২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : নওয়াব খাজা আহসানুল্লাহ

-

ঢাকার নওয়াব খাজা আহসানুল্লাহ ১৮৪৬ সালে ২২ আগস্ট ঢাকার বিখ্যাত নওয়াব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নওয়াব খাজা আবদুল গণির পুত্র। বাল্যকালে তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে উর্দু-আরবি শেখেন এবং পরবর্তী জীবনে ফারসি ও ইংরেজিতেও ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। আহসানুল্লাহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ৫০ লক্ষাধিক টাকা দান করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য দানের মধ্যে ছিল ঢাকার হোসেনী দালান পুনর্নির্মাণে (১৮৯৭) এক লাখ টাকা, ঢাকার প্লেগ মহামারী নিবারণে (১৮৯৮) এক লাখ টাকা, কুমিল্লা শহর উন্নয়নে (১৮৯৮) ৮০ হাজার টাকা, বড়লাটের দুর্ভিক্ষ তহবিলে ৫০ হাজার টাকা, মক্কায় নহরে জুবায়দা নামের খাল সংস্কারে ৬০ হাজার টাকা, মিটফোর্ড হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে দান প্রায় এক লাখ টাকা, ঢাকায় লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতাল নির্মাণে (১৮৮৮) ৫০ হাজার টাকা ইত্যাদি। ঢাকার সার্ভে স্কুলটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) উন্নীত করার জন্য তিনি এক লাখ ১২ হাজার টাকা দানের যে ওয়াদা করেন, তার পুত্র নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০২ সালে তা পূরণ করেছিলেন। প্রতি বছর ৩০-৪০ জন আহসানুল্লাহর অর্থে হজে যেতেন। সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা শহরে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করা হয়। তিনি ১৮৯৯ সালে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। কলকাতার সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন। ঢাকায় তিনি মোহামেডান লিটারারি সোসাইটির শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উর্দু ও ফারসি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। কাব্যনাম শাহীন (রাজপাখী)। কুল্লিয়াতে শাহীন নামে তার উর্দু-ফারসি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তার নির্দেশনায় ঢাকা থেকে ১৮৮৪ সালের আহসানুল কাসাস নামে উর্দু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। তার লেখাতারিখে খান্দানে কাশ্মীরিয়াহ (কাশ্মীরি বংশের ইতিহাস) নামে গ্রন্থটির (অপ্রকাশিত) পাণ্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে। তিনি গীতিকার, নাট্যকার ও কণ্ঠশিল্পী ছিলেন এবং প্রচুর ঠুমরি গান রচনা করেন। তার রচিত উর্দু নাটকগুলো নওয়াববাড়িতে মঞ্চস্থ হতো। শৌখিন ফটোগ্রাফার হিসেবে কলকাতার ফটোগ্রাফি সোসাইটির সদস্য হয়েছিলেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে মুসলিম স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী। ১৮৭১ সালে খান বাহাদুর, ১৮৭৫ সালে নওয়াব, ১৮৯১ সালে সিআইই, ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর এবং ১৮৯৭ সালে কেসিআইই উপাধি লাভ। তিনি দু’বার (১৮৯০ ও ১৮৯৯) বড়লাটের আইনসভার সদস্য মনোনীত হন। তার নামে পুরান ঢাকার একটি রাস্তা এবং বুয়েটে একটি হল রয়েছে। তিনি ১৯০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। বেগম বাজারে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement