২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবায়নের অযোগ্য বাজেট

সুশাসন
-

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত এবারের বাজেটে মোট ব্যয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বিপরীতে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বর্তমান বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। অপর দিকে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (এডিপি) জন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বাজেটে আয় ও ব্যয়ের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য হতে জানা যায়, উচ্চ লক্ষ্যমাত্রায় আয় ও ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও তা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেটে সে দিকে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য যে ধরনের সংস্কার এবং উৎসাহমূলক পদক্ষেপ জরুরি, এ বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে এবং এর পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রতিনিয়ত বেড়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অর্থনীতিবিদদের গবেষণায় উঠে এসেছে, মোট জিডিপির ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য জিডিপির ৪.৫৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হয়। আমাদের বর্তমান জিডিপির আকার প্রায় ২৯ লাখ কোটি টাকা। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ অর্জন করতে হলে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আবশ্যক। বিনিয়োগের অন্যতম উপাদান হলো পুঁজি। এ পুঁজি আহরণের খাত হলো ব্যাংক ও শেয়ারবাজার। আমাদের দেশে এখনো পুঁজি আহরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। কিন্তু উন্নত অর্থনীতির দেশে দেখা যায়, পুঁজি আহরণে শেয়ারবাজার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যসঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার যে ঘাটতি ধরা হয়েছে, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে নির্বাহের কথা বলা হয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে এ বিপুল অর্থ ঘাটতি মোকাবেলায় ঋণ আকারে গ্রহণ করলে বেসরকারি বিনিয়োগে এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের যে অবস্থা, তাতে বিনিয়োগে পুঁজি সরবরাহের সক্ষমতা এ বাজারের নেই। এক কথায় বলতে গেলে, শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। এ বাস্তবতায় বাজেট থেকে সহায়তা নিয়ে শেয়ারবাজার টেনে তোলার পদক্ষেপের কথা বলা হলেও তা কতটুকু কার্যক্ষম হবে, সে বিষয়ে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ হলেন এ দেশের কৃষক, কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিক এবং প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকেরা। বিগত কয়েক বছর দেখা গেছে, ধানের উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয়মূল্য আনুপাতিক হারে কম হওয়ায় কৃষকেরা ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বর্তমানে ধান চাষ হয়, এমন অনেক জমি অনাবাদি থাকতে দেখা যায়। এ বছরই প্রথম দেখা গেল মনের দুঃখ ও ক্ষোভে কৃষক পাকা ধান না কেটে ফসলের মাঠে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ধানের মূল্যের নিম্নহারের কারণে কৃষকেরা ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে বিকল্প ফসল উৎপাদনে উদ্যোগী হলে ব্যাপক হারে চাল আমদানির আবশ্যকতা দেখা দেবে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর যে অতিরিক্ত চাপ পড়বে তা মেটানোর সক্ষমতা আমাদের আছে কি না, এটি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো ধরনের পদক্ষেপের উল্লেখ নেই। আমাদের কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা যে হারে মজুরি পান, তা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় ও জীবনযাপনের মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ধরনের সামঞ্জস্যহীনতায় অসন্তোষ দেখা দিলে তা উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যার ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকেরা তথায় কায়ক্লেশে জীবন ধারণ করে তাদের আয়ের বড় অংশ দেশে প্রেরণ করে থাকেন। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থের কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে এবং আমদানি ব্যয় মেটানো ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সহজতর হয়ে উঠছে। আমাদের রফতানিকারকদের রফতানি বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা দেয়া হলেও প্রবাসী শ্রমিকেরা দীর্ঘ দিন ধরে কোনো ধরনের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এ বাজেটে তাদের ২ শতাংশ হারে অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার টাকার বিপরীতে তাদের প্রাপ্তি হবে ২০ টাকা। ডলারের বিক্রয়মূল্যের হিসাবে প্রতি ডলারের বিপরীতে তাদের প্রাপ্তি হবে ২০ পয়সারও কম। ব্যাংকে যে মূল্যে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, ডলারের অবৈধ লেনদেনের বাজারে এর ক্রয়-বিক্রয়মূল্য তিন-চার টাকা বেশি। সুতরাং ২ শতাংশ হারে অর্থ প্রদান করা হলে তা যে প্রবাসীদের বৈধপথে অর্থ প্রেরণে খুব একটা উৎসাহ জোগাবে, এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ দেখা যায় না।
প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকেরা বিমানবন্দর হয়ে প্রবাসে গমন ও প্রবাস থেকে ফেরত আসার সময় প্রায়ই তাদের বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানি ও নাজেহাল হতে দেখা যায়। তাদের কষ্টার্জিত টাকা থেকে উৎকোচ দেয়া হলে হয়রানি ও নাজেহালের লাঘব ঘটে। তা ছাড়া প্রায়ই বিমানবন্দরে প্রবাসীদের মালামাল খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিকারবিহীনভাবে এ বিষয়ে নির্বিকার। বাজেটে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা জরুরি ছিল।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য মতে, বিগত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে ছয় লাখ হাজার কোটি টাকার অধিক অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এ অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ডলারের অবৈধ লেনদেনের বাজার থেকে ক্রয় করা হয়েছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ হয়েছে বা রোধের ব্যাপারে সরকার তৎপর, এমনটি লক্ষণীয় নয়। পাচারকৃত এ অর্থের সিকিভাগও যদি ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় তা অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি সঞ্চার করবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এটি বণ্টনকৃত মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মোট বণ্টনকৃত ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার ক্রম নিম্নমুখী। এ হার ভারতে ৯.৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮.২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩.৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২.৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১.৯ শতাংশ, চীন, নেপাল ও মালয়েশিয়ায় যথাক্রমে ১.৮, ১.৭ ও ১.৫ শতাংশ। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঋণখেলাপিদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। তারা ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন। খেলাপি ঋণ আদায়ে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষণীয় হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে দেশী-বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ, ভর্তুকি-প্রণোদনা এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতনভাতা ও পেনশন পরিশোধে সামগ্রিক ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশের সমপরিমাণ ব্যয় হবে। দেশের সর্বোচ্চ আইন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণকে নিঃস্বার্থ সেবাপ্রদান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আবশ্যিক কর্তব্য। আমাদের দেশের জনগণ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটি বড় অংশের নিঃস্বার্থ সেবা প্রাপ্তি থেকে যে বঞ্চিত, এটি আর গোপন কিছু নয়। সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত অষ্টম বেতন স্কেলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন সর্বোচ্চ ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের যে হারে বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, তাতে তাদের কারোই দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। কিন্তু এটি আজ বাস্তব সত্য যে, প্রজাতন্ত্রের অতি নগণ্যসংখ্যক কর্মচারী দুর্নীতি থেকে মুক্ত।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছিল এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরে দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ অর্থবছরে যে অর্জিত হবে, জোর করে এমন দাবি কতটুকু যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ লোপাট হয়। এ কারণে উন্নয়ন টেকসই হয় না। এমনও দেখা যায়, সড়কে কার্পেটিং করার পর পরই তা হাত দিয়ে সহজে তুলে ফেলা যায় অথবা যানবাহনের চাকার ঘষায় আপনা আপনি উঠে যায়। অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে রডের বদলে বাঁশ, যৎসামান্য সিমেন্ট এবং বালুর আধিক্য, নিম্নমানের পাথর ও ইটের ব্যবহারের বিষয়ে এ দেশের সচেতন মানুষ অবহিত হলেও প্রতিকারবিহীনভাবে-এর প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, এ ধরনের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতি নির্মূল ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। বিগত অর্থবছরে দেখা গেছে, দুর্নীতি এবং সুশাসনের অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশই লোপাট হয়েছে।
পুরনো ভ্যাট আইনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত ৬৫৪২টি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম ভ্যাট আদায়ের বিধান ছিল। বর্তমান বাজেটে শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম ভ্যাট আদায়ের বিধান করা হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর আরোপিত অগ্রিম করকে ‘শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, উদ্যোক্তাদের যেখানে শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা দেয়া উচিত, সেখানে জোর করে শিল্প খাতে আগাম করের অযৌক্তিক বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। শিল্পোদ্যোক্তারা মনে করেন, এতে করে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আগাম করের বিষয়ে যদিও সেটি পরবর্তীকালে ভ্যাট রিটার্নের সাথে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু আদায়কারী কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা অপ্রত্যাশিত নয়।
বর্তমান বাজেটে ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে যে চারটি স্তরবিশিষ্ট ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে, এটিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশেষজ্ঞরা ‘ট্যাক্স অন ট্যাক্স’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, এর ফলে ভোক্তাদের একাধিকবার কর দিতে হবে এবং এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পাশপাশি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উচিত হবে, ভ্যাটের একটি হার কার্যকর করা।
শেয়ারবাজারকে গতিশীল করার জন্য বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির মধ্যে তাদের মুনাফার অর্থ শেয়ারহোল্ডারদের না দিয়ে রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে শেয়ারহোল্ডাররা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এ ধরনের প্রবণতা রোধ করতে বাজেটে কোনো কোম্পানির অবণ্টিত মুনাফা ও সঞ্চিতির পরিমাণ যদি এর পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে যতটুকু বেশি হবে, তার ওপর কোম্পানি ১৫ শতাংশ কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এ ১৬(জি) নামে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও তা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য শুভ এবং শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থার সঙ্কট দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক।
বাজেট একটি দেশের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। এ আয়-ব্যয়ের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে এবং তা দুর্নীতিমুক্ত হলে দেশের মানুষ বাজেটের সুফল ভোগ করে। উচ্চাভিলাষী বাজেট দোষের কিছু নয়। সরকারের সব পর্যায় থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা গেলে এ ধরনের উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন দুরূহ নয়। সুতরাং দুর্নীতি নির্মূল করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার সুশাসন নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে চললে বাজেটের প্রত্যাশিত সুফল প্রাপ্তি কঠিন হবে না। অন্যথায়, অতীতের মতো গ্লানিতে সব কিছু ম্লান হয়ে পড়বে। হ
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement