২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান

-

জীবন কী তা বর্ণনা করা কঠিন এবং সংজ্ঞায়িত করা আরো কঠিন। আমরা জীবনকে উপলব্ধি করে থাকি কিছু বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে। সেগুলো হচ্ছেÑ ১. অনুভূতি, ২. খাদ্য গ্রহণ, ৩. দৈহিক বৃদ্ধি, ৪. বংশ বিস্তার ইত্যাদি। যাদের এসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাদের মধ্যে প্রাণ বা জীবন আছে বলেই আমরা জানি। বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের রয়েছে; তাই প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন আছে। কিন্তু জীবন কী, তা এখনো আমরা সহজে বর্ণনা করতে পারিনি।
১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে টি এইচ হাক্সলি বলেছিলেন, ÔProtoplasm is the physical basis of life অর্থাৎ প্রোটোপ্লাজম হচ্ছে জীবনের ভৌত ভিত্তি। প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহ প্রোটোপ্লাজম দিয়ে তৈরি। জীবজগতের বাইরে প্রোটোপ্লাজম অনুপস্থিত। বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে তা গঠিত। জৈব পদার্থের মধ্যে রয়েছেÑ প্রোটিন, লিপিড, শ্বেতসার ইত্যাদি এবং অজৈব পদার্থের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতির ক্লোরাইড, সালফেট, কার্বোনেট ইত্যাদি। প্রোটোপ্লাজমে বিপুল পরিমাণ পানি রয়েছে। পানি জীবনের অন্যতম প্রধান উপাদান। এ জন্য বলা হয় ‘পানির অপর নাম জীবন’। এ প্রসঙ্গে সর্বশেষ ঐশী প্রত্যাদেশের বাণীÑ * ‘এবং (আমি/আল্লাহ) প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে।’ Ñ পবিত্র কুরআন ২১ : ৩০ ও ২৪ : ৪৫।
বিজ্ঞানীরা প্রোটোপ্লাজমের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পেরেছেন। তারা প্রোটোপ্লাজমের সব উপাদান প্রোটিন, লিপিড, শ্বেতসার ইত্যাদির নির্ভুল রাসায়নিক ফর্মুলা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু জীবন কী? কোথা থেকে প্রোটোপ্লাজমে আসে? মৃত্যুর সাথে সাথে জীবন কোথায় যায় ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব তারা পাননি।
নির্দিষ্ট জীবনকাল শেষে প্রত্যেক জীব মারা যায়। মৃতদেহ পচনক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামোনিয়া, ফসফেট, নাইট্রেট ইত্যাদি দ্রব্যে পরিণত হয়; যা মাটির সাথে মিশে গিয়ে উর্বরতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদ মাটি থেকে এগুলোকে মূলের সাহায্যে শোষণ করে এবং হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে। তৃণভোজী প্রাণী ঘাস ও লতাপাতা ভক্ষণ করে এগুলো লাভ করে এবং তাদের দেহের বৃদ্ধি ঘটে। মাংসাশী প্রাণী অন্যান্য প্রাণীদেহ ভক্ষণ করে এসব প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরোক্ষভাবে লাভ করে থাকে। দেখা যাচ্ছে, কিছু মৌলিক পদার্থ (কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস প্রভৃতি) পর্যায়ক্রমে জড় ও জীবজগৎ পরিক্রমণ করে চলেছে। এসব মৌলিক পদার্থ বিভিন্ন যৌগ পদার্থ গঠন করে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে অবস্থানকালে জীবন প্রদর্শন করে থাকে। দেখা যাচ্ছে, সব মৃতদেহ মৃত্তিকায় বিলীন হয়ে যায় এবং জীবদেহের উপাদানগুলো মৃত্তিকা থেকেই আসে।
এ প্রসঙ্গে সর্বশেষ ঐশী প্রত্যাদেশে রয়েছেÑ * ‘আমি (আল্লাহ) কি ভূমিকে জীবিত ও মৃতের ধারণকারী রূপে সৃষ্টি করিনি?’ Ñ পবিত্র কুরআন ৭৭ : ২৫, ২৬। * ‘তিনিই (আল্লাহ) মৃত থেকে জীবিতের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবিত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটান এবং ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন এর মৃত্যুর পর।’Ñ পবিত্র কুরআন ৩০ : ১৯ এবং ৩ : ২৭, ৬ : ৯৫।
