২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাওরের ফসল ও মানুষ বাঁচাতে চাই মহাপরিকল্পনা

বহমান এই সময়ে
-

গত ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা সদরসহ জেলার ১০টি উপজেলার স্থানীয় কৃষকেরা তাদের নিজ নিজ উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে হাওর এলাকার ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
এরা দাবি করেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য গণশুনানির মাধ্যমে দ্রুত পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) গঠন করতে হবে। একই সাথে, বন্ধ করতে হবে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্র্মাণের কাজ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের হাওরে একসময় ঠিকাদারের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হতো। ২০১৭ সালে জেলার হাওরের ফসল অসময়ে তলিয়ে যাওয়ার পর ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ও একই সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে এসব বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করা হয়েছে। চালু করা হয় পিআইসি প্রথা। জানা যায়, গত বছর সব বাঁধের কাজ করা হয় পিআইসির মাধ্যমে। এ জন্য ৯৯৫টি প্রকল্পে ১৬৫ কোটি টাকার কাজ হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মিত হয়েছিল। এসব বাঁধের ৩০ শতাংশ গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ এবং পিআইসি গঠনের কথা। কাজের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু জানা যায়, এখনো কিছু পিআইসি গঠনের বাকি। ফলে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারেনি। তাই জেলার কৃষকেরা মানববন্ধন করে দ্রুত এই কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। তা ছাড়া বাঁধ নির্মাণে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, সে দাবিও তুলেছেন। উল্লেখ্য, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে হাওরের কৃষক, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি এবং সুবিধাভোগীদের নিয়ে সাত সদস্যের পিআইসি গঠিত হয়। এরপর জেলা কমিটি এসব প্রকল্প ও পিআইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে বাঁধের কাজ শুরু হয়। এ বছর এ কাজে বিলম্ব হওয়ায় কৃষকসমাজ উদ্বিগ্ন। সেই সূত্রেই তাদের এই সাম্প্রতিক মানববন্ধন।
কৃষকদের উদ্বেগের কারণ যথার্থ। কারণ, এই বাঁধ নির্মাণে ব্যর্থতা ও নানা লুটপাটের কারণে হাওরের কৃষকদের বারবার মাথায় হাত পড়েছে। বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতে দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে হাওরের ফসল প্রায় বছরই অসময়ে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু যাদের অবহেলা আর দুর্নীতি এর জন্য দায়ী, তারা বহালতবিয়তেই আছে। তাই হাওরের কৃষকদের আশঙ্কা, আগামী বোরো মওসুমেও অসময়ে বন্যার পানি এসে হাওর অঞ্চলের ফসল তলিয়ে নিয়ে কৃষকের দুর্যোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যদি না এবারো বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু করা যায়।
মোটামুটি হিসেবে ধরে নেয়া যায়, এরই মধ্যে এ কাজে এক মাসের মতো দেরি হয়ে গেছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রুত এ কাজে নামতে হবে সংশ্লিষ্টদের। ভুললে চলবে না, দেশের বোরো ফসল উৎপাদনে হাওর এলাকার রয়েছে বড় মাপের অবদান। তা ছাড়া এই হাওর এলাকাটি এক-ফসলি হওয়ায়, এই ফসলের ওপর হাওরবাসীর নির্ভরতা শতভাগ। হাওরের বোরো ফসল হারানোর অপর নাম, তাদের সারা বছরের দুর্ভোগ। এর জের ধরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরের বছরগুলোতেও। সেই সূত্রেই দেশের একসময়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধ, হাওর এলাকার মানুষ ক্রমেই গরিব জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে। বারবার ফসলহানির কবলে পড়ে হাওর এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। আগে চাষবাস করেই চলত তাদের সুখের জীবন। ফলে লেখাপড়া করার দিকে সামগ্রিকভাবে এই হাওর জনগোষ্ঠীর মনোযোগ ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম। ফলে বোরো ফসলের বাইরে এই এলাকার মানুষের বিকল্প আয়ের পথটা থেকে গেছে খুবই সঙ্কীর্ণ। অপর দিকে মাথাপিছু জমির পরিমাণ কমে যাওয়া ও প্রতি বছর আগাম বন্যার কারণে ফসল বিনাশে তাদের সে সুখের নীড় ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। সেই গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর বিল ভরা মাছের সমৃদ্ধ হাওরাঞ্চল বিলীন হয়ে গেছে। তা ছাড়া, বোরো ফসল তোলার পর প্রায় গোটা হাওর অঞ্চল পানির নিচে ডুবে থাকে চার-পাঁচ মাস। তখন আগের দিনের হাওরের মানুষের একটি অংশ হাওরের ভাসা পানিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এখন হাওরে এবং এ এলাকার খালে-বিলে-নদীতে অতীতের সেই মিঠা পানির মাছ আর নেই। ফলে এদের এ পেশা ছাড়তে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। এখন বর্ষায় হাওরের বেশির ভাগ মানুুষ কার্যত কর্মহীন অলস জীবন কাটায়। কারণ, তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়নি কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান। তাই বোরো ফসল আঁকড়ে ধরেই তাদের বেঁচে থাকতে হয়। সে জন্যই হাওরবাসীকে নিয়ে চালু হয়েছে নানা কথা : ‘বর্ষায় নাউ, শুকনায় পাউ, এক ফসলে খাও।’ সেই একমাত্র ফসল হারানো নিয়ে যখন কৃষকের শঙ্কা জাগে, তখন তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া আর কি-ইবা করার থাকে? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওর এলাকার অনেক দিশেহারা পরিবারের বিপুল পরিমাণ স্বল্প-শিক্ষিত তরুণ অনেকটা বাধ্য হয়ে রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশের তৈরী পোশাক ও সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। কারণ, এসব তরুণের নেই তেমন লেখাপড়া। আগে এরা ছিল নিজেদের ক্ষেত-খামারের কৃষিশ্রমিক, আর এখন এরা তৈরী পোশাক কারখানার শ্রমিক।
হাওর এলাকার রয়েছে অনন্য হাইড্রো-ইকোলজিক্যাল (পানিনির্ভর বাস্তুসংস্থান) বৈশিষ্ট্য। এই হাওর এলাকার অবস্থান দেশের উত্তর-পূর্বাংশের সাতটি বন্যাপ্রবণ সমতল জেলাজুড়ে। হাওর এলাকার আয়তন মোটামুটি ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এ এলাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হাওর বা জলাভূমি ৩৭৩টি। এসব জেলার ৪৩ শতাংশ এলাকাই হাওর। এই হাওরে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক নদী-খাল-বিল। বন্যার মওসুমে এর বিপুল অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ে। এই ছয়টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাওর রয়েছে সিলেট জেলায়। সেখানে হাওরের সংখ্যা ১০৫টি। এর পরেই এ ক্ষেত্রে রয়েছে কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের স্থান, যেখানে যথাক্রমে হাওর ৯৭টি ও ৯৫টি। কিন্তু আয়তন বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি হাওর এলাকা সুনামগঞ্জ জেলায়, এই জেলায় শুধু হাওর এলাকার আয়তন ২,৬৮,৫৩১ হেক্টর। আয়তন বিবেচনায় এর পরেই রয়েছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের অবস্থান। এ দুই জেলায় হাওর এলাকার আয়তন যথাক্রমে ১,৮৯,৯০৯ হেক্টর ও ১,৩৩,৯৪৩ হেক্টর। অপর দিকে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজারে রয়েছে যথাক্রমে ১৪টি, সাতটি ও তিনটি হাওর। এই তিন জেলায় শুধু হাওর এলাকার আয়তন যথাক্রমে ১,০৯, ৫১৪ হেক্টর, ২৯,৬১৬ হেক্টর ও ৪৭,৬০২ হেক্টর।
