১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গ

সময়-অসময়  
-

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক যিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল প্রধান বিচারপতি ‘পদপ্রাপ্তির দৌড়ে অবতীর্ণ’ হয়ে ছিলেন, তিনি বিচারপতি এম শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গত ৩ জুন ২০১৯ বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা, জামিন, চিকিৎসা প্রভৃতি সম্পর্কে বিএনপি সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যকে ‘চরম মিথ্যাচার’ হিসেবে উল্লেখ করে লর্ড হো হো’র সাথে তুলনা করেছেন। তার আর্টিকেলটির শিরোনাম ‘খালেদার ব্যাপারে মিথ্যাচার এবং লর্ড হো হো’। তিনি লেখার যবনিকা টানতে গিয়ে বলেছেন, [তাদের (বিএনপি নেতাদের) অবস্থা আজ লর্ড হো হো’র মতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে ব্যক্তিকে বার্লিন বেতারের মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণার জন্য ঘৃণা এবং কৌতুকভরে ডাকা হতো ‘লর্ড হো হো বলে’] নেতাদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার জন্য ঘৃণিত, কুখ্যাত একজন মিথ্যাবাদীর সাথে তুলনা করেছেন এ জন্য যে, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য লর্ড হো হো’র চেয়ে নি¤œমানের উপমা দেয়ার কোনো ভাষা বা শব্দ অনেকের ভাণ্ডারে ছিল না। যদি থাকত তবে তাও করতে তিনি কুণ্ঠা বোধ করতেন না বলে ধরে নেয়া যায়। বিচারপতির আর্টিকেলটি পড়ে কারা খুশি হবেন, তা পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন। তবে লেখাটি যে এক পেশে হয়ে গেল এটা লেখক বুঝতে পেরেছেন কি না, এটাই এখন প্রশ্ন। তিনি নিশ্চয় আমার মতো কোনো নির্দিষ্ট দলের সদস্য নন, বিচারপতি হিসেবে নিরপেক্ষ থাকার শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করার কথা। এ লেখায় লেখক প্রমাণ করেছেন, তিনি বিশেষ ঘরানার লোক এবং সে দৃষ্টিকোণ থেকেই দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন বলে ধারণা করা অযৌক্তিক কিছু হওয়ার কথা নয়। মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ অনেক নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন এই দল সম্পর্কে অনেক কটূক্তি করে থাকেন। কারণ তারা বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কিন্তু একজন সাবেক বিচারপতি সে একই কায়দায় বাস্তবতাবহির্ভূত ‘আইনের গান’ গাইলেন। সিনিয়র নেত্রী শ্রদ্ধাভাজন সাজেদা চৌধুরী দলের এক নেতাকে বেয়াদব বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, যা মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি যে ভাষায় বিএনপিকে প্রতিনিয়ত কটাক্ষ বা কটূক্তি করে থাকেন, এ লেখক বিএনপি নেতাদের লর্ড হো হো’র সাথে তুলনা করে বিএনপিকে হেয় ও কটূক্তি করার প্রতিযোগিতায় বরং বেশি এগিয়ে গেলেন।
বোধোদয় হওয়া উচিত ছিল যে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বয়স বর্তমানে ৭৪-৭৫ বছর। তিনি অসুস্থ এবং একজন সিনিয়র নারী; তদুপরি মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘খেলোয়াড়’ দু’জন এবং দু’জনই সিনিয়র নারী। তাদের একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি কারারুদ্ধ। তাদের শাসন আমল নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা আছে। ব্যক্তি হিসেবে দু’জনই মায়ের জাতি এবং আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। একজনকে বড় করার জন্য অন্যজনকে ছোট করার মানসিকতা থাকা অবাঞ্ছিত।