এখানে দেখা যাচ্ছে, সব জীবের দেহ গঠনের উপাদান উদ্ভিদের মাধ্যমে মৃত্তিকা থেকে আসে। তাই ধর্মগ্রন্থগুলোর বর্ণিত মৃত্তিকা থেকে মানুষ সৃষ্টির বিষয়টি ভুল নয়।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে ডি বার্নাল ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তার গ্রন্থ ÔThe Physical Basis of LifeÕ -এ জীবনের সংজ্ঞা দিয়েছেন, ÔLife is a complex physico-chemical system within a definite space or volume which with the help of integrated chemical. and physical reactions can utilise the matter and the energy present in its environment for its own growth and reproduction.Õ অর্থাৎ জীবন হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পরিসর বা আয়তনের মধ্যে ঘটিত জটিল ভৌত রাসায়নিক তন্ত্র, যা অখণ্ডিত রাসায়নিক ও ভৌত বিক্রিয়ার সাহায্যে তার পরিবেশে অবস্থিত বস্তু ও শক্তি নিজের বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তারে ব্যবহার করতে পারে, এ যাবৎ উপস্থাপিত জীবনের সংজ্ঞাগুলোর মধ্যে বার্নালের সংজ্ঞাটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। তারপরও প্রশ্ন থাকেÑ ১. নির্দিষ্ট পরিসর বা আয়তনে জটিল ভৌত রাসায়নিক তন্ত্রটির উৎপত্তি কিভাবে ঘটে? ২. তন্ত্রটিতে কিভাবে স্বপরিচালিত ভৌত ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তা পরিচালিত হয়? ৩. তন্ত্রটি কিভাবে তার পরিবেশে বিদ্যমান আবশ্যকীয় বস্তু ও শক্তিকে দক্ষতার সাথে শনাক্ত করে? ৪. পরিবেশে বিদ্যমান আবশ্যকীয় বস্তু ও শক্তি নিজ বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তারের কাজে ব্যবহারের অভিপ্রায় তন্ত্রটিতে কিভাবে জাগ্রত হয়? ৫. তন্ত্রটি কিভাবে পরম বুদ্ধিমত্তার সাথে আবশ্যকীয় বস্তু ও শক্তি নিজ বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তারে ব্যবহার করে থাকে?
প্রশ্নগুলোর জবাব বস্তুবাদী বিজ্ঞান দিতে অক্ষম। এখানেই বস্তুবাদী বিজ্ঞানের অসম্পূর্ণতা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের জন্য এ প্রশ্নগুলোর উত্তর লাভ অত্যাবশ্যক। অন্যথায়, আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সর্বশক্তিমান মহান স্রষ্টার ঐশী ক্ষমতার স্বীকৃতির মধ্যে নিহিত। আসলে জীবদেহ সর্বশক্তিমান স্রষ্টা কর্তৃক ঐশী ক্ষমতা বলে সৃষ্ট এবং এর জৈবনিক কর্মতৎপরতা স্রষ্টা কর্তৃক পরিচালিত।
কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না, জীবদেহের কোন অঙ্গে প্রাণ বা জীবন অবস্থান করে। অনেকে মনে করেন, প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে জীবন অবস্থান করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হৃৎপিণ্ডে এমন কোনো বস্তু পাননি, যাকে জীবন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। জীবন যদি কোনো বস্তু হতো, তাহলে একে শনাক্ত করা যেত, জীবদেহ থেকে এটাকে পৃথক করে পরীক্ষা করা যেত এবং এর ব্যাপারে বর্ণনা করা যেত। কিন্তু জীবন পার্থিব বস্তু নয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন বলেছেÑ * ‘তোমাকে (মুহাম্মদ সা:) তারা রূহ (আত্মা/প্রাণ) সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো : রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত (বিষয়) এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে সামান্যই।’ (আল কুরআন ১৭ : ৮৫)।