হাওর এলাকার ভৌত অবস্থান এবং এর পানির ওপর নির্ভরশীলতা যেমন এলাকাটির জন্য প্রচুর সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি বসবাসের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে নানা বাধাবিপত্তি। হাওর এলাকার পশ্চিম সীমান্তে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২২০০ মিলিমিটারের মতো, আর উত্তর-পূর্ব কোণে এর পরিমাণ ৫৮০০ মিলিমিটার। ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ের পাহাড়ি এলাকা ও ত্রিপুরার পাহাড় এলাকার বৃষ্টিপাতের ও বন্যার পানি সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফলে বাংলাদেশের হাওরে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেয়। এই হঠাৎ আসা আগাম বন্যাই মূলত হাওরের ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এটাই আসলে হাওরের কৃষকদের জীবনযাপনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। উজান থেকে আসা প্রবল বৃষ্টিপাতের পানি ঠেকাতে হাওরে বাঁধ দিয়ে এই বন্যা থেকে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা চলে। এতে কোনো ধরনের অবহেলা ও দুর্নীতি দেখা দিলে ঘটে বিপত্তি। তাই প্রতিটি বোরো ফসলের মওসুম আসার আগেই এ নিয়ে সেখানকার কৃষকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। উজানে ভারতীয় অঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশে আসা ছাড়াও, বাংলাদেশের নদীগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পলি পড়া, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও পানি-ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণ, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করা, ভূমিধস, নদীভাঙন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদিকে বিবেচনা করা হয় হাওর এলাকার এই ফসলবিনাশী হঠাৎ আসা বন্যার কারণ হিসেবে। ফলে হাওরের কৃষকদের ফসল রক্ষার প্রতিকার হিসেবে কোনো পরিকল্পনা করতে হলে শুধু ফসলের মওসুমে হাওরে বাঁধ দেয়ার কথা ভাবলেই চলবে না। হাওরের এসব বাঁধ নির্মাণকে আরো সচেতনভাবে বিবেচনার সাথে সাথে উল্লিখিত কারণগুলো দূর করায় মনোযোগী হতে হবে বৈকি। মোট কথা, সমগ্র হাওর এলাকার জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা।
আমাদের মনে রাখতে হবে, হাওর এলাকার পুরো জনগোষ্ঠী ক্রমেই জাতির জন্য একটি দায় হয়ে উঠছে। ২০১০-১১ সালের বাজেটের আর্থিক বিবরণীতে আমরা এ সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাই। এতে সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করা হয়েছে : দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকার মানুষ এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশি দারিদ্র্যপীড়িত। হঠাৎ করে আসা বন্যা প্রায়ই হাওর এলাকার ফসল ধ্বংস করে দেয়। হাওর ও জলাভূমির অতীত ও বর্তমান গুরুত্বের মূল্যায়ন করে একটি টেকসই ও যথাযথ সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন। আর হাওর এলাকার ব্যাপকভিত্তিক উন্নয়নের জন্য এর ব্যবস্থাপনা সূত্রায়ন করতে হবে অতি দ্রুত। কারণ সমস্যাটি এরই মধ্যে জটিল আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু বাস্তবে বাজেটের এই আর্থিক বিবরণীতে এ বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া সত্তেও, হাওর উন্নয়নের কাজে এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না। হাওর এলাকা এখনো অনুন্নতই রয়ে গেছে। এর জন্য সরকারের অবহেলার বাইরে এর ভৌত ও পানিনির্ভর অবস্থান অনেকাংশে দায়ী। এর পরও মনে রাখা দরকার, হাওর এলাকা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎপাদন অঞ্চল। বিচিত্র ধরনের অর্থনৈতিক উৎসের মধ্যে এ এলাকার মূল ভিত্তি হচ্ছে কৃষি ও মাছচাষ। এ এলাকায় রয়েছে সাত লাখ ১০ হাজার হেক্টর উৎপাদনযোগ্য ফসলি জমি। এ এলাকায় প্রতি বছর উৎপাদিত হয় ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন ধান। এর পরও কখনো কখনো হঠাৎ বন্যা সবকিছু তছনছ করে দেয়। বিনষ্ট হয়ে যায় জিডিপিতে হাওর এলাকার ৩ শতাংশ অবদান। তা ছাড়া, এই এলাকাটি অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এই এলাকার মানুষ এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে গরিব। হাওর জনগোষ্ঠীর ২৮ শতাংশেরও বেশি মানুষ বসবাস করে দারিদ্র্যসীমা তথা পোভার্টি লাইনের নিচে। সেখানকার কৃষকদের জীবন নির্বাহের প্রধান উপায় একমাত্র কৃষিকাজ। এই একটিমাত্র ফসলও যখন থাকে আংশিক বা পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার অব্যাহত হুমকির মুখে, তখন কৃষকের উদ্বেগের মাত্রা কোথায় গিয়ে পৌঁছে, তা সহজেই অনুমেয়।
মাছচাষ বা মাছ ধরা হচ্ছে হাওর এলাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অনুশীলন। কিন্তু নানা কারণেই হাওর এলাকার মাছচাষি ও জেলে সম্প্রদায় তাদের এই পেশা অব্যাহত রাখতে নানা ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি। হাওর এলাকার জেলে সম্প্রদায় তুলনামূলকভাবে গরিব হওয়ায় বিদ্যমান মাছচাষ ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারছেন না। তা ছাড়া জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় অধিক হারে মাছ ধরার কারণে হাওর, বিল, খাল, বিলে আগের মতো মাছ নেই। হাওরগুলোতে মাছের আবাস সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা এর পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। হাওরে ভাসা পানিতে সরকারি মাছ ছাড়ার কথা শোনা গেলও এই উদ্যোগ খুবই নগণ্য। আসলে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে বড় আকারের মাছচাষ ও সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাত করা হলে এ এলাকায় মাছচাষ হয়ে উঠতে পারে একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক খাত। এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা যেতে পারে বিপুল কর্মসংস্থান।
এসব হাওরের মানুষের জীবন ও জীবিকাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজন একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নের কাজে মাঠে নামতে হবে। এখানে হাওরের কৃষক ও ফসল রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। তা না হলে কয়েক বছরের মধ্যে হাওরের মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হবে। তাই হাওরের মানুষের দারিদ্র্য নিরসনে ভাবতে হবে এলাকাটির পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুযায়ী শিল্পকারখানা গড়ে তুলে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে, যখন হাওরের মানুষ বছরের অর্ধেক সময় প্রায় কর্মহীন অলস দিন কাটায়, তখন তাদের কর্মসংস্থান কী করে সৃষ্টি করা যায়, সে বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে। ফসল রক্ষার জন্য মওসুমি বাঁধ নির্মাণের বাইরে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কোথাও কোথাও বছরের অর্ধেক সময় পানিতে ডুবে থাকা বাঁধ নির্মাণের কথা ভাবা যেতে পারে। এ ধরনের বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের কাজ সমন্বয় করে ফসলের বাঁধকে হেমন্তের সময়ে যাতায়াতের সড়ক হিসেবে কাজে লাগানো যেত পারে। নদীতে পলি পড়াও বন্যার কারণ হতে পারে। তাই ভাবতে হবে নদীপথের পলি অপসারণের বাস্তব উপায় উদ্ভাবন নিয়ে। বাঁধ সংস্কার বা নির্মাণ যাই হোক না কেন, তা যথাসময়ে শেষ করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ খাতে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কারণ, এসব বাঁধের ওপর হাওরের মানুষের বাঁচা-মরা নির্ভর করে। সবশেষে আবারো বলছি, গোটা হাওর নিয়ে এক ব্যাপক সমন্বিত মহা কর্মপরিকল্পনা দরকার। কারণ, হাওরের অর্থনীতি আর বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি অভিন্ন।


আরো সংবাদ



premium cement
জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে

সকল