
গত মে মাসে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দ্বিতীয়বার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই জোরদার প্রচারণা চালায় তারা তাদের প্রতিশ্রুত জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা দেয়ার ৩৭০ ধারা বাতিল করবে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অভিযোগ করা হয়, ভারতীয় সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মিরের উন্নয়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। অমিত শাহ বলতে থাকেন, এ ধারাটি কাশ্মিরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলার পক্ষে বাধা হয়ে আছে। তা ছাড়া, ভারতের নিরাপত্তার জন্যও এই ধারা বাতিল হওয়া দরকার।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মিরে স্বাধীনতাকামীদের সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ তিনগুণ বেড়ে যায়। ২০১৬ সালের দিকে ভারতীয় বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রবল জনবিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই সময়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত বেসামরিক লোক নিহত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই সময়ে বন্যার মতো এই রাজ্যে ভারতীয় সেনাসদস্যের সংখ্যা বাড়াতে থাকে। ছোট্ট এই রাজ্যে পাঁচ লাখ ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন করা হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে ভারত আরো ৫০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করে।
এ ছাড়া দিল্লি এর আগে ২০১৫ সালের পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার জম্মু ও কাশ্মিরের নির্বাচিত সরকারকে বাতিল করে দেয় এবং সেখানে কায়েম করা হয় সরাসরি কেন্দ্রের শাসন। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কোয়ালিশন সরকার থেকে বিজেপি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ২০১৮ সালের জুনে জম্মু ও কাশ্মিরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে সরিয়ে দেন। এর মাধ্যমে বিজেপি এটুকু জানিয়ে দেয়, দলটি মনে করে পেশিশক্তির মাধ্যমেই কাশ্মির সমস্যার সমাধান করতে হবে। সে জন্যই ২০১৪ সালের পর থেকে এই রাজ্যে কোনো নির্বাচন হতে দেয়নি বিজেপি সরকার। চলমান দখলদারিত্ব ও মোটামুটি ৪২ বছরের দীর্ঘ দিনের কেন্দ্রের সরাসরি শাসন কাশ্মিরিদের মধ্যে এই জনধারণা সৃষ্টি হয়েছে, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে এরা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। মুসলিম জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবে অনুভব করেছে, সেখানকার ৬৮ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী হিন্দু শাসকদের হাতে ঐতিহাসিকভাবে প্রজা হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। তাদের এই উপলব্ধি আরো জোরদার হয়েছে বিজেপির অপশাসনে। আর এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তো রয়েছেই। বিজেপির অনেক নেতা খোলাখুলি দাবি করেন, ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা হবে।
বিষয়বস্তুর স্পষ্টতার জন্য আমাদের জেনে নেয়া দরকার, কী আছে ভারতীয় সংবিধানের এই ৩৫ক ধারায়। এই ধারার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের লেজিসলেচারকে অনুমতি দেয়া হয়েছে রাজ্যের ‘স্থায়ী নাগরিক’-এর সংজ্ঞা নির্ধারণের। আর এ ধারাটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পরিস্থিতিগত তথা সিচুয়েশনারি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে, যেটি অভিহিত The Constitution (Application to Jammu and Kashmir) Order, ১৯৫৪ নামে। ভারতের প্রেসিডেন্ট তার ওপর ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারায় অর্পিত ক্ষমতা বলে এবং জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য সরকারের সাথে ঐকমত্য হয়ে তিনি এ আদেশ জারি করেন ১৯৫৪ সালের ১৪ মে। বলা দরকার, ভারতীয় সংবিধানের ৩৫ক ধারা কাশ্মিরের জনগণকে নতুন করে কোনো অধিকার দেয়নি। এই ধারার মাধ্যমে শুধু বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে কোনো ভারতীয় যেন এ রাজ্যের ভেতরে এ রাজ্যের লোকদের কোনো ভূমি বা স্থায়ী সম্পদ অর্জনের অধিকার কিংবা