অর্থাৎ জীবন হচ্ছে স্রষ্টার আদেশঘটিত ঐশী বিষয় এবং তা মানুষের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। তাই জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো গ্রন্থে জীবের বিশদ বর্ণনা থাকলেও জীবন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা নেই। অতএব, জীব ও জীবন সম্পর্কে সন্তোষজনক জ্ঞান লাভের জন্য সর্বশক্তিমান ও সকল জ্ঞানের আধার স্রষ্টার ঐশী ক্ষমতার স্বীকৃতি দান একান্ত আবশ্যক। বিজ্ঞানের সংশ্লিষ্ট পুস্তকে তা লিপিবদ্ধ করা অপরিহার্য।
রিসাইক্লিং পদ্ধতি (Recycling System) : মৃত্যুর পর জীবদেহে পচন ঘটে এবং অবশেষে তা মৃত্তিকায় পরিণত হয়। মৃতদেহে যদি পচন না ঘটত, অক্ষত থাকত, তাহলে আমরা আমাদের মৃত পূর্বপুরুষদের কবরে সাদা কাফনে জড়ানো অবস্থায় অক্ষত দেখতে পেতাম, যেন ঘুমিয়ে আছেন। এভাবে আমাদের মৃত দাদা-নানাসহ পূর্বপুরুষদের দেখতে পেলে কতই না আনন্দের ব্যাপার। এটা খুবই কৌতূহলপ্রদ হলেও বাস্তবে অনেক কঠিন সমস্যা দেখা দিত। প্রথমত, আমরা চারপাশে দেখতে পেতাম, শত-সহস্র বছর পড়ে থাকা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর অপরিবর্তিত মৃতদেহ। তখন আমরা চলাফেরার জায়গা পেতাম না, কৃষিকাজের জন্য উন্মুক্ত স্থান পেতাম না, বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ভূমি পেতাম না। চতুর্দিকে দেখতে পেতাম কেবল প্রাণীর মৃতদেহ নয়, তাদের অপরিবর্তিত বর্জ্য। তখন জীবিতদের জন্য এ ভূপৃষ্ঠ কি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠত না?
অতএব, জীবিতদের স্বাভাবিক বসবাসের জন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ ও মলমূত্র অপসারণ একান্ত আবশ্যক। জীবের মৃতদেহ ও বর্জ্য অপসারণের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা প্রকৃতিতে রেখেছেন। কিছু বিশ্লিষ্টকারী অণুজীব, প্রধানত ব্যাকটেরিয়া ও কিছু ছত্রাক, মৃতদেহ ও মলমূত্রের ওপর কাজ করে। এদের তৎপরতায় মৃতদেহের জৈব যৌগ ভেঙে যায়, যাকে আমরা সাধারণভাবে বলি ‘পচন’। এই পচন ও বিশ্লেষণের ফলে জীবদেহের অন্যতম উপাদান নাইট্রোজেন মুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। কিছু নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়া গ্যাস গঠন করে। অ্যামোনিয়া নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। ফসফরাস ফসফেট (চঙ৪) হিসেবে ভূমিতে অবস্থান এবং উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সালফার সালফেট (ঝঙ৪) রূপে মৃত্তিকায় জমা হয়। উদ্ভিদ মাটি থেকে এসব পুষ্টিকর উপাদান শোষণ করে দৈহিক বিকাশ লাভ করে থাকে। ফলে মৃত মৃত্তিকা সবুজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ হয়ে জীবন্ত রূপে দেখা দেয়। সর্বশেষ ঐশী প্রত্যাদেশে রয়েছেÑ * ‘জেনে রাখো, আল্লাহ ধরিত্রীকে এর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন।’ Ñ পবিত্র কুরআন ৫৭ : ১৭। জীবদেহ গঠনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর জড় ও জীবজগতে চক্রাকারে ঘূর্ণনের মতো চমৎকার ব্যবস্থা প্রকৃতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠেনি। তা বিবেকবান ব্যক্তিমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন।
অতএব, প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত, উপরি উক্ত চমৎকার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিগুলোর স্রষ্টা মহান আল্লাহর স্বীকৃতি দেয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য। আমাদের প্রাকৃতিক জ্ঞানের পরিপূর্ণতার জন্যও তা অত্যাবশ্যক। বিজ্ঞানবিষয়ক সংশ্লিষ্ট গ্রন্থে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ঐশী অবদানের স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ করা অপরিহার্য।
