১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : জেলখানার দুর্নীতি

-

দীর্ঘ দিন থেকে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব জেলখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের অনেকে কোটিপতি। এদের প্রতি সরকারের কোনো নজরদারি নেই বলেই আজ প্রমাণিত যে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের এক জেলার প্রতি মাসে অবৈধ উপায়ে পাঁচ কোটি টাকা আয় করতেন। শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকাসহ দেশের সবগুলো জেলখানার চিত্র একই। কারাগারে বিভিন্ন পন্থায় অবৈধ অর্থ উপার্জনের ‘আকর্ষণীয়’ সুযোগ রয়েছে; যেমন ‘বন্দী বিক্রি’, মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা, বন্দী এবং তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে আরামদায়ক ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেয়া, খাদ্য সরবরাহ, আসামিদের মধ্যে ছোট ছোট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা আদায় করা, জামিনপ্রাপ্ত বন্দীদের কারাফটকে পুনরায় গ্রেফতারের হুমকি, ক্যান্টিন ব্যবসা, কারা হাসপাতালে বন্দীদের সুবিধা পাইয়ে দেয়া, ‘জানালা সাক্ষাৎ’, অফিস ও গেটে সাক্ষাৎ, ভিআইপি সাক্ষাৎ, হাসপাতালে ভর্তি ইত্যাদি।
প্রত্যেক কারাগারের জেলসুপার, জেলার ও অতিরিক্ত জেলার, কারা কর্মকর্তা, এমনকি কারারক্ষীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরদারি আরো ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে গবেষণা বা এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। জেলখানার ছোট-বড় প্রায় সব কর্মকর্তা তাদের স্ত্রী, স্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ও ভাইবোনের নামে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর জেলখানার কর্মকর্তাদের প্রতি বেশি নজরদারি থাকা উচিত। কারণ এই দু’টো জেলে অবৈধ আয়ের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। জেলখানায় ইয়াবাসহ মাদক বিক্রয়ের সাথে কারাকর্মকর্তারা জড়িত। সরকারি লোকজনের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ উপার্জনের যে ঢেউ উঠেছে, তা এ মুহূর্তে প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে। কারাগারগুলোতে পদে পদে টাকার খেলা। যে আসামি যত বেশি টাকা দেবে, সে কারাগারে তত বেশি থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধা পাবে। জেলখানায় সিনিয়র বা পুরনো আসামি বা কয়েদিরা প্রতিদিনের নিত্যনতুন আসামিদের ওপর টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে থাকে। ‘প্রয়োজনে’ টাকা আনার জন্য তাদের বাসায় লোক পাঠায়। এর সব কিছু কারাগারের একটা সিন্ডিকেট করে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এটা না জানার কথা নয়। কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের প্রতিটি জেলখানায় প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে। বেআইনি ‘মাসোহারা’ সহজে পৌঁছে যায় জেলখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের ইতিহাসে চট্টগ্রাম জেলের মতো কোনো জেলায় মাদক, টাকা ও চেক এফডিআর নিয়ে এর আগে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া এখন জরুরি। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দেখতে চাই।
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
ফরিদাবাদ-গেন্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪


আরো সংবাদ



premium cement