কোনো রাজনৈতিক মামলাতেই রাজনীতিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে অভিযোগ আনা হয় না। বরং প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে করা মামলাই ‘রাজনৈতিক মামলা’ হিসেবে ইতঃপূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করা হয়। যেমন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলেও তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের দায়েরকৃত মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, যার কারণে রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান হয়েছিল। সে সময় আমরা সেøাগান দিয়েছি, ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনব।’ সে কারণে রাষ্ট্রদোহের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনায় বসেছিল। এখন সরকার বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বা মামলায় সরকারের কোনো হাত নেই বরং এটা আদালতের বিষয়। এখানে বিএনপিকে কি প্রমাণ করতে হবে যে, মামলাটি রাজনৈতিক প্রণোদিত? কারণ প্রধানমন্ত্রী সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনপদ্ধতির বিধান রদ করেছেন এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া চেয়েছেন এর পুনর্বহাল। তাদের বিরোধ এখানেই এবং এটাই তাকে জেলে রাখার একটা মূল উদ্দেশ্য বলে অনেকে মনে করেন। এখানে অকপটে স্বীকার করতে হয়, দেশনেত্রীর মুক্তির বিষয়ে একটি রাজনৈতিক সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেছে। গত নির্বাচনের আগে, সংলাপে বসার আগে দাবি করা উচিত ছিল, বিএনপি চেয়ারপারসনকে ছাড়া আমরা আলোচনায় বসব না। এখানে স্মরণ রাখা দরকার যে, বেগম খালেদা জিয়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল ও প্রধান নেতা। কারণ তার সমর্থকদের দ্বারা মাঠভর্তি হলেই ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বক্তৃতা দেন। ঐক্যফ্রন্টের জনবল কতটুকু আছে, তা নিশ্চয় তারা আঁচ করতে পেরেছেন। নেত্রীকে আলোচনার টেবিলে আনা হোক, যেমনিভাবে ইতঃপূর্বে অনেক নেতাকে মুক্তি দিতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েছিল, এ দাবি সরকার হয়তো মানত না। ফলে খালি হাতে ফিরে আসার চেয়ে এ দাবির কারণে সংলাপ ভেঙে গেলে এর একটি রাজনৈতিক ফায়দা অবশ্যই হতো। আমার বিশ্বাস এতে জনসমর্থন বিএনপির পক্ষে আসারই কথা। সংলাপে বসে সরকার থেকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি কোনো দাবিই আদায় করতে পারেনি। সংলাপে ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী তালিকা চেয়েছিলেন, যার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়া সম্ভব ছিল না। কারণ রোজই প্রায় প্রতি থানায় মামলা হচ্ছিল। তখন ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা উচিত ছিল, গায়েবি মামলা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের নির্দেশে। তিনি সরকারপ্রধান এবং তার (প্রধানমন্ত্রীর) কাছেই তো এসব মামলার তালিকা রয়েছে এবং এ মামলাগুলো প্রত্যাহার করা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার সদিচ্ছার ওপর। এ কথাগুলো ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা হয়েছে বলে মিডিয়াতে আসেনি, বরং বিরোধী দল থেকে তালিকা দেয়ার কথা স্বীকার করে আসা হয়েছে বলে মিডিয়া প্রকাশ করেছে। যা হোক, সাবেক বিচারপতির আর্টিকেলে বেগম জিয়ার মামলাগুলোর আইনি ব্যাখ্যায় তিনি তার মতো করে সাফাই গেয়েছেন। অন্য দিকে, তার লেখনীতে গায়েবি মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, সরকারের প্রভাব, জামিনে প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতি বিষয় যদি উপস্থাপিত হতো তবে লেখাটির মর্যাদা পাঠকের কাছে বৃদ্ধি পেত বলেই আমার বিশ্বাস।
তার বোধোদয় হওয়া উচিত ছিল যে, সরলতা বা সদিচ্ছার দরুণ বিএনপিকে হোঁচট খেতে হয়েছে বারবার। দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য অনেক আইনের রেফারেন্স দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে আটক রাখার যথাযথ ভূমিকাকে জাস্টিফাইড করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি গণপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট যে হতে পারে না, এ কথাগুলো এ লেখায় আসেনি। সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যখন কথা বলেন, তখন তিনি একপেশে না হয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে কথা বলবেন এটাই তো জাতি প্রত্যাশা করে। জনগণের কোটি কোটি টাকার নির্বাচন ভোটারবিহীন হয়ে গেল, এহেন তামাশা কি দুর্নীতির আওতায় পড়ে না?
অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মতো (একজন সুবোধ বালকের মতো অনুগত দাবিদার) মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি না বানিয়ে মাঠের রাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করলে ‘১/১১’-এর হোঁচট বিএনপিকে খেতে হতো না। বিএনপির আজকের ঝুট ঝামেলার মূল কারণ, ইয়াজউদ্দিনের মতো লোকেরা সুবোধ বালকের মতো অনুগত থাকেন বটে, কিন্তু সময়মতো উল্টাপাল্টা করেন যখন যেভাবে প্রয়োজন। ১/১১-এর সময় যারা দলের সাথে বেইমানি করেছে, মহানুভবতার কারণে বিএনপি তা ভুলে গেলেও জাতীয়তাবাদী শক্তি তা ভোলেনি বা ভোলার কথা নয়। ফলে ‘হোঁচট’ বারবারই ফিরে আসে। তার পরও বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে তালগাছের মতো, আজো বিলীন হয়ে যায়নি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট ঘরানার লোকেরা যেভাবে মনে করছেন।
বিএনপির এমপিদের এবার সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টি নেতারা যেভাবে তালগোল করে ফেলছেন, তা কাক্সিক্ষত ছিল না। সিদ্ধান্তটি আরো মসৃণভাবে নেয়া যেত। কিন্তু এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি আঁতাত করেনি। কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার ছিল যে, সংসদে যোগ দিলেই চেয়ারপারসনের মুক্তি নিশ্চিত হবে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার পরও তিনি মুক্তি না পাওয়াই প্রমাণ হয় যে, Under Hand কোনো সমঝোতা বা প্যারোলে নিয়ে বিএনপি থেকে প্রস্তাব সরকারকে দেয়া হয়নি। অন্য দিকে, নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে হয়, নেত্রীর মুক্তি বা জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় পরিবারের ওপর ছেড়ে দেয়ার দায়িত্বে অবহেলার নামান্তর। তার কারাবন্দী হওয়া রাজনৈতিক ব্যাপার এবং এর দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত দলকেই রাজনৈতিকভাবে নিতে হবে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে ‘দলীয় সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে নিজেই যোগ দেননি। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেছেন, সরকারের চাপের চেয়ে, পাঁচজন এমপি লোভের বশবর্তী হয়েই অনির্বাচিত বিতর্কিত সংসদে যোগ দিয়েছেন। তার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাসচিবকে লোভ বশীভূত করতে পারেনি। অন্য দিকে বলা চলে, যেহেতু তিনি সংসদকে এত দিন বিতর্কিত বলে বক্তৃতা দিয়েছেন সেহেতু যোগদান না করে নিজেকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার উপলব্ধি থেকেই তিনি শপথ নেননি। অবশ্য এতে কঠোর সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে যাতে বারবার হোঁচট খেতে না হয়। কারণ রাজনীতির পথ শুধু কণ্টকময় নয়, পিচ্ছিলও বটে।
আরাফাত রহমান কোকো বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনাপ্রধানের পুত্র। অন্য কোনো পরিচয় না দিলেও কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের জোরালো অনুপ্রেরণা জিয়ার কণ্ঠ থেকেই জাতি ও বিশ্ববাসী শুনেছিল। নিয়ম থাকলেও সেই জিয়াপুত্রকে সেনাবাহিনীর কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হয়নি, বরং এ জন্য অনুমতির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ দিকে বলা বলি হয়েছে যে, জিয়া পরিবার ও বিএনপির ওপর গুম, খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন করে যাওয়া হয়েছিল সেখানে ‘নাটক’ করতে হয়েছিল। কারণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই বিএনপি নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সে দিন প্রধানমন্ত্রীকে গেট থেকে ফেরত না পাঠিয়ে তার সাথে ‘কাউন্টার নাটক’ করালে জনমত অনুকূলে থাকত। তাই বলতে হয়, দূরদর্শিতার প্রশ্নে এখানেও বিএনপিকে হোঁচট খেতে হয়েছে।
কার নির্দেশে ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে (চোখের জলে সিক্ত করিয়ে) জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের যেখানেই জিয়া ও বেগম জিয়ার নাম ছিল সেখানেই তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিমানবন্দরসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, ব্যতিক্রম শুধু নারায়ণগঞ্জ। জিয়া হলের নাম অক্ষুণœ রয়েছে, মুর্যালে কালিমা লেপন করা হয়েছিল; জেলা প্রশাশনকে বাধ্য করা হয়েছে তা মোছার জন্য। বিএনপি অফিস ভাঙার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নোটিশ ২০ বছর আটকে রেখেছি শুধু নি¤œ আদালত দিয়েই, এক লাফে উচ্চ আদালতে আসতে হয়নি। বিএনপি অফিস নিয়ে আমাদের সাথে আপস করতে হয়েছে। আইনের গুঁটি, আর দাবার ঘুঁটি, কোনটা হিট করলে কোনটা পড়বে, ঝাঁপ দেয়ার আগে সেটা জরিপ না করতে পারাই ব্যর্থতা এবং এ জন্যই হোঁচট খেতে হয়।
চেয়ারপারসনের (ম্যাডাম) মুক্তি ও জামিন নিয়ে উল্লিখিত লেখক অনেক সাফাই গেয়েছেন। তিনি সরকারের সব পদক্ষেপকে আইনের বেলুনে ভরে দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাডামের একটি মামলায় জামিন হলে দু’টি মামলার Shown Arrest করা হয় এবং তার জেল দীর্ঘায়িত করার জন্যই একই সাথে Shown Arrest না করে একের পর এক এটা করা হচ্ছে। জেলা জজ জামিন দেবেন না, কিন্তু জামিনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন এক থেকে দুই মাস পরপর। কুমিল্লার মামলায় ৫৩ জন আসামির মধ্যে ৫২ জন জামিনে থাকার পরও বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে এত দীর্ঘসূত্রতা কেন? এ সম্পর্কেও কারো নীরবতা কি স্বচ্ছতার পরিচয় বহন করে? আইনের পাশাপাশি বিচারাঙ্গনের REASONABLE বলতে একটি দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা ন্যায়বিচারের জন্য বাধ্যতামূলক। তা কি এ ক্ষেত্রে প্রতিপালিত হচ্ছে?
ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন ঈদের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন চেয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তির বিষয়ে কার্যত তিনি কী ভূমিকা রেখেছেন? কয়টা দিন ড. কামাল তার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছেন? কোনটা কান্না আর কোনটা মায়াকান্না, এটা বোঝার সাধ্য জনগণের রয়েছে, এ কথা কি তিনি বোঝেন না? তিনি কেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা বলেই তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। তিনি কেন তার কেন্দ্রে অবস্থান নেননি? তা ছাড়া তার নিজ দলকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন কি? প্রথম দিন ‘বেঈমান, গেট আউট’ বলে পরের দিন পাশে বসিয়ে মিটিং করে নিজে শুধু বিতর্কিত হননি বরং গোটা ঐক্যফ্রন্টকে আস্থাহীনতায় ফেলেছেন। গণফোরামের প্রতিনিধি বিতর্কিত সংসদে প্রথমে যোগদান করে বাকিদের ‘বেঈমানি’ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া রায় কি হবে তা জেনেই আদালতে উপস্থিত হয়ে ছিলেন। জেলে যাওয়ার জন্য আমাদের যেখানে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করা উচিত ছিল, সেখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মিছিল করে ম্যাডামকে সেদিন জেলে দিয়ে আসা হলো। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে কিনা এবং জেল এত দীর্ঘ হবে, একের পর এক মামলায় Shown Arrest হবে, নি¤œ আদালত মাসের পর মাস সময় নিয়ে জামিনের বিষয়টি দীর্ঘায়িত করবেÑ এ সব বোঝার দূরদৃষ্টি ও গভীরভাবে পর্যালোচনার কি দরকার ছিল না? নাকি এটা তাদেরই বুদ্ধি যারা মনে করেছিলেন, লাগাতার আন্দোলনে ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে সরকারকে ফেলে দেয়া যাবে। এ ধরনের হোঁচট খেতে খেতে নেতাকর্মীরা হয়রান। তবে উদ্যম হারালে চলবে না।
যাদের কারণে হোঁচট খেতে হয় তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বহিষ্কার হলেও অসুবিধা নেই। কারণ পুনর্বহালের দরজাতো খোলাই থাকে। লক্ষ করা যাচ্ছে, যেখানেই কোনো বিতর্ক দেখা দেয় সেখানেই বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেয়া হয়। যিনি বিএনপির ‘শেষ বাতিঘর’, তাকে কি কোনো বিতর্কে জড়ানো উচিত? আশায় বুক বেঁধে বাতিঘর তো জ্বালিয়ে রাখতে হবে, একে নিভানো যাবে না। কারণ দু’জনের (বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়া ও ম্যাডাম) রক্তই এর (তারেক রহমান) শরীরে প্রবাহিত। এই উপ-মহাদেশে রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের একটি গুরুত্ব রয়েছে।
যুদ্ধ জয়ের প্রধান শর্ত এর প্রস্তুতি। এ জন্য নির্ভরশীল সৈনিকের একটি তালিকা থাকা দরকার, যারা মাঠ ছেড়ে দৌড় দেবে না। ৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দলটিতে অনুরূপ একটি নির্ভরযোগ্য তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কি না, আঁচ করা যাচ্ছে না। হ
লেখক : চেয়ারম্যান, ‘গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন’


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

সকল