২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ

-

কাঙাল হরিনাথ (১৮৩৩-১৮৯৬) ‘মফস্বল সাংবাদিকতার জনক,’ সাহিত্যিক ও বাউলগান রচয়িতা। তার প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, কিন্তু কাঙাল হরিনাথ নামেই পরিচিত। কাঙাল ফিকিরচাঁদ বা ফিকিরচাঁদ বাউল নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৮৩৩ সালে নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার কুমারখালী গ্রামে তার জন্ম। শৈশবে স্থানীয় ইংরেজি স্কুলে হরিনাথের লেখাপড়া শুরু হয়, কিন্তু আর্থিক কারণে তা বেশি দূর অগ্রসর হয়নি। ১৮৫৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি নিজ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং অবৈতনিক শিক্ষক রূপে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরের বছর তারই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালীতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারা জীবন আন্দোলন করেছেন। অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন। পরে ১৮৬৩ সালে নিজেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক এবং শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে কৃষকদের প্রতি তখনকার খ্রিষ্টান নীলকর ও হিন্দু জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হতো। ফলে ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারদের পক্ষ থেকে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। তবুও তিনি নির্ভীকভাবে তার দায়িত্ব পালন করে যান। এসব কারণে পত্রিকাটি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। হরিনাথের জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না। তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে ১৮৭৩ সালে ছাপাখানা স্থাপন করেন। আজো সেটি কুমারখালীতে পড়ে আছে। রাজশাহীর রানী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের দরুন এ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হয়।
হরিনাথ ছিলেন লালন শাহর শিষ্য। তিনি ১৮৮০ সালে ‘কাঙাল ফিকিরচাঁদের দল’ নামে বাউলদল গঠন এবং বহু বাউলগান রচনা করেন। সেগুলো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি সহজ ভাষায় ও সুরে গভীর ভাবোদ্দীপক গান রচনা করতেন এবং সদলে গেয়ে বেড়াতেন।
১২৯০-১৩০০ বঙ্গাব্দের মধ্যে তিনি কাঙাল ফিকিরচাঁদ ফকিরের গীতাবলী নামে ১৬ খণ্ডে বাউলসঙ্গীত প্রকাশ করেন। হরিনাথ ছিলেন গদ্য ও পদ্য রচনায়ও পারদর্শী। সাহিত্যচর্চায় হরিনাথের শিষ্যদের মধ্যে ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, দীনেন্দ্রনাথ রায় এবং জলধর সেন পরবর্তীকালে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। হরিনাথের গ্রন্থ ১৮টি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : বিজয়বসন্ত (১৮৫৯), চারুচরিত্র (১৮৬৩), কবিতাকৌমুদী (১৮৬৬), বিজয়া (১৮৬৯), কবিকল্প (১৮৭০), অক্রূর সংবাদ (১৮৭৩), সাবিত্রী নাটিকা (১৮৭৪), চিত্তচপলা (১৮৭৬), কাঙালের ব্রহ্মাণ্ডবেদ (১৮৮৭-৯৫), মাতৃমহিমা (১৮৯৬) ইত্যাদি। মৃত্যুর পর তার রচনাসমগ্র হরিনাথ গ্রন্থাবলী (১৯০১) নামে প্রকাশ হয়। ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল এই মহৎ মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন। হ


আরো সংবাদ



premium cement