১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অ ভি ম ত : দেশ কি গণতন্ত্রের ধারায় আছে?

-

ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯০ বছরের শাসনামলে বহু অপকর্ম করেছে ব্রিটিশরা। দাড়ি রাখার জন্যও তখন বসানো হয়েছিল কর। এসবের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ প্রতিবাদ করেছেন। শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এমনি একজন অগ্রসেনানি ছিলেন শহীদ নিসার উদ্দিন তিতুমীর। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, এ ভূখণ্ডের মানুষ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। বারবার প্রমাণ হয়েছে, এ দেশের মাটিতে বেশি দিন কর্তৃত্ববাদ টিকতে পাড়েনি। আর পাকিস্তানের ২৩ বছরের বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ সশস্ত্র সংগ্রাম করে স্বাধীন বাংলাশের অভ্যুদয় ঘটান। সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাস, গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ ১৯৯০ স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন।
যুগে যুগে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। যেমন আগে দেশে দেশে সেনাবাহিনীর লোকজন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতেন। কিন্তু এখন এমনটি দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ‘ভোট’ নামের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। কিন্তু যারা এ আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকেন নিজেদের ছাড়া পারতপক্ষে অন্যকে জয়ী হতে দিতে চান না। আমাদের দেশেও ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকার নির্বাচনের আয়োজন করে। তখন বিরোধী অনেক দল অভিযোগ করে, ওই নির্বাচন ছিল একটি নীলনকশার নির্বাচন। পাতানো নির্বাচন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল পরে আরো দু’টি ‘নির্বাচন’-এর আয়োজন করে। তা দেশবাসী দেখেছেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের আইনসিদ্ধ সর্বজনস্বীকৃত একটি পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে দেশে জেঁকে বসা হাইব্রিড রেজিমের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রকৃত বিরোধী দল সংসদে প্রায় হাওয়া হয়ে গেছে। পরাধীন ভারতে শাসক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও কথা বলা যেত। অথচ এখন দেশে শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করলেও কপালে জোটে ‘রাজাকার’ তকমা। কিংবা লেভেল সেঁটে দেয়ার চেষ্টা করা হয় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির চর হিসেবে। অথবা জোটে ‘মৌলবাদী’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘পাকিস্তানি চর’ ইত্যাদি তকমা।
খুন, গুম, ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। গ্রামপর্যায় থেকে রাজধানী পর্যন্ত সব জায়গায় কর্তৃত্ববাদ স্পষ্ট। সরকারদলীয় চেলাচামুণ্ডা যেন এক ধরনের জমিদারি করছেন। তোলাবাজিই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। এসব তোলাবাজকে বিয়ের দাওয়াত না দিলেও সেই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। বলতে গেলে এদের কাছে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন অসহায়। এমন পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অঙ্গ ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনেরা প্রচার করছে, এটিই নাকি টেকসই গণতন্ত্র। অথচ গণতন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়ে থাকে সমাজব্যবস্থার মূল লক্ষ্য যদি মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব বিকাশ হয়, তবে গণতন্ত্র বাস্তবিক অর্থেই শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্র মানুষকে মহত্ত্বর জীবনের স্বাদ গ্রহণে উপযুক্ত করে তোলে। সমাজজীবনে সৃষ্টি করে সুস্থ ধারা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিকেরা স্বাধীনভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। জনগণ রাজনৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রের চেহারার দিকে তাকালে কী বোঝা যায়? সেই গণতন্ত্র এ দেশে কোথায়?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইসতার তার মডার্ন ডেমোক্র্যাসি বইয়ে বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে সে ধরনের শাসনব্যবস্থা, যাতে রাষ্ট্র শাসন আইনত কোনো বিশেষ শ্রেণী বা শ্রেণীগুলোর হাতে না থেকে সমাজের নাগরিকদের হাতে থাকে।’ দেশের বর্তমান সরকারের দাবি, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত! তবে বিরোধী রাজনীতিকদের অভিযোগ, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগের রাতেই হয়ে গেছে। সেই ভোটের ফলাফলে বর্তমান সরকার চর দখলের মতো দেশের ক্ষমতা দখল করেছে। তাই তারা দেশে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সি এফ স্ট্রংয়ের ভাষায়, ‘জনগণের সক্রিয় সম্মতির ওপর যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে গণতান্ত্রিক সরকার বলা হয়’। গণতন্ত্র নিয়ে আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেনরি মেইন বলেছেন, ‘সব ধরনের সরকারব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে কঠিন।’ গণতন্ত্রের এসব সংজ্ঞার সাথে মেলালেই যে কেউ বুঝতে পারেন, দেশে বর্তমানে কী ধরনের শাসনব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।
আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি প্রায় ৪৮ বছর হলো। আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্রের একটি ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এত বছর পরও কি আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? সমাজব্যবস্থায় কি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শক্ত পাটাতনে দাঁড়াতে পেড়েছে? বৈশ্বিক সব সূচক কিন্তু নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। হ
সাইফুল ইসলাম তানভীর


আরো সংবাদ



premium cement