২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের সন্ত্রাসী হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে পারে বড় যুদ্ধে

-

আবারো সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলো ইরান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজের এ হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধের কথা স্মরণ করে আয়োজিত প্যারেড দেখার সময় পেছন থেকে গুলি চালানো হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। অন্য হামলার চেয়ে এবারের হামলা ছিল ব্যাপক ও বিধ্বংসী। এ হামলায় শুধু আঞ্চলিক শত্রু সৌদি আরব ও ইরানই যুক্ত নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত। বাস্তবতা হলো, এ হামলা সম্ভবত ছক অনুযায়ীই চালানো হয়েছে।
এ সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রথম দায়ী করা হয় সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কিত আরব বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আহভাজ ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স’কে। তারা কারো প্ররোচনা ছাড়া শূন্য থেকে এ হামলা চালায়নি। ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও আরব আমিরাত দশকের পর দশক ধরে পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে এবং ইরানে বোমা হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছেÑ তা এখন স্পষ্ট।
এর আগে একান্তে যেসব কথা বলা হতো, এখন সেসব প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়ার মাত্রা বাড়ছে। তার ওপর এসব রাজতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করা থেকেও বিরত থাকছে না। বরং তারা নিজেরাও ইরানে আক্রমণ চালানোর ব্যাপারে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
ইরানের জন্য হুমকি সৌদি ও আমিরাত
মাত্র এক বছর আগে সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সৌদি আরব ইরানের ভেতরে যুদ্ধ করতে পারে। ‘আমরা যুদ্ধের জন্য সৌদি আরবে বসে অপেক্ষা করব না’। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘বরং আমরা এ জন্য কাজ করব, যেন তাদের জন্য যুদ্ধ ইরানের ভেতরেই যায়’। তার এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রিয়াদ নাটকীয়ভাবে ইরানের সাথে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে চলেছে এবং ইরান সরকারের বিরোধী সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।
আবুধাবি সরকারের একজন উপদেষ্টা আবদুল খালেক আবদুুল্লাহ টুইটারে ইরান হামলার ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘এটা কোনো সন্ত্রাসী হামলা নয়, বরং পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ীÑ ইরানে সেনা প্রতিস্থাপন’। এ ধরনের হামলা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আহভাজের এ হামলা যদি সত্যিই ইরানে সহিংসতা সৃষ্টির ব্যাপারে সৌদি আরব ও আমিরাতের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকে, তবে তা হবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা ছড়ানোর উন্মাদনা। আর এতে ইরানের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে, তাকে পুঁজি করে বড় ধরনের যুদ্ধ বাধানো যাবে। যেহেতু রিয়াদ ও আবুধাবি একা ইরানের সামরিক বাহিনীর সাথে পেরে উঠবে না, তাই তারা তখন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ প্রয়োগ করবে এ যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। (এটাও সত্য, তারা প্রতিমাসে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করার পরও ইয়েমেনে হাউথি গেরিলাদের পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।)
যদি এ পরিকল্পনা সত্য হয়, তবে এ সন্ত্রাসী হামলা ইরানকে যুদ্ধে জড়ানোর কৌশল, যেমনটি তারা চায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বব গেটস বলেছিলেন, ‘সর্বশেষ মার্কিনি থাকা পর্যন্ত ইরানের সাথে যুদ্ধ করবে সৌদি আরব’।
ট্রাম্প প্রশাসনের দিকে তীক্ষè নজর
ট্রাম্প প্রশাসন এসব ব্যাপারে নীরব, থাকবে তা মনে করা কঠিন। ট্রাম্পের নিজের কর্মকাণ্ড এবং তার প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের প্রতি নজর দিলে দেখা যায়, ইরান ইস্যুতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইল নানা বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সামনে আনার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধাতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই মিত্রদের চাপ দিচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানকে কড়া হুমকি দেয়ার এক দিন পরই আহভাজ হামলা হলো। পম্পেও বলেছিলেন, ‘ইরাকের মার্কিন কন্স্যুলেটে আর কোনো হামলা হলে এর কড়া জবাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র’।
বিগত সপ্তাহে ইরাকের বসরায় মার্কিন কন্স্যুলেটে হামলা চালায় ইরানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, শিয়া বিদ্রোহীরা। তবে এ হামলায় ইরানের হাত থাকার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। বরং উল্টো হুমকি দেয়, আর কোনো হামলা হলে তার জবাব দেয়া হবে। এর আগেও বসরার মার্কিন কন্স্যুলেটে বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে, আর প্রতিবারই কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র।
এবারের হুমকি ও হামলার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য আছে। আর তা হলো, ইরানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য ওয়াশিংটন ও তেহরান কেউই এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের ট্রাম্পের দলে যোগ দেয়ার আগেই লেখা একটি মেমোর মিল পাওয়া যায় এমন হুমকি-ধমকি ও আগ্রাসী তৎপরতার সাথে। ওই মেমোতে তিনি বিস্তারিত লিখেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে বিশেষ করে ইরানের সাথে করা চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা দরকার এবং ইরানের বিরুদ্ধে নানা আগ্রাসী নীতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরাইল ও সৌদি আরবের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করা।
সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়, ইরানের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, খুজেস্তানের আরবদের সহযোগিতা করার কথা, যারা এবার আহভাজে হামলা চালিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। বোল্টন আরো বলেছেন, ‘যুদ্ধনীতি থাকার পরও আলোচনার আহ্বান না জানিয়ে বরং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় তাদের পরোক্ষ ভূমিকার দায়ে ইরানের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা।’
ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী খুজেস্তানিদের সহযোগিতা করা তাদেরকে উসকে দেয়ারই অপর নাম। এসব তৎপরতা এ সন্দেহই গাঢ় করে যে, সত্যিই যদি এ হামলার পেছনে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত থেকেই থাকে তবে এটাও ঠিক, তারা এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকেও টেনে আনবে আর এর নেতৃত্ব দেবেন ট্রাম্প।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য এটি একটি কৌশলগত পথও বাতলে দিয়েছে। তাদের তুলনায় বিশাল আকারের ও অধিক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ করার সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই যদি তারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে, তবেই ইরানের সাথে শক্তির সমতায় মার্কিন শক্তিকে জুতসইভাবে ব্যবহার করতে পারবে। মধ্যপ্রাচ্যে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণেই এশিয়াসহ এ অঞ্চলে যে লক্ষ্য পূরণ করতে চায়, এ উদ্যোগের ফলে তা যে আরো সহজ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।হ
লেখক : ইমেরিটাস প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল ইরানিয়ান অ্যামেরিকান কাউন্সিল। ‘লুজিং অ্যান এনিমি ওবামা, ইরান অ্যান্ড দ্য ট্রাম্প অব ডিপ্লোমেসি’ বইয়ের লেখক।
‘মিডল ইস্ট আই’ থেকে ভাষান্তর করেছেন মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম


আরো সংবাদ



premium cement
বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের

সকল