সৌরশক্তি, ফটোসিনথেসিস ও জীব জগৎ : পৃথিবীতে বসবাসরত জীবকুলের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হচ্ছে সূর্য। সালোকসংশ্লেষণ (চযড়ঃড়ংুহঃযবংরং) নামক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ গ্লুকোজ (ঈ৬ঐ১২ঙ৬) নামক খাদ্য উৎপাদন করে থাকে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড (ঈঙ২) গ্রহণ করা হয় এবং অক্সিজেন (ঙ২) গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বিমুক্ত হয়। ফলে বায়ু বিশুদ্ধ হয়। সালোকসংশ্লেষণ অতি দীর্ঘ জটিল প্রক্রিয়া।
গ্লুকোজ হচ্ছে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্রথম খাদ্যবস্তু। শর্করা ও অন্যান্য শ্বেতসার বস্তু পরে গ্লুকোজ থেকে উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীরা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এবং গ্লুকোজ অণুতে বিদ্যমান কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণুর বিন্যাস নির্ভুলভাবে জানতে পেরেছেন। তথাপি বিজ্ঞানীরা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে গবেষণাগারে এক অণু গ্লুকোজ উৎপাদন করতে সক্ষম হননি। এতে প্রমাণিত হয়, সবুজ উদ্ভিদ কর্তৃক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ উৎপাদন অলৌকিক ও ঐশী ব্যাপার।
ক্ষুদ্র পোকামাকড় থেকে শুরু করে তৃণভোজী প্রাণী ছাগল, গরু, হরিণ, হাতি, ঘোড়া ইত্যাদি খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। মাংসাশী প্রাণী শিয়াল, বাঘ, ভালুক, সিংহ প্রভৃতি খাদ্যের জন্য হরিণ, বানর, খরগোশ ইত্যাদি তৃণভোজী প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। তাই মাংসাশী প্রাণীও পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে। জলাশয়ে অসংখ্য শৈবাল সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করে এবং মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। প্রকাণ্ড তিমি, হাঙ্গর ইত্যাদি জলজ মাংসাশী প্রাণী খাদ্যের জন্য জলজ তৃণভোজী প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ, তারাও পরোক্ষভাবে জলজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।
আমরা অনুধাবন করতে পারলাম, কেবল সবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তি বন্ধন করে খাদ্য উৎপাদন করে থাকে এবং উদ্ভিদ কর্তৃক উৎপাদিত খাদ্যের ওপর মানুষসহ পৃথিবীর সব প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ কর্তৃক খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা না থাকলে এ গ্রহে কোনো জীবের অস্তিত্ব থাকত না। আসলে সৌরশক্তি নিয়ে সূর্যের উপস্থিতি, ক্লোরোফিল নিয়ে সবুজ উদ্ভিদ, পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া ও খাদ্য উৎপাদন এসবই সর্বশক্তিমান স্রষ্টার চূড়ান্ত বিজ্ঞানময় ব্যবস্থা।
এ চমৎকার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্ষমতার স্বীকৃতি প্রদান আমাদের অবশ্যকর্তব্য এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রসঙ্গে আমাদের পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের জন্য তা আবশ্যক। বিজ্ঞানবিষয়ক সংশ্লিষ্ট পুস্তকে সালোকসংশ্লেষণ প্রসঙ্গে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ঐশী অবদানের কথা লিপিবদ্ধ করা উচিত।
গ্লুকোজের মতো প্রোটিন, চর্বি, লিপিড, অ্যালকালয়েড, সুগন্ধযুক্ত উদ্বায়ী তেল ও অন্যান্য দ্রব্য সংশ্লেষণে অসীম শক্তিধর স্রষ্টার ঐশী ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করা অবশ্যকর্তব্য। তা আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পূর্ণতার জন্যও আবশ্যক এবং সংশ্লিষ্ট গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ করা উচিত। হ

লেখক : প্রাক্তন চেয়ারম্যান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, এমসি কলেজ, সিলেট

 


আরো সংবাদ



premium cement