কর্মসংস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করতে না পারে। এসব অধিকার তাদেরকে দেয়া হয়েছিল সেই ১৯২৭ সালে, যখন কাশ্মিরের মহারাজা তার প্রজ্ঞাবলে একটি আইন পাস করে তার প্রজাদের অর্থাৎ কাশ্মিরের জনগণকে এসব অধিকার অনুমোদন দিয়েছিলেন। লক্ষণীয়, তারা এই অধিকার লাভ করে তখন, যখন আজকের ভারতের ও ভারতীয় সংবিধানের অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি জম্মু ও কাশ্মিরের সংবিধানও তখন ছিল না। কাশ্মিরিরা তাদের সংবিধান পায় ১৯৫৬ সালে। আর ৩৫ক ধারার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজ্য ক্ষমতা পায় এর স্থায়ী নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা অনুমোদন করতে। সেই সাথে এর মাধ্যমে প্রতিষিদ্ধ করা হয়, এই জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে কোনো অনাবাসী ভূমি অথবা স্থায়ী সম্পদ কিনতে পারবে না এবং চাকরি বা অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
কাশ্মিরের বর্তমান পরিস্থিতির সম্যক উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন সংক্ষেপে এর অতীত ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো। জানা দরকার কী কারণে এম কে গান্ধীও জম্মু ও কাশ্মিরকে অভিহিত করেছিলেন এমন একটি হিন্দু রাজ্য হিসেবে, যার সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা হচ্ছে মুসলমান।
কাশ্মিরে ইসলাম শিকড় ঘাড়ে ১৩২০ সালে। তখন স্থানীয় এক রাজা ইসলাম গ্রহণ করেন। ১৩৩৯ সালে শাহ মীর হন কাশ্মিরের প্রথম মুসলিম শাসক। তার হাত দিয়েই সেখানে সূচিত হয় শাহ মীর ডাইনেস্টি। পরবর্তী পাঁচ শতাব্দী ধরে মুসলিম শাসকেরাই কাশ্মির শাসন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মোগল সম্রাটেরা, যাদের শসনকাল ছিল ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত। আফগান দুররানি সম্রাটদের শাসনকাল ১৭৪৭ থেকে ১৮১৯। ১৮১৯ সালে শিখেরা রঞ্জিত সিংয়ের অধীনে কাশ্মিরকে তাদের সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করে। ১৮৪৬ সালের প্রথম ইংরেজ-শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি ও শিখ রাজা গোলাব সিংহের মধ্যে স্বাক্ষরিত অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মির হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে একটি স্বাধীন প্রিন্সলি স্টেট। ব্রিটিশদের কাছ থেকে নামমাত্র দামে অঞ্চলটি কিনে নিয়ে গোলাব সিং হন জম্মুর রাজা। তিনি হন কাশ্মিরের নয়া শাসক। ১৮৪৬ সালের ১৬ মার্চ এই চুক্তিটি কার্যকর করা হয়। চুক্তিটির আকার দেয়া হয়েছিল এক সপ্তাহ আগে ৯ মার্চে ইংরেজ-শিখদের মধ্যকার যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর। গোলাব সিংয়ের উত্তরসূরিরা তা শাসন করেন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। এর পর জম্মু ও কাশ্মির হয়ে ওঠে এক বিতর্কিত ভূখণ্ড। এখন এই বিতর্কিত ভূখণ্ডটি খণ্ডিত আকারে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের নিয়ন্ত্রণাধীনে।
ডোগরা রাজাদের কাশ্মির শাসনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল একান্তভাবে হিন্দুত্ববাদের পৃষ্ঠপোষকতা। তারা অব্যাহতভাবে কাশ্মিরের হিন্দুয়ায়ন অভিযান চালায়। মৃদু রায় তার বই ‘হিন্দু রুলারস, মুসলিম সাবজেকটস’ বাইটিতে উল্লেখ করেন : ‘গোলাব সিং সতর্ক ছিলেন প্রকাশ্যে একজন হিন্দু শাসক হিসেবে টিকে থাকার ব্যাপারে। তিনি প্রকাশ্যে নিন্দা জানান হিন্দু ও মুসলমানের বিয়ে এবং হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে। তার পুত্র রণবীর সূচনা করেন হিন্দু রাজ্য গঠনের বিষয়টি। তিনি একটি সরকারি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন একটি মাত্র লক্ষ্যে : এই বিভাগ রাজ্যে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য নিরাপদ করবে। এ ছাড়া রণবীর জম্মু ও কাশ্মির শাসন করার জন্য হিন্দু হওয়ার বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখতেন। তার পুত্র প্রতাপ সিং প্রতিনিধিত্ব করতেন কাশ্মিরের প্রজাদের ক্ষুদ্র অংশ হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষায়। পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি তার ভাইপো হরি সিং ১৯২৫ সালে সিংহাসনে বসার পরও। হ
(আগামীকাল দ্বিতীয় পর্ব)


আরো সংবাদ



